সংলাপসহ সাত বিষয়ে প্রাধান্য

আ’লীগ-বিএনপিসহ ৪০ নিবন্ধিত দল শর্ত মানছে কিনা, তা দেখা হবে * নিবন্ধন বাতিল হতে পারে একাধিক দলের * নতুন দলের নিবন্ধন দেয়া হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) রোডম্যাপ বা কর্মপরিকল্পনা প্রায় চূড়ান্ত। এতে নির্বাচনী আইন ও বিধি সংশোধন, সংসদীয় এলাকার নির্বাচনী সীমানা পুনর্নির্ধারণ, সংলাপসহ সাতটি বিষয় প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। রোডম্যাপ চূড়ান্ত হওয়ার পরই শুরু হবে প্রস্তুতির মূল কর্মযজ্ঞ। রোডম্যাপে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ নিবন্ধিত ৪০ রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের শর্তাদি প্রতিপালনের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যেসব রাজনৈতিক দল নিবন্ধন শর্তাদি প্রতিপালনে ব্যর্থ হবে সেগুলো বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি নতুন দল নিবন্ধন দেয়া হবে। এ ছাড়া সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণে জনসংখ্যার পাশাপাশি ভোটার সংখ্যা এবং নির্বাচনী এলাকার আয়তনের বিষয়টি গুরুত্ব দেবে নির্বাচন কমিশন। আইন সংস্কারের ক্ষেত্রে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এ বড় ধরনের সংশোধনের পরিকল্পনা নেই কমিশনের। তবে নির্বাচনী বিধিমালাগুলোতে সংশোধন আসছে। ইসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে নির্বাচন কমিশন সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ্ যুগান্তরকে বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আগামী ১৬ জুলাই কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে। এবারের কর্মপরিকল্পনায় অনেক নতুনত্ব রাখার চেষ্টা করছি।’ তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে নতুন দল নিবন্ধনের সুযোগ দেয়া হবে। যেসব দল আইন ও বিধির শর্ত প্রতিপালন করবে সেগুলোকে নিবন্ধন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেবে ইসি। এ ছাড়া নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো শর্ত প্রতিপালন করছে কিনা, সেগুলোও দেখা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, আগামী ৯ জুলাই কমিশনের বৈঠকে রোডম্যাপ চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে। আগামী ১৬ জুলাই এটি বই আকারে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে। তারা বলেন, গত ২৪ মে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদা খসড়া রোডম্যাপ ঘোষণা করেছিলেন। ওই সময়ে যে সাতটি বিষয় সিইসি উল্লেখ করেছেন সেগুলোকে রোডম্যাপে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। বিষয়গুলো নিয়ে সিইসি ও কমিশনাররা প্রায় প্রতিদিনই অনানুষ্ঠানিকভাবে বৈঠক করছেন। ইসির কর্মপরিকল্পনায় দেখা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন দেয়া হবে। ইতিমধ্যে কিছু রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য আগ্রহ পোষণ করেছে। চলতি বছরের অক্টোবরের মধ্যে নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য আবেদন আহ্বান করা হবে। তাদের আবেদন বিবেচনা করবে কমিশন। আগামী ফেব্রুয়ারিতে নতুন রাজনৈতিক দলের আবেদন যাচাই-বাছাই করে নিবন্ধন দেয়া হবে। মার্চে নতুন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। এ ছাড়া নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দলের ওপর নিরীক্ষা চালানো হবে। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো বিধিবিধানের আলোকে পরিচালিত হচ্ছে কিনা তাও খতিয়ে দেখবে কমিশন। বৈধ এবং উপযুক্ত রাজনৈতিক দল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারে- এর মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। এসব কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সম্ভাব্য সময়সূচি তৈরি করেছে কমিশন। সে অনুযায়ী, আগামী আক্টোবরের মধ্যে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন শর্তাদি প্রতিপালন সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হবে। ২০১৮ সালের জানুয়ারির মধ্যে দলগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে তাদের নিবন্ধন বহাল বা বাতিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সীমানা পুনর্নির্ধারণে গুরুত্ব পাবে জনসংখ্যা, ভোটার সংখ্যা ও আয়তন : জানা গেছে, প্রথমবারের মতো সীমানা পুনর্নির্ধারণে জনসংখ্যার পাশাপাশি ভোটার সংখ্যা ও আয়তনের বিষয়ে গুরুত্ব দেবে ইসি। এতে শহরাঞ্চলের আসন সংখ্যা নির্ধারণ করে দেয়া হবে। গ্রামাঞ্চলের আসন যাতে কমে না যায় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে ইসি। এ জন্য আইনেও সংস্কার আনা হবে। এ বিষয়ে কর্মপরিকল্পনায় বলা হয়েছে, আগস্ট মাসের মধ্যে নির্বাচনী এলাকা পুনর্নির্ধারণের জন্য নীতিমালা পর্যালোচনা করে একটি নতুন নীতিমালা প্রস্তুত করা হবে। সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্বাচনী এলাকা পুনর্নির্ধারণের লক্ষ্যে জিওগ্রাফিক্যাল ইনফর্মেশন সিস্টেমস (জিআইএস) সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। ডিসেম্বরের মধ্যে নীতিমালার আলোকে বিশেষজ্ঞদের কারিগরি সহায়তায় ৩০০ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে খসড়া তালিকা প্রণয়ন করা হবে। আগামী বছরের জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচনী এলাকার খসড়া তালিকা প্রকাশ করে তার ওপর দাবি, আপত্তি ও সুপারিশ আহ্বান করা হবে। ফেব্রুয়ারিতে ওইসব দাবি, আপত্তি ও সুপারিশ নিষ্পত্তি করে এপ্রিলে সীমানা চূড়ান্তের পর গেজেট প্রকাশ করা হবে। এদিকে গ্রামাঞ্চলের সীমানা ঠিক রাখার কৌশল উল্লেখ করা হয়েছে কর্মপরিকল্পনায়। এতে বলা হয়েছে, সময়ের পরিবর্তনে এবং জনমানুষের শহরমুখী প্রবণতার কারণে বড় বড় শহরগুলোতে জনসংখ্যা বেড়েছে। জনসংখ্যার আধিক্য অথবা ঘনত্ব বিবেচনা করা হলে শহুরে এলাকায় সংসদ সদস্যের আসন সংখ্যা বেড়ে যাবে। পল্লী অঞ্চলে আসন সংখ্যা কমে যাবে। ফলে শহর এবং পল্লী অঞ্চলের সংসদীয় আসনের বৈষম্য সৃষ্টির সুযোগ হবে। সীমানা নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় শুধু জনসংখ্যার ওপর ভিত্তি না করে জনসংখ্যা ও ভোটার সংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে সীমানা নির্ধারণ করা যেতে পারে।
ভোট কেন্দ্র স্থাপন জুনে শুরু : ইসির খসড়া কর্মপরিকল্পনায় জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে ২০১৮ সালের জুনে ভোট কেন্দ্র নির্ধারণের কাজ শুরু হবে। ওই বছরের জুলাই মাসে নির্বাচনী এলাকাভিত্তিক ভোট কেন্দ্রের খসড়া তালিকা প্রকাশের পর তা স্থানীয় রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হবে। একই বছরের আগস্টে খসড়া ভোট কেন্দ্রের ওপর দাবি বা আপত্তি গ্রহণ এবং তা নিষ্পত্তি করা হবে। ভোট গ্রহণের ৩৫ দিন আগে তার গেজেট প্রকাশ করা হবে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ওই গেজেট নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে।
আইনি সংস্কার : কর্মপরিকল্পনায় আইন সংস্কারের বিষয়ে বলা হয়েছে, আইনি কাঠামোয় আমূল সংস্কারের প্রয়োজন হবে না। তবে কালের গতিপথ ধরে পরিবেশ পরিস্থিতি পরিবর্তনের মুখে বর্তমান আইন, বিধিগুলোকে আরও যুগোপযোগী করার সুযোগ রয়েছে। কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে আইন ও বিধিগুলো আরও উপযোগী করা হবে। মূল আইনি কাঠামোর আওতায় ক্ষেত্র বিশেষ কিছু যুগোপযোগী ধারণা প্রবর্তন করার উদ্যোগ নেয়া হবে। এতে আরও বলা হয়েছে, নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা-২০০৮-এর কাঠামোতে কিছু অস্পষ্টতা রয়েছে, যা দূর করা বিশেষ প্রয়োজন।
ভোটার তালিকা হালনাগাদ : জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আগামী ২৫ জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম। আগামী বছরের ৩১ জানুয়ারি এ ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। এ ছাড়া আগামী বছরের জুনে ৩০০ নির্বাচনী এলাকার জন্য ভোটার তালিকা মুদ্রণ, ছবিসহ ও ছবি ছাড়া ভোটার তালিকার সিডি প্রণয়ন ও বিতরণ করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.