যৌথ ঘোষণার বাস্তবায়ন দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে

বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার রজত মিত্তার বলেছেন, ‘দিল্লিতে শীর্ষ বৈঠকের পর ভারত-বাংলাদেশ যে যৌথ ঘোষণা হয়েছিল, তা বাস্তবায়নের পথে আছে।’
রজত মিত্তার উদাহরণ দিয়ে বলেন, ভারত থেকে বিদ্যুৎ নেওয়ার জন্য লাইন স্থাপনের কাজ দুই দেশেই শুরু হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আখাউড়া ও আগরতলার মধ্যে রেললাইন স্থাপনের জন্য স্যাটেলাইট জরিপকাজ সম্পন্ন হয়েছে। অচিরেই বিস্তারিত নকশার কাজ শুরু হবে।
গতকাল রোববার রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফআইসিসিআই বা ফিকি) আয়োজিত মধ্যাহ্ন ভোজসভায় অতিথি হিসেবে রজত মিত্তার এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য দেন সংগঠনের সভাপতি এ এম হামীম রহমতউল্লাহ।
ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, আশুগঞ্জ নৌবন্দরকে ভারতীয় পণ্য পরিবহনের জন্য ‘পোর্ট অব কল’ ঘোষণা করা হয়েছে। একইভাবে আসামের শিলাঘাটকে পোর্ট অব কল ঘোষণা করেছে ভারত। আর বাংলাদেশের যোগাযোগব্যবস্থা ও রেল উন্নয়নের জন্য ১০০ কোটি ডলার ঋণের খসড়া দলিল তৈরি হয়ে গেছে। এখন চূড়ান্ত চুক্তির আগে উভয়পক্ষ কাজ করছে।
রজত মিত্তার দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, ‘ভারত চায় বাংলাদেশও ভারতের মতো উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা অর্জন করুক। দুই দেশের মধ্যে বর্তমানে ৩০০ কোটি ডলারের বাণিজ্যিক আদান-প্রদান আছে।’
মিত্তার বলেন, ‘বাংলাদেশ বিগত কয়েক বছরে ক্রমেই ভারতের বাজারে রপ্তানি বাড়িয়ে চলেছে। ২০০১-০২ সালে ভারতে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি হয়েছিল ছয় কোটি ২০ লাখ ডলার। আর ২০০৮-০৯ অর্থবছরে এর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ কোটি ডলার। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা যাতে ভারতের বাজারে আরও রপ্তানি বাড়াতে পারেন, সে জন্য সাফটার অধীনে অনেকগুলো পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়েছে।’
দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, ‘বাংলাদেশ যেসব ভারতীয় পণ্য আমদানি করে তার বেশির ভাগই উৎপাদনের কাঁচামাল যেমন তুলা, সুতা, কয়লা, চুনাপাথর, রাসায়নিক দ্রব্য ও ইস্পাত। এ ছাড়া বাংলাদেশ ভারত থেকে খাদ্য ও যন্ত্রপাতি আমদানি করে থাকে। বাংলাদেশের অর্থনীতিই এর দ্বারা উপকৃত হচ্ছে।’
ভারতীয় হাইকমিশনার চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘এ দুটি বন্দর এশিয়ার বড় আঞ্চলিক হাব হতে পারে। তবে এর উপযোগী কাঠামো গড়ে তুলতে হবে।’ ভারতের ব্যবসায়ীরা এ দুটি বন্দর ব্যবহারের জন্য খুবই আগ্রহী বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ফিকির সভাপতি হামীম রহমতউল্লাহ বলেন, ভারতে বাংলাদেশি পণ্যের বিপুল সম্ভাবনা থাকার পরও শুল্ক ও অশুল্ক বাধার কারণে বাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে না।
ফিকির সভাপতি বলেন, দুই দেশের বড় রকমের বাণিজ্য ঘাটতি আছে। ভারতীয় উদ্যোক্তারা যদি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে রপ্তানি করে, তাহলে এই ভারসাম্য কমতে পারে। এ ক্ষেত্রে যৌথ বিনিয়োগে বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের আগ্রহ রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ব্যবসায়ীদের ভারতীয় ভিসা দেওয়ার বিষয়টি সহজতর ও দীর্ঘমেয়াদি হওয়া উচিত।
পরে এফআইসিসিআইয়ের বেশ কিছু সদস্য নানা বিষয়ে হাইকমিশনারকে প্রশ্ন করেন। হাইকমিশনার এসব প্রশ্নের জবাব দিতে যেয়ে বলেন, বর্তমানে ভারতীয় ভিসার জন্য ই-টোকেন ব্যবস্থা চালু রয়েছে এবং অনলাইন পদ্ধতিও চালু হয়েছে। ফলে কাউকে লাইনে দাঁড়িয়ে আর হয়রানি হতে হয় না।
সীমান্তে দুই দেশের মধ্যে প্রতিনিয়ত সংঘর্ষ প্রসঙ্গে রজত মিত্তার বলেন, ‘বর্তমানে তা কমে এসেছে এবং দুই দেশের সরকারই এ ঘটনা আরও এড়ানোর জন্য কাজ করছে।’
প্রসঙ্গত, ১১ জানুয়ারি দিল্লিতে শীর্ষ বৈঠকে সন্ত্রাসবাদ দমন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক সম্প্রসারণ, বাণিজ্য বৈষম্য বিলোপ, ট্রানজিট, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনসহ বিভিন্ন বিষয়ে দুই দেশের নেতারা বিস্তারিত আলোচনা করেন। আলোচনা শেষে দুই দেশ সন্ত্রাসবাদ দমনে তিনটি চুক্তি এবং বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের লক্ষ্যে দুটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। বাংলাদেশের রেলব্যবস্থার সংস্কার, যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন ও নদী পুনর্খননের জন্য ১০০ কোটি ডলারের ঋণ-সহায়তারও ঘোষণা দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।

No comments

Powered by Blogger.