অদম্য বাইয়েত্তি

লুসিয়ানো বাইয়েত্তির বয়স ৭০ বছর। ইতালির রাজধানী রোমের কাছাকাছি আলবান হিলস এলাকার ভেলেত্রি শহরে থাকেন। ছোট্ট বাড়ি এবং বাগানে খুঁটিনাটি কাজ করেই সারা দিন কাটিয়ে দেন। কিন্তু রাত তিনটায় উঠে এখনো পাঠ্যবই নিয়ে বসেন নিয়মিত। এটাই তাঁর পড়াশোনার অভ্যাস। ইতালির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাইয়েত্তি এ পর্যন্ত ১৫টি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সনদ পেয়েছেন। ইতিমধ্যে ষোড়শ সনদ অর্জনের চেষ্টাও শুরু করে দিয়েছেন। বর্ষীয়ান এই ছাত্র বললেন, ‘বইপত্রকে ধন্যবাদ। নিজেকে মুক্ত মনে হয়। সর্বোপরি শব্দগুলোর উৎস তো একই।’ তিনি ইতালীয় শব্দ ‘লিব্রো’ (বই) এবং ‘লিবেরো’র (মুক্তি) কথা বলছিলেন। অর্জিত সনদ তাঁর ঘরের দেয়ালে ঝুলছে। পাশেই ১৯ শতকের ফরাসি প্রবন্ধকার লুই-ফ্রাঁসোয়া বের্তাঁর ছবি। বাইয়েত্তি বললেন, তাঁর ওপর বের্তাঁর প্রভাব অনেক। তিনি ছিলেন সত্যিকারের একজন সংস্কৃতিমান ও বিদ্বান ব্যক্তি। বাইয়েত্তি একসময় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। ২০০২ সালে অষ্টম বিশ্ববিদ্যালয় সনদ অর্জনের পরই গিনেস বুক অব রেকর্ডসে নাম লিখিয়েছেন। সেটা ছিল মোটরগাড়ির দক্ষতার ওপর তাঁর পড়াশোনার স্বীকৃতি। তত দিনে তিনি সমাজবিজ্ঞান, সাহিত্য, আইন, রাজনীতিবিজ্ঞান এবং দর্শনশাস্ত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করেছেন। বেশির ভাগ সনদ পেয়েছেন রোমের মর্যাদাপূর্ণ লা সাপিয়েনজা ইউনিভার্সিটি থেকে। এটি বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি। সেই থেকে এ পর্যন্ত বাইয়েত্তি আরও সাতটি সনদ পেয়েছেন। এসবের মধ্যে অপরাধবিজ্ঞানের একটা সনদও আছে।
এটা ছিল তুরিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সামরিক কৌশলের ওপর দূরশিক্ষণ কোর্স। সর্বশেষ তিনি নেপলস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পর্যটন বিষয়ে একটি অনলাইন কোর্স সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন। চলতি মাসের শুরুতেই তিনি এই সনদ পেয়েছেন। ক্রীড়া শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন বাইয়েত্তি। বললেন, প্রতিটি কোর্স শুরুর সময় তিনি নতুন একটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রস্তুতি নেন। ভাবতেন, দেখে নেওয়া যাক তাঁর শরীর ও মস্তিষ্ক কত দূর যেতে পারে। বাইয়েত্তির এ রকম ব্যতিক্রমী শখের যাতনা তাঁর চেয়ে বয়সে প্রায় ৩০ বছরের ছোট স্ত্রীকে সইতে হয়। ভালোবেসে তিনি সেটা মেনে নিয়েছেন। বললেন, তাঁর স্বামীকে এ রকম স্বভাবের জন্যই শহরের সবাই চেনে। বাইয়েত্তি একসময় দিনে রেডক্রসের চাকরি আর রাতে পড়াশোনা করেছেন। চিরকালীন শিক্ষার্থী বাইয়েত্তি ১৯৭২ সালে প্রথম সনদ অর্জন করেন। সেটা ছিল শারীরিক শিক্ষার ওপর। তারপর শিক্ষাজগতের আকর্ষণে একটানা নিমগ্ন হয়ে পড়েন। সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ছিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও তুরিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত কোর্সটি। তখন সামরিক পোশাক পরে তাঁকে অপরাধবিজ্ঞানের মাস্টার্স পরীক্ষা দিতে হয়েছে। এখন তিনি পড়ছেন খাদ্যবিজ্ঞান। ভোরের আগে উঠে কেন পড়তে বসেন? বাইয়েত্তি বলেন, ওই সময় মাথাটা পড়াশোনার জন্য বেশি উন্মুক্ত থাকে। আর এতে স্বাভাবিক পারিবারিক জীবনযাপনটাও নির্বিঘ্ন হয়।

No comments

Powered by Blogger.