বিক্ষোভ, দলীয় কার্যালয়ে তালা, এজাজের কুশপুত্তলিকা দাহ

খুলনা জেলা বিএনপির নতুন কমিটি প্রত্যাখ্যান করে গতকাল মঙ্গলবার নগরে বিক্ষোভ করেছেন দলটির একাংশ নেতা-কর্মী। সকাল থেকে তাঁরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। তাঁরা দলীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন এবং নতুন সাধারণ সম্পাদক আমীর এজাজ খানের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন।
আজ বুধবারের মধ্যে সাধারণ সম্পাদককে অপসারণ করা না হলে কাল বৃহস্পতিবার থেকে আরও কঠোর কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা। গত সোমবার রাতে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে খুলনা জেলা বিএনপির কমিটি ঘোষণার বিষয়টি জানানো হয়। এতে শফিকুল আলমকে সভাপতি ও আমীর এজাজ খানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। আট বছর পর সম্মেলন ছাড়াই কমিটি ঘোষণা হওয়ায় ক্ষুব্ধ পদ না পাওয়া নেতারা। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালের ৩০ নভেম্বর পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই নগরের একটি অভিজাত হোটেলে খুলনা জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সে সময়কার সম্মেলনে দলের নয়টি উপজেলা ও একটি পৌরসভা কমিটির ৩০ জন কাউন্সিলরের মধ্যে বেশির ভাগ অনুপস্থিত ছিলেন। ওই সম্মেলনে দলের জেলা কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে যথাক্রমে অধ্যাপক মাজিদুল ইসলাম, শফিকুল আলম, আমীর এজাজ খানসহ পাঁচজনের নাম ঘোষণা করা হয়। নবগঠিত আংশিক ওই কমিটির বিরুদ্ধে তখন খুলনা সদর সহকারী জজ আদালতে মামলা হয়। এরপর জেলা বিএনপি নিয়ে চলে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি। আংশিক কমিটি গঠনের প্রায় ১০ মাসের মাথায় ঘোষণা করা হয় খুলনা জেলা বিএনপির ১৫১ জনের নির্বাহী কমিটি। তবে কমিটি ঘোষণার কিছুদিনের মধ্যেই মাজিদুল ইসলাম নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। পরিবার নিয়ে থাকতেন ঢাকায়। নেতা-কর্মীরা তাঁকে সহজে কাছে পেতেন না। আর আমীর এজাজ খান ২০১৫ সালে সরকারবিরোধী আন্দোলনের শুরুর দিকে থাকলেও ধরপাকড়ের ভয়ে পরে ঢাকায় চলে যান। বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা বলেন, শফিকুল আলম গত আট বছর জেলা বিএনপি চালিয়েছেন। আন্দোলনের পুরোটা সময় আমীর এজাজ খান দলীয় কর্মকাণ্ডে ছিলেন অনুপস্থিত। তাঁকে নিয়ে আগে থেকেই দলের মধ্যে ক্ষোভ ছিল। এবার তাঁকে সাধারণ সম্পাদক করায় সেই ক্ষোভ আরও ছড়িয়ে পড়েছে। আন্দোলনকারীদের পক্ষে জেলা বিএনপির সাবেক প্রচার সম্পাদক মনিরুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘নবনির্বাচিত সভাপতির প্রতি আমাদের সবারই আস্থা রয়েছে। তবে আমীর এজাজ খান আন্দোলনের পুরোটা সময় দলীয় কর্মকাণ্ডে অনুপস্থিত ছিলেন। নেতা-কর্মীদের দুঃসময়ে তিনি কারও পাশে ছিলেন না।
চরম সুবিধাবাদী এই নেতাকে সাধারণ সম্পাদক বানিয়ে ত্যাগী নেতা-কর্মীদের অপমান করা হয়েছে।’ সদ্য বিলুপ্ত জেলা বিএনপির সহসভাপতি জুলফিকার আলী বলেন, ‘এজাজকে বহাল রাখা হলে দলীয় কর্মসূচিতে জেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা অংশগ্রহণ করবেন না। আমরা তাঁর অপসারণের দাবি জানাচ্ছি। তাঁকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছি। এই কমিটি বাতিল না করলে গণপদত্যাগ করা হবে।’ নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদককে অপসারণের দাবিতে গতকাল সকাল ১০টা থেকে ৬ নম্বর কে ডি ঘোষ রোডে জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা। তাঁরা দলীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। সমাবেশ শেষে এজাজ খানের কুশপুত্তলিকা পোড়ান নেতা-কর্মীরা। জানতে চাইলে নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক আমীর এজাজ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আন্দোলন সংগ্রামে না থাকলে আমার বিরুদ্ধে কীভাবে চারটি মামলা হয়েছে? আন্দোলনের সময় বিএনপির বিরুদ্ধে মামলা হলেই আমার নাম আসা শুরু করল। তখন দলের স্বার্থেই একটু নিরাপদে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণ সম্পাদকের পদ একটিই। অনেকেই পদটি প্রত্যাশা করতে পারে, না পেয়ে তাদের কেউ কেউ কিছুটা ক্ষুব্ধ। তবে দল আমাকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছে। সবাইকে নিয়েই কাজ করতে চাই।’ নবনির্বাচিত সভাপতি শফিকুল আলম বলেন, কমিটি ঘোষণার পর ক্ষোভ প্রকাশ স্বাভাবিক। সবার সঙ্গে কথা বলে এই ক্ষোভ প্রশমন করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.