চারদিন পরই ছিল দু’জনের চূড়ান্ত পরীক্ষা
আগুন
শুধু জ্বলে না, মাঝে মাঝে নিভিয়েও দেয়। এই যেমন, চকবাজারের চুড়িহাট্টার
আগুনে নিভে গেছে মানবসেবার ব্রত নিয়ে বেড়ে ওঠা দুই হবু চিকিৎসকের প্রাণ। গত
বুধবার রাতে ভয়াবহ আগুনে পুড়ে গেছে দুই ডেন্টাল সার্জনের পরিবারের আশাও।
বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেন্টাল ইউনিটের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী
ছিলেন দুই বন্ধু ইমতিয়াজ ইমরোজ রাশু ও আশরাফুল হক। চার দিন পরই বসতেন
বিডিএস কোর্সের চূড়ান্ত প্রফেশনাল পরীক্ষায়। বেঁচে থাকতে যেমন ছিলেন
অন্তঃপ্রাণ বন্ধু, এই পৃথিবী ছেড়ে যাবার শেষ সময়েও একে অন্যের পাশেই ছিলেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে মরদেহ শনাক্ত করার পর জেলা
প্রশাসনের নিবন্ধন খাতায় দু’জনের ক্রমিক নম্বর যথাক্রমে ১২ আর ১৩।
কেবল দু’জনের দেহে ছিল না প্রাণ।
সাদা ব্যাগে, কাঠের কফিনে বন্দি দু’জনের যেন এক নীরব সহাবস্থান। বাংলাদেশ ডেন্টাল কলেজের ১৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ ইমরোজ রাশু ও আশরাফুল হকের পড়াশোনা-ঘোরাফেরা বলতে গেলে সবই একসঙ্গে। রাশু আর আশরাফ দু’জনকে এক নামে চিনতো ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা। পাবনার বেড়া উপজেলার সোনাপুর গ্রামের রাশু থাকতো মেডিকেল কলেজের রায়েরবাজার হোস্টেলে। মাত্র দু’মাস হলো চকবাজারের ক্লিনিকে যাওয়া-আসা। মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে রাশু বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে চুড়িহাট্টা রোডের ক্লিনিকে আরেকজন ডেন্টাল সার্জনের সঙ্গে হাতে-কলমে শিখতেন খুঁটিনাটি।
বুধবার সন্ধ্যার দিকেই চলে যান সেখানে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ফরদাবাদের ছেলে আশরাফ অবশ্য পরিবারের সঙ্গে থাকতেন মালিবাগে। বুধবার রাতে হঠাৎ দাঁতে রক্তক্ষরণ হওয়ায় বন্ধু রাশুকে ফোন করেন তিনি। দ্রুত চকবাজারের ক্লিনিকে যাবার জন্য মুঠোফোনের অন্য প্রান্তে তাগাদা দেন রাশু। রাত আনুমানিক সাড়ে নয়টার দিকে ক্লিনিকে পৌঁছান আশরাফ। সেখানে বন্ধুর কাছেই দাঁতের স্কেলিং চিকিৎসা করতে থাকেন। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর বৃহস্পতিবার ভোরে সেখান থেকে রাশু ও আশরাফের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তাদের এক সহপাঠী অর্ণব আবীর জানান, ক্লিনিকটির পেশেন্ট চেয়ারেই পাওয়া যায় আশরাফকে। তার মুখে পাওয়া গেছে স্কেলিং চিকিৎসার বিশেষ সাকার। আর গ্লাভস হাতে মেডিকেল টেবিলের কাছেই মিলেছে রাশুর দেহ। মূলত আগুন ছড়িয়ে পড়লে নিচতলায় থাকা মেডিকেল ও ফার্মেসির শাটার নামিয়ে ফেললে দোতলা থেকে নামতে পারেনি দুই বন্ধু। আগুনের ভয়ে শাটার নামিয়ে ফেললেও সেখানে অক্সিজেনের অভাব ও শ্বাসনালি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় মারা যান দু’জন। ইমতিয়াজ ইমরোজ রাশু ও আশরাফুল হকের আরেক সহপাঠী ঐশ্বর্য সেনগুপ্ত বলেন, ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে আমাদের ফাইনাল প্রফ. শুরু হবার কথা।
অথচ, আর চার দিন বাদেই দুই বন্ধুকে ছাড়াই আমাদের পরীক্ষার টেবিলে বসতে হবে, এ কথা চিন্তা করতেই বুকের ভেতরটা কেমন করে উঠছে। ক্যাম্পাস জীবনের স্মৃতি টেনে ঐশ্বর্য বলেন, পুরো ক্যাম্পাসে রাশু ও আশরাফ দু’জনকে এক নামে চিনতো সবাই। মেডিকেল ওয়ার্ডেও মাঝে মাঝে ওদের পড়তে দেখা যেত। দু’জনেরই মনপ্রাণ ছিল চিকিৎসাবিদ্যায়। কি করে আরো ভালো করে শেখা যায়। আশরাফরা ছয় ভাইয়ের সকলেই ছিলেন কোরানে হাফেজ। ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ডেন্টাল শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন আদায় আন্দোলনেও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আশরাফ। তার উদ্যোগেই প্রায় ৫০৭ জন শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধন ফিরে পায় বলে জানান তার সহপাঠী অর্ণব আবীর। গতকাল সন্ধ্যায় দু’জনের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় ধানমন্ডির বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গণে।
সেখানে বাদ মাগরিব জানাজায় অংশ নেন সহপাঠী, শিক্ষক ও ডেন্টাল কলেজের শিক্ষার্থী। প্রিয় দুই শিক্ষার্থীর নিথর দেহের সামনে নির্বাক যেন পুরো ক্যাম্পাস। এই দুই চিকিৎসকের সঙ্গে আল-মদিনা মেডিকেল ও ডেন্টাল ক্লিনিকে প্রাণ গেছে মোট ছয়জনের। রোগী হিসেবে ক্লিনিকে যাওয়া কাজী এনামুল হক এদের মধ্যে একজন। পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার রায়পুর গ্রামের কাজী মোতালেবের ছেলে এনামুল সিটি কলেজ থেকে বিবিএ করেছেন। প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে এমবিএ করার। তার ভাই কাজী আমির হোসেন জানান, এনামুল থাকতেন রাজধানীর মগবাজারের হাজী বালুর গেট এলাকার একটি ব্যাচেলর বাসায়। পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করতেন একটি বিমা কোম্পানিতে।
এনামুলের সঙ্গে একই বাসায় থাকতেন বন্ধু আবুজার হোসেন। তিনি মানবজমিনকে জানান, গত বুধবার সন্ধ্যায় জীবনবৃত্তান্তের খসড়া নিয়ে বাসা থেকে বের হন এনাম। বিমা কোম্পানিতে কাজ করলেও আরো ভালো চাকরির জন্য চেষ্টা করছিলেন। সিভি বানাতে নিউ মার্কেট যাবার কথা ছিল তার। সেখান থেকে পরিচিত এক দাঁতের ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথা ছিল তার। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে ছেলে এনামুলের ছবি হাতে নিথর বাবা কাজী মোতালেব শুধু এক পলকেই চেয়ে ছিলেন। তখনো তার ছেলের মরদেহের হদিস মেলেনি। মাঝে শুধু একবারই বাবা মোতালেব বলে উঠেন, আমার পোলাডা যদি বাঁইচ্যা যাইতো!।
কেবল দু’জনের দেহে ছিল না প্রাণ।
সাদা ব্যাগে, কাঠের কফিনে বন্দি দু’জনের যেন এক নীরব সহাবস্থান। বাংলাদেশ ডেন্টাল কলেজের ১৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ ইমরোজ রাশু ও আশরাফুল হকের পড়াশোনা-ঘোরাফেরা বলতে গেলে সবই একসঙ্গে। রাশু আর আশরাফ দু’জনকে এক নামে চিনতো ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা। পাবনার বেড়া উপজেলার সোনাপুর গ্রামের রাশু থাকতো মেডিকেল কলেজের রায়েরবাজার হোস্টেলে। মাত্র দু’মাস হলো চকবাজারের ক্লিনিকে যাওয়া-আসা। মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে রাশু বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে চুড়িহাট্টা রোডের ক্লিনিকে আরেকজন ডেন্টাল সার্জনের সঙ্গে হাতে-কলমে শিখতেন খুঁটিনাটি।
বুধবার সন্ধ্যার দিকেই চলে যান সেখানে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ফরদাবাদের ছেলে আশরাফ অবশ্য পরিবারের সঙ্গে থাকতেন মালিবাগে। বুধবার রাতে হঠাৎ দাঁতে রক্তক্ষরণ হওয়ায় বন্ধু রাশুকে ফোন করেন তিনি। দ্রুত চকবাজারের ক্লিনিকে যাবার জন্য মুঠোফোনের অন্য প্রান্তে তাগাদা দেন রাশু। রাত আনুমানিক সাড়ে নয়টার দিকে ক্লিনিকে পৌঁছান আশরাফ। সেখানে বন্ধুর কাছেই দাঁতের স্কেলিং চিকিৎসা করতে থাকেন। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর বৃহস্পতিবার ভোরে সেখান থেকে রাশু ও আশরাফের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তাদের এক সহপাঠী অর্ণব আবীর জানান, ক্লিনিকটির পেশেন্ট চেয়ারেই পাওয়া যায় আশরাফকে। তার মুখে পাওয়া গেছে স্কেলিং চিকিৎসার বিশেষ সাকার। আর গ্লাভস হাতে মেডিকেল টেবিলের কাছেই মিলেছে রাশুর দেহ। মূলত আগুন ছড়িয়ে পড়লে নিচতলায় থাকা মেডিকেল ও ফার্মেসির শাটার নামিয়ে ফেললে দোতলা থেকে নামতে পারেনি দুই বন্ধু। আগুনের ভয়ে শাটার নামিয়ে ফেললেও সেখানে অক্সিজেনের অভাব ও শ্বাসনালি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় মারা যান দু’জন। ইমতিয়াজ ইমরোজ রাশু ও আশরাফুল হকের আরেক সহপাঠী ঐশ্বর্য সেনগুপ্ত বলেন, ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে আমাদের ফাইনাল প্রফ. শুরু হবার কথা।
অথচ, আর চার দিন বাদেই দুই বন্ধুকে ছাড়াই আমাদের পরীক্ষার টেবিলে বসতে হবে, এ কথা চিন্তা করতেই বুকের ভেতরটা কেমন করে উঠছে। ক্যাম্পাস জীবনের স্মৃতি টেনে ঐশ্বর্য বলেন, পুরো ক্যাম্পাসে রাশু ও আশরাফ দু’জনকে এক নামে চিনতো সবাই। মেডিকেল ওয়ার্ডেও মাঝে মাঝে ওদের পড়তে দেখা যেত। দু’জনেরই মনপ্রাণ ছিল চিকিৎসাবিদ্যায়। কি করে আরো ভালো করে শেখা যায়। আশরাফরা ছয় ভাইয়ের সকলেই ছিলেন কোরানে হাফেজ। ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ডেন্টাল শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন আদায় আন্দোলনেও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আশরাফ। তার উদ্যোগেই প্রায় ৫০৭ জন শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধন ফিরে পায় বলে জানান তার সহপাঠী অর্ণব আবীর। গতকাল সন্ধ্যায় দু’জনের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় ধানমন্ডির বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গণে।
সেখানে বাদ মাগরিব জানাজায় অংশ নেন সহপাঠী, শিক্ষক ও ডেন্টাল কলেজের শিক্ষার্থী। প্রিয় দুই শিক্ষার্থীর নিথর দেহের সামনে নির্বাক যেন পুরো ক্যাম্পাস। এই দুই চিকিৎসকের সঙ্গে আল-মদিনা মেডিকেল ও ডেন্টাল ক্লিনিকে প্রাণ গেছে মোট ছয়জনের। রোগী হিসেবে ক্লিনিকে যাওয়া কাজী এনামুল হক এদের মধ্যে একজন। পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার রায়পুর গ্রামের কাজী মোতালেবের ছেলে এনামুল সিটি কলেজ থেকে বিবিএ করেছেন। প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে এমবিএ করার। তার ভাই কাজী আমির হোসেন জানান, এনামুল থাকতেন রাজধানীর মগবাজারের হাজী বালুর গেট এলাকার একটি ব্যাচেলর বাসায়। পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করতেন একটি বিমা কোম্পানিতে।
এনামুলের সঙ্গে একই বাসায় থাকতেন বন্ধু আবুজার হোসেন। তিনি মানবজমিনকে জানান, গত বুধবার সন্ধ্যায় জীবনবৃত্তান্তের খসড়া নিয়ে বাসা থেকে বের হন এনাম। বিমা কোম্পানিতে কাজ করলেও আরো ভালো চাকরির জন্য চেষ্টা করছিলেন। সিভি বানাতে নিউ মার্কেট যাবার কথা ছিল তার। সেখান থেকে পরিচিত এক দাঁতের ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথা ছিল তার। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে ছেলে এনামুলের ছবি হাতে নিথর বাবা কাজী মোতালেব শুধু এক পলকেই চেয়ে ছিলেন। তখনো তার ছেলের মরদেহের হদিস মেলেনি। মাঝে শুধু একবারই বাবা মোতালেব বলে উঠেন, আমার পোলাডা যদি বাঁইচ্যা যাইতো!।
No comments