ছুটির দিনে কলকারখানা বন্ধ, তবু চুলা জ্বলে না

গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনে পুরান ঢাকার অনেক এলাকায় দিনের বেশির ভাগ সময় গ্যাসের চুলায় আঁচ ছিল না। রাজার দেউড়ি, তাঁতীবাজার, গেন্ডারিয়া এলাকার কিছু বাসিন্দার অভিযোগ, ছুটির দিনে কলকারখানা বন্ধ থাকে, তারপরও চুলায় আঁচ নেই কেন? তিতাস কার্যালয়ে অভিযোগ করে কোনো লাভ হচ্ছে না। রাজার দেউড়ির সুদেব ঘোষসহ কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, শীতে গ্যাসের চাহিদা বাড়ে। এখন তো রীতিমতো গরম পড়ছে।
কিন্তু চুলা জ্বলছে না কেন? দিনের বেলায় বেশির ভাগ সময় চুলায় আঁচ থাকে না। গেন্ডারিয়ার এস কে দাস রোড, সতীশ সরকার রোড ও বাগিচা এলাকার বাসিন্দারা বলেন, স্বল্পচাপ সমস্যা কমাতে গত বছর তাঁদের এলাকায় পাইপলাইন সংস্কার করা হয়েছিল। তারপরও উন্নতি হয়নি। এস কে দাস রোডের পলাশ রঞ্জন বলেন, ভোরে উঠে তাঁর মা রান্না করেন। দুপুরে খাবার রান্না হয় বেলা তিনটার পর। তাঁর প্রশ্ন, এ অবস্থা কত দিন চলবে? বাগিচা এলাকার কাঠ ব্যবসায়ী বাবর আলী গতকাল দোকান খোলেননি। কিন্তু দুপুরে নামাজ শেষে বাসার পরিবর্তে তাঁকে খেতে হয়েছে হোটেলে। গ্যাসস্বল্পতা নিয়ে যাঁদের সঙ্গেই কথা হয়েছে, প্রত্যেকেই বলেছেন, অন্য দিনের কথা আলাদা, ছুটির দিনেও কেন গ্যাস থাকে না? গেন্ডারিয়ার সতীশ সরকার রোডের একটি রেস্তোরাঁ থেকে খাবার কিনছিলেন বাসিন্দা আবদুর রব। তিনি বলেন, তিতাসের নিয়ন্ত্রণকক্ষে ফোন করে একই প্রশ্ন করলেও কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির জরুরি নিয়ন্ত্রণকক্ষে ফোন করলে কর্তব্যরত কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, কোথাও গ্যাসপাইপ ফেটে গেলে বা দুর্ঘটনা ঘটলে তাঁদের কাছে অভিযোগ করা যায়। গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো নিয়ন্ত্রণকক্ষের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে তিতাসের পরিচালক (অপারেশন) এইচ এম আশরাফ আলী বলেছেন, এখনো চাহিদার তুলনায় গ্যাসের সরবরাহ কম থাকায় ছুটির দিনেও সমস্যা থাকে।
গ্যাস বরাদ্দ ও সরবরাহ না বাড়লে গ্যাস-সংকট কমা সম্ভব নয়। গতকাল দেখা যায়, সতীশ সরকার রোড এবং তাঁতীবাজারের অনেক ভাতের হোটেল ও রেস্তোরাঁয় গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশেষ করে রাধিকা মোহন বসাক লেন ও পচা গলির রাস্তার ধারের খাবার হোটেলগুলো তিতাসের গ্যাসলাইন থাকার পরও সিলিন্ডার ব্যবহার করছেন। গত বছরও তা-ই হয়েছে। হাজি বাবুল হোটেলের একজন কর্মীর মন্তব্য, সিলিন্ডারের ওপর রান্নার কাজ চলছে, নইলে হোটেল বন্ধ হয়ে যেত। পচা গলিতে সাতটি হোটেলে সিলিন্ডার দেখা যায়। এসব হোটেলে ভাত, পরোটা, ডাল, মাছ, মাংস, ডিম— সবই পাওয়া যায়। রাজার দেউড়ির গৃহিণী অমৃতা নাগ গ্যাস সমস্যার কথা জানিয়ে বলেন, ছোট বাচ্চাকে বাসি খাবার দিতে ইচ্ছে করে না। তাই বাধ্য হয়ে একটি ইলেকট্রিক হিটার কিনেছেন। জানুয়ারি মাসে বাড়তি বিদ্যুৎ বিল দিতে হয়েছে। গ্যাস-সংকট এলাকায় যাঁদের সংগতি আছে, তাঁদের অনেকেই ইলেকট্রিক হিটার বা রাইসকুকার কিনেছেন বলে জানা গেছে।

No comments

Powered by Blogger.