শশীকলার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন অধরা

মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন এ যাত্রায় অধরাই থেকে গেল জয়ললিতার ছায়াসঙ্গী শশীকলা নটরাজনের। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়ে এখন তাঁকে কর্ণাটকের জেলে বন্দিজীবন কাটাতে হবে। হিসাববহির্ভূত সম্পত্তি রাখার মামলায় ভারতের বেঙ্গালুরুর বিশেষ আদালত তামিলনাড়ু রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা, তাঁর বান্ধবী শশীকলা ও অন্যদের বিরুদ্ধে যে রায় দিয়েছিলেন, গতকাল মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট তা বহাল রাখলেন। ৬১ বছর বয়সী শশীকলাকে এখন চার বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। ভারতের নতুন আইন অনুযায়ী দুই বা তার বেশি সময়ের জন্য কারও সাজা হলে সেই ব্যক্তি সাজা ভোগের পরবর্তী ৬ বছর পর্যন্ত কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। ফলে ৪ বছরের সাজা ও পরের ৬ বছর ধরলে আগামী ১০ বছর শশীকলার কাছে নির্বাচনে দাঁড়ানোর রাস্তা বন্ধ হয়ে গেল। সর্বোচ্চ আদালত তাঁকে কর্ণাটক পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন।
শশীকলার ঘনিষ্ঠ মহল অবশ্য জানিয়েছে, তারা এই রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন জানাবে। চূড়ান্ত রায় দেওয়ার আগে মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার মৃত্যু হয়। কিন্তু ক্ষমতার অপব্যবহার ঘটিয়ে আয়বহির্ভূত সম্পত্তি অর্জনের যে অভিযোগ জয়ললিতা, তাঁর দত্তক-পুত্র সুধাকরণ, বান্ধবী শশীকলা ও আত্মীয় ইলাবরসির বিরুদ্ধে উঠেছিল, তা বহাল থাকায় সম্মানহানির হাত থেকে প্রয়াত নেত্রী রেহাই পেলেন না। শশীকলার জেলযাত্রা এখন অনিবার্য হয়ে ওঠায় তামিলনাড়ুর শাসক দল এআইএডিএমকের ক্ষমতার লড়াই অন্য মাত্রা পেল। দলের ১১৯ জন ‘অনুগামী’ বিধায়ককে চেন্নাইয়ের অদূরে এক বিলাসবহুল রিসোর্টে কয় দিন ধরে ‘বন্দী’ রেখে শশীকলা মুখ্যমন্ত্রিত্বের দাবি জানিয়ে রাজ্যপালের আমন্ত্রণের অপেক্ষায় ছিলেন। জেলযাত্রা অবধারিত বুঝে যাওয়ার পরই গতকাল সকালে তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠ ই পালানিসামিকে পরিষদীয় দলের নেতা নির্বাচন করেন। একই সঙ্গে তিনি অন্তর্বর্তী মুখ্যমন্ত্রী বিদ্রোহী পনিরসেলভামকে দল থেকে বহিষ্কার করেন। এরপরই শশীকলার নির্দেশে রাজ্যপাল বিদ্যাসাগর রাওকে চিঠি দিয়ে পালানিসামি সরকার গঠনের আরজি জানান। সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের পর পনিরসেলভামের অনুগামীরা নতুন আশায় বুক বাঁধলেও তিনি রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে সরকার গঠনের দাবি জানাননি। রায় শুনে প্রথমে তিনি বলেন, রাজ্যের মানুষ হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। কিন্তু পরক্ষণেই তিনি সাবধানী হয়ে বলেন, ‘দলে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা চলছে, আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’ সুপ্রিম কোর্টের রায় বেরোনোর আগে থেকেই অবশ্য শশীকলার শিবির থেকে একজন-দুজন করে বেরিয়ে এসে পনিরসেলভাম শিবিরে যোগ দিয়েছেন। রায় বেরোনোর পর পনিরসেলভাম শিবির থেকে দাবি জানানো হয়, আরও ১১ জন বিধায়ক তাঁর দিকে আসতে উন্মুখ।
এই অবস্থায় রাজ্যপালের ভূমিকা আলোচনার স্তরে উঠে এসেছে। সংখ্যাগরিষ্ঠের সম্মতির চিঠি থাকলেও শশীকলাকে কেন এত দিন সরকার গড়তে ডাকা হয়নি, কেনই বা তিনি অনর্থক সময় নিচ্ছেন, সেই প্রশ্ন উঠেছে। একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে, এই পরিস্থিতিতে রাজ্যপাল কী করবেন। অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহতগি গত সোমবার রাজ্যপাল বিদ্যাসাগর রাওকে এক দিনের বিশেষ বিধানসভার অধিবেশন ডাকার পরামর্শ দিয়েছেন। সেই অধিবেশনে দুই শিবিরকেই সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ রাখার সুপারিশ করেছেন। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, দুই শিবিরই গরিষ্ঠতার দাবি জানাচ্ছে বলে দুটি ভিন্ন প্রস্তাবের ওপর গোপন ভোটাভুটি করা দরকার। এই ক্ষেত্রে তিনি উত্তর প্রদেশ বিধানসভার এক দৃষ্টান্ত উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন। ১৯৯৮ সালের সেই ঘটনায় লোকতান্ত্রিক কংগ্রেসের জগদম্বিকা পাল ও বিজেপির কল্যাণ সিং দুজনেই সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থনের দাবি জানিয়েছিলেন। রাজ্যপাল বিধানসভা কক্ষে গোপন ভোটের বন্দোবস্ত করেছিলেন। জিতেছিলেন কল্যাণ সিং। কিন্তু কী করবেন রাজ্যপাল? এই মুহূর্তে তা নিশ্চিত নয়। অচলাবস্থা কাটাতে রাজ্যপাল বিধানসভা জিইয়ে রেখে স্বল্প সময়ের জন্য রাষ্ট্রপতির শাসনও জারি করতে পারেন। মুখ্যমন্ত্রী মুফতি মহম্মদ সাঈদের মৃত্যুর পর সম্প্রতি জম্মু-কাশ্মীরে এই সাংবিধানিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল।

No comments

Powered by Blogger.