মার্কিনিদের জন্য কিমের ‘উপহার’ ক্ষেপণাস্ত্র

উত্তর কোরিয়া প্রথমবারের মতো একটি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের (আইসিবিএম) পরীক্ষা চালিয়েছে। রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি (কেসিএনএ) বুধবার দেশটির নেতা কিম জং উনের বরাত দিয়ে বলেছে, নতুন এ আইসিবিএমের পরীক্ষা মার্কিন বেজন্মাদের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে উত্তর কোরিয়ার ‘উপহার’। ক্ষেপণাস্ত্রটি বড় ধরনের পরমাণু ওয়ারহেড বহনে সক্ষম বলে দাবি করেছে সংবাদ সংস্থাটি। কিম ব্যক্তিগতভাবে উৎক্ষেপণ কর্মসূচির তদারক করেন। এরপর এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘৪ জুলাই স্বাধীনতা দিবসে পাঠানো এ উপহারে খুব একটা খুশি হবে না আমেরিকান বেজন্মারা।’ ৪ জুলাই মঙ্গলবার ছিল যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস। ২৪১তম স্বাধীনতা দিবসটি জাঁকজমকের সঙ্গে পালন করেছে মার্কিনিরা। খবর এএফপির। উত্তর কোরিয়ার এ ক্ষেপণাস্ত্রটি দীর্ঘপাল্লার বলে নিশ্চিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বিবিসি জানিয়েছে, বিশেষজ্ঞের ধারণা ক্ষেপণাস্ত্রটি যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা অঙ্গরাজ্যে আঘাত হানতে সক্ষম। তবে উত্তর কোরিয়ার পরীক্ষাটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলেও দেশটির এখনও দীর্ঘপাল্লার পারমাণু অস্ত্র সক্ষমতা নেই বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইউনিয়ন কনসার্নড সায়েন্টিস্টের ডেভিড রাইট বলেছেন, ‘প্রতিবেদনগুলো সত্য হলে স্ট্যান্ডার্ড ট্র্যাজেকটরি থেকে উৎক্ষেপণ করা ক্ষেপণাস্ত্রটির সর্বোচ্চ পাল্লা ৬ হাজার ৭০০ কিলোমিটার হতে পারে। এই পাল্লা অনুযায়ী ক্ষেপণাস্ত্রটি আলাস্কায় পৌঁছতে পারবে, কিন্তু হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ বা যুক্তরাষ্ট্রের অপর ৪৮টি রাজ্যে পৌঁছতে পারবে না।’ এ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাকে ‘বিশ্বের প্রতি নতুন হুমকি’ বলে অভিহিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন বলেছেন, উত্তর কোরিয়া তার প্রথম আইসিবিএমের পরীক্ষা চালিয়ে বিশ্বের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। নতুন এ হুমকির মোকাবেলায় বৈশ্বিক পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন ‘ওয়াশিংটন কখনোই পারমাণবিক অস্ত্রসজ্জিত উত্তর কোরিয়াকে মেনে নেবে না।’ এদিকে মঙ্গলবারের ওই সফল ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার পর এর প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়া জাপান সাগরে একটি ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সামরিক মহড়া চালিয়েছে। এ বিষয়ে এক বিবৃতিতে পেন্টাগন বলেছে, ‘সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে আঘাত হানার নির্ভুলতা প্রদর্শন করার পরিকল্পনাতেই সম্মিলিত ওই সামরিক মহড়াটির আয়োজন করা হয়।’ মঙ্গলবার দেশের পশ্চিমাঞ্চল থেকে আইসিবিএমটির পরীক্ষা চালায় উত্তর কোরিয়া। হওয়াসং-১৪ নামের ক্ষেপণাস্ত্রটি ২৮০২ কিলোমিটার উচ্চতায় উঠে মাত্র ৩৯ মিনিটের মধ্যে ৯৩৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে জাপানের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জলসীমায় গিয়ে পড়ে। এর আগে উত্তর কোরিয়ার কোনো ক্ষেপণাস্ত্র এত বেশি উচ্চতায় ওঠেনি। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এ ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষার ঘোষণা দিয়ে বলা হয়, ‘উত্তর কোরিয়া এখন পূর্ণশক্তির পরমাণু অস্ত্র সমৃদ্ধ দেশ। আমরা এখন সবচেয়ে শক্তিশালী আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে বিশ্বের যে কোনো জায়গায় আঘাত হানতে সক্ষম। এর মাধ্যমে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু যুদ্ধের হুমকি এবং ব্ল্যাকমেইল করার প্রবণতার ইতি টানতে পারব।’ এদিকে উত্তর কোরিয়াকে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা এবং পরমাণু অস্ত্র প্রকল্প বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে চীন এবং রাশিয়া। এ পরীক্ষা ‘মেনে নেয়া যায় না’ বলে মন্তব্য করেছে দেশ দুটি। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রকে থাড ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা মোতায়েন না করারও আহ্বান জানিয়েছে দেশ দুটি। ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাপান। টোকিওতে এক সংবাদ সম্মেলনে জাপানের মন্ত্রিপরিষদ সচিব ইয়াশিদা সুগা বলেন, ‘উত্তর কোরিয়া জাপানের অর্থনৈতিক অঞ্চলে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে, যা এ যাবতকালের সবচেয়ে দ্রুতগামী ছিল।’

No comments

Powered by Blogger.