পারমাণবিক অস্ত্র ছাড়তে প্রস্তুত কিম জং উন, তবে...

পারমাণবিক অস্ত্র পরিত্যাগের ইচ্ছার কথা ব্যক্ত করেছেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। দক্ষিণ কোরিয়া সরকার জানিয়েছে, দেশটির প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইনের সঙ্গে শুক্রবারের সাক্ষাতে এই কথা বলেছেন কিম জং উন। তবে তার শর্ত একটাই। সেটি হলো, যুক্তরাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তর কোরিয়ায় আক্রমণ না করার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। কোরিয়া যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক ইতি ঘটাতে হবে। এ খবর দিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।
খবরে বলা হয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রস্তাবিত সম্মেলনকে সামনে রেখে এই কথা বলেছেন কিম জং উন, যা কিনা কয়েক মাস আগেও অচিন্তনীয় ছিল। তিনি এমনকি আরও বলেছেন, আসছে মাসে উত্তর কোরিয়ার একমাত্র জ্ঞাত পারমাণবিক পরীক্ষাস্থল বন্ধ করার প্রক্রিয়া চাক্ষুষ করতে তিনি দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষজ্ঞ ও সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানাবেন।
এদিকে ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রশাসনের কর্মকর্তারা শান্তিচুক্তিতে উপনীত হওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক আশা ব্যক্ত করেছেন। উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক প্রকল্প ত্বরিতগতিতে বন্ধ করতে সর্বোচ্চ ২ বছর মেয়াদী একটি পরিকল্পনার ওপরও তারা কাজ করছেন।
খবরে বলা হয়, উত্তর কোরিয়ার তরুণ নেতার এই ছাড় দেওয়ার মানসিকতাকে অনেকেই স্বাগত জানিয়েছেন। তারা বলছেন, ৬৫ বছর আগে যুদ্ধ শেষের পর থেকে কোরিয়ান উপত্যকায় যে নিশ্চল অবস্থা বিরাজ করছে, তা অবসানে সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক লক্ষণ দেখা দিয়েছে। তবে সংশয়বাদীরা বলছেন, উত্তর কোরিয়া অতীতেও পারমাণবিক স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার বহু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তবে সেসব প্রতিশ্রুতি মানার কোনো ইচ্ছাই দেশটির ছিল না। কিম জং উন যে বন্ধুভাবাপন্ন অঙ্গভঙ্গি করছেন, তা শেষ অবদি ফাঁকা বুলি বলেই প্রতীয়মান হবে। তার এসব লোকদেখানো পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হলো তার দেশের ওপর আরোপিত আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করিয়ে নেওয়া।
দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারি মুখপাত্র উন ইয়ং-চ্যান দুই কোরিয়ান নেতার সাম্প্রতিক বৈঠকের বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ করেছেন। শুক্রবার কিম ও মুন জে-ইনের বৈঠক ছিল নজিরবিহীন ও ঐতিহাসিক। কারণ, প্রথম উত্তর কোরিয়ান নেতা হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রবেশ করেন তিনি।
উন ইয়ং চ্যানের দেওয়া বিবরণ অনুযায়ী, কিম জং উন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টকে বলেন, ‘আমি জানি আমেরিকানরা মজ্জাগতভাবেই আমাদের বিরোধী। তবে যখন তারা আমার সঙ্গে কথা বলবে, তখন তারা বুঝবে যে, দক্ষিণ কোরিয়া, বা প্রশান্ত মহাসাগর বা যুক্তরাষ্ট্রের দিকে পারমাণবিক বোমা ছোড়ার মতো মানুষ আমি নই।’ দৃশ্যত, কিমের এই ধরণের মন্তব্য বেশ চমকপ্রদ। কারণ, গত বছরও যখন পারমাণবিক উত্তেজনা তুঙ্গে ছিল, তখন তার দেশ থেকে ঠিক এসব করারই হুমকি দেওয়া হয়েছিল।
এদিকে কিম জং উনের সঙ্গে হওয়া বৈঠকের বিষয়ে কথা বলেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। কিছুদিন আগে তিনি গোপনে উত্তর কোরিয়া গিয়ে কিমের সঙ্গে দেখা করেন। রোববার তিনি এবিসি নিউজকে বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্দেশ্য হলো উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক স্থাপনা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অপসারণ করা। এই স্থাপনা অপসারণের প্রক্রিয়া হতে হবে যাচাইযোগ্য ও অপরবর্তনীয়। তিনি আরও বলেন, এ ব্যাপারে কিম জং উনও সম্মত হয়েছেন। পম্পেও বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে সবচেয়ে কঠোরতম ইস্যুসমূহ নিয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমার মিশন স্পষ্ট বাতিয়ে দিয়েছেন। আমি যখন উত্তর কোরিয়া ত্যাগ করেছি, কিম জং উন তা স্পষ্টতই বুঝেছেন, যেমনটা আমি এখন বর্ণনা করলাম।’
তবে ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন এ ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, নব্বইয়ের দশকেও পিয়ংইয়ং এ ধরণের অঙ্গীকার দিয়েছিল। তার ভাষ্য, ‘আমরা সত্যিকারের অঙ্গীকার দেখতে চাই। আমরা উত্তর কোরিয়ার প্রোপাগান্ডা শুনতে চাই না। আমরা অনেক কথা শুনেছি।’
ট্রাম্প নিজে অবশ্য আশাবাদী। তিনি বলেন, কিমের সঙ্গে ঐতিহাসিক চুক্তিতে উপনীত হওয়ার যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, তা কয়েক মাস আগেও কেউ ভাবেনি।
শুক্রবার দুই কোরিয়ান নেতা পারমাণবিক অস্ত্র-মুক্ত কোরিয়ান উপত্যকাকে স্বীকৃতি দিয়ে একটি যৌথ সমঝোতা স্মারকে সই করেন। তবে সারাবিশ্বে সম্প্রচারিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কিম জং উন প্রকাশ্যে পারমাণবিক অস্ত্রভা-ার পরিত্যাগের ঘোষণা একবারও দেননি।
সাক্ষাতের বিষয়ে সোমবার দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেণ্ট মুন জে-ইন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অবহিত করেন। রোববার তিনি জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গেও কিম জং উনের ইচ্ছার বিষয়টি অবহিত করেন।
মুন জে-ইনের সঙ্গে বৈঠকে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতি শান্তির বার্তার অংশ হিসেবে কিম আরও একটি প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, ‘কোরিয়ান যুদ্ধের যন্ত্রণাদায়ক ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি না করতে আমি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। একই ভূখ-ে বসবাসরত একই জাতি হিসেবে, কখনই ফের রক্ত ঝরানো উচিত হবে না আমাদের।’ কিম জং উন এমনকি দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে তার দেশের সময়ের কাঁটা এক করার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘আমি যখন বিশ্রামাগারে বসেছিলাম আমি দেওয়ালে দুইটি ঘড়ি দেখলাম। একটি হলো সিউল সময়, আরেকটি পিয়ংইয়ং-এর। আমরা আমাদের ঘড়ির কাঁটাকে এক করছি না কেন আগে?’

No comments

Powered by Blogger.