আনন্দের মন্ত্র নিয়ে উৎসবে শামিল খুদে গণিতবিদেরা

এটি শুধু প্রতিযোগিতা নয়, হার-জিতের চেয়ে এখানে আনন্দই মূল বিষয়। আনন্দের মন্ত্র নিয়েই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খুদে গণিতবিদেরা অংশ নিচ্ছে জাতীয় উৎসবে। গণিতের জটিল সব সমস্যায় তাদের ছিল না কোনো ভয়। দিনটি পরীক্ষা ও আনন্দ আয়োজনে পার করে তারা। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল মাঠে গতকাল শুক্রবার সকালে উদ্বোধন হয় ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো জাতীয় গণিত উৎসব ২০১৭-এর। এটি ছিল ১৫তম জাতীয় উৎসব। ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি দুই দিনব্যাপী এই উৎসবের আয়োজন করেছে। দিনের আলো ফুটতেই বিভিন্ন জেলা থেকে আসা গণিতপ্রেমী শিক্ষার্থীরা স্কুল প্রাঙ্গণে আসতে থাকে।
সেখানে অঞ্চলভিত্তিক স্টলগুলোতে নিবন্ধন চলছিল। রংপুর জেলার স্টলের সামনে জটলা করেছিল রংপুর ক্যাডেট কলেজ থেকে আসা ১০ শিক্ষার্থী। তাদের একজন একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. সাকিব-উর-রহমান প্রথম আলোকে বলে, ‘২০১১-তে গণিত উৎসবে জাতীয় পর্যায়ে রানার্সআপ হয়েছিলাম। এবার আশা করছি চ্যাম্পিয়ন হব।’ এবারের আঞ্চলিক গণিত উৎসবে সারা দেশের ১৫টি অঞ্চলের ২২ হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেয়। আঞ্চলিক উৎসবের বিজয়ী ১ হাজার ১২০ শিক্ষার্থী এই জাতীয় উৎসবে অংশ নিচ্ছে। জাতীয় পর্যায়ের বিজয়ীদের মধ্য থেকে ছয়জন এ বছরের জুলাইয়ে ব্রাজিলে অনুষ্ঠেয় ৫৮তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নেবে। সকাল নয়টায় জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় উৎসব। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের অধ্যক্ষ ব্রাদার রবি পিউরিফিকেশন। তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘প্রথম আলোর সহযোগিতায় দেশের গণিতবিদেরা অনেক দূর এগিয়ে গেছে। তোমরাও এগিয়ে যাবে। এই প্রত্যাশা আমরা রাখি।’বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতি অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী। তিনি বলেন, ২০০৩ সালে প্রথম গণিত উৎসব শুরু হয়। আর এ বছর পঞ্চদশতম আসর। গণিতে ভীতি দূর করা আর সারা দেশে গণিত শিক্ষার মান উন্নত করার প্রচেষ্টায় এই উৎসব শুরু হয়েছিল। আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইদুল হাসান। গণিতের এই মহা উৎসবে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান। শুভেচ্ছা বক্তব্যে প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আজকের পরীক্ষা আসলে পরীক্ষা না। এটা একটা উৎসব। এর মধ্য থেকে যারা ব্রাজিলে যাবে তারা যেমন সৌভাগ্যবান, তেমনি যারা যেতে পারবে না তাদেরও সৌভাগ্য যে এই উৎসবে শামিল হতে পেরেছে।’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সহসভাপতি অধ্যাপক মুনিবুর রহমান চৌধুরী, সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ, সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান, গণিতবিদ লায়েক সাজ্জাদ এন্দেল্লাহ, এম এ হাকিম, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ মোহিত কামাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সকাল ১০টায় প্রাইমারি,
জুনিয়র, সেকেন্ডারি ও হায়ার সেকেন্ডারি—এই চার ক্যাটাগরিতে শিক্ষার্থীদের জন্য গণিত অলিম্পিয়াড পরীক্ষা শুরু হয়। প্রশ্ন হাতে পেয়েই গণিত নিয়ে মজার উৎসবে মেতে ওঠে সহস্রাধিক শিশু-কিশোর। তবে পরীক্ষার সময় তাদের চোখেমুখে ছিল চিন্তার ছাপ। বিরতির ফাঁকে কথা হয় মোর্শেদা খাতুনের সঙ্গে। দিনাজপুর থেকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে উৎসবে এসেছেন মোর্শেদা। তিনি বলেন, ‘আগে অভিভাবকেরা শুধু লেখাপড়া করতে বলত। এখন লেখাপড়ার পাশাপাশি সন্তানদের অন্যান্য প্রতিযোগিতাতে অংশ নিতে উৎসাহ দিচ্ছে।’ পরীক্ষা শেষ হতে হতে দুপুরের খাবারের বিরতি। বিরতির পরের অংশে ছিল মজার মজার খেলা ও মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা। মোহাম্মদপুর স্ট্যান্ট ভাইপার্সের সাইকেল কসরতে মুগ্ধ হয় খুদে গণিতবিদেরা। সোয়া দুইটায় ওয়াটার রকেট উড্ডয়ন করা হয়। এরপর মঞ্চে ছিল সিসিমপুরের টুকটুকি, হালুম আর ইকরির পরিবেশনা। ‘আঠারো বছর বয়স’ গানের সঙ্গে নাচ পরিবেশন করে এক্সট্রিম ড্যান্স গ্রুপ। ছিল প্রাচ্যনাটের ‘এ দেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে’ শীর্ষক পরিবেশনা। বাংলার ঐতিহ্য, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধকেন্দ্রিক এই পরিবেশনা উপভোগ করেন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও অতিথিরা। এ ছাড়া রুবিকস কিউব ও সুডোকু প্রতিযোগিতা হয়। আজ সকালে সাড়ে আটটায় দ্বিতীয় দিনের উৎসব শুরু হবে। থাকবে গণিতের পট, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। এ ছাড়া উৎসবে ২০১৬ সালের সেরা গণিত ক্লাবের পুরস্কার দেওয়া হবে।

No comments

Powered by Blogger.