বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দুই যুবক দোষী সাব্যস্ত

মধ্যপ্রাচ্যে সক্রিয় জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ও যুক্তরাজ্যে থাকা মার্কিন সেনাদের ওপর হামলার পরিকল্পনার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দুই যুবক। ওই দুজন হলেন ব্রিটিশ নাগরিক জুনায়েদ আহমদ খান (২৫) ও সজিব খান (২৩)। দুজনই ইংল্যান্ডের লুটন শহরের বাসিন্দা। ছয় সপ্তাহের শুনানি শেষে গত শুক্রবার যুক্তরাজ্যের কিংসটন ক্রাউন কোর্টে তিন সদস্যের জুরিবোর্ড সন্ত্রাসবাদের দায়ে দুই যুবককে দোষী সাব্যস্ত করেন। আগামী ১৩ মে এঁদের সাজা ঘোষণা করা হবে। বিবিসির এক খবরে বলা হয়, যুক্তরাজ্যে জন্ম নেওয়া জুনায়েদ আহমদ খান শৈশবের কিছু সময় বাংলাদেশে পড়াশোনা করেছেন। যুক্তরাজ্যে তাঁর শিক্ষাজীবন মাধ্যমিক পর্যায়ের আগেই থেমে যায়। এরপর বেশ কয়েকটি চাকরি করে তিনি অ্যালায়েন্স হেলথ নামে একটি কোম্পানিতে গাড়িচালক হিসেবে যোগ দেন। আর সজিব খান ছিলেন বেকার। জুনায়েদ ও সজিব সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা বলে পরিচয় দিয়েছেন। গত বছরের ১৪ জুলাই তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। ইংল্যান্ডের পূর্বাঞ্চলীয় শহর সাফোকে অবস্থিত আরএএফ লেইকেনহিথ ও আরএএফ মিলডেনহল সামরিক ঘাঁটিতে মার্কিন সৈন্যদের অবস্থান। জুনায়েদ ঘাঁটিসংলগ্ন সড়কে মার্কিন সেনাদের গাড়ির সঙ্গে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করেন। আর সজিব চেয়েছিলেন জুনায়েদকে সঙ্গে নিয়ে সিরিয়ায় পাড়ি দিতে। যুক্তরাজ্যের মেট্রোপলিটন কাউন্টার টেররিজম কমান্ডের কমান্ডার ডিন হেইডন দুই যুবককে ‘সেলফ র্যাডিকেলাইজড’ বা কোনো প্ররোচনা ছাড়াই উগ্রবাদী হয়ে ওঠা যুবক বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি আদালতে বলেন, ২০১৪ সালের শুরুর দিকে লুটনে উগ্রবাদীদের একটি সভায় যোগ দেওয়ার কারণে দুই যুবক তাঁদের নজরে আসেন। পুলিশের উগ্রবাদ প্রতিরোধ দলের সদস্যরা বেশ কয়েক দফা এঁদের উগ্রবাদ থেকে ফেরাতে উগ্রবাদ প্রতিরোধ কার্যক্রমে (র্যাডিকেলাইজেশন প্রিভেন্ট প্রোগ্রাম) যুক্ত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। ২০১৪ সালের জুন মাসে আইএস ‘ইসলামিক খেলাফত’ ঘোষণা করলে জুনায়েদ ও সজিব সিরিয়ায় যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। সে সময় তাঁরা যেতে না পারলেও লুটনের আবু রাহিন আজিজ নামে আরেক যুবক সিরিয়ায় চলে যান। আবু রাহিনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন জুনায়েদ। ২০১৫ সালের ৫ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় আবু রাহিন আজিজ নিহত হলে সিরিয়ায় অবস্থানরত আরেক ব্রিটিশ যুবক জুনায়েদ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন জুনায়েদ আহমদ খান। আদালতের শুনানিতে বলা হয়, বিশেষ সুরক্ষিত মোবাইল অ্যাপে (এনক্রিপটেড) জুনায়েদ হোসেন ও জুনায়েদ খান যোগাযোগ করতেন। জুনায়েদ খানের মুঠোফোন থেকে উদ্ধার করা খুদেবার্তায় দেখা যায়, তিনি মার্কিন সেনাদের বহনকারী গাড়ির সঙ্গে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে সেনা হত্যার পরিকল্পনা করছেন। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নিজের সঙ্গে প্রেশারকুকার বোমা ও ছুরি রাখার পরামর্শ দেন সিরিয়া থেকে জুনায়েদ হোসেন। তিনি প্রেশারকুকার বোমা তৈরির কৌশলপত্রও (ম্যানুয়াল) পাঠান। পরিকল্পনামতো জুনায়েদ আহমদ খান অনলাইনে ইতালিতে তৈরি একটি ছুরি কেনার অর্ডার দেন। ওই ছুরি আসতে খানিকটা দেরি হচ্ছিল। দেরির কারণ জানতে বিক্রেতার কাছে ফোন করেন তিনি। এ অবস্থায় গত বছরের ১৪ জুলাই পুলিশ জুনায়েদকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর বাসা থেকে বোমা তৈরির কৌশলপত্র ও আইএসের পতাকা জব্দ করে পুলিশ। সে সময় জুনায়েদ আহমদ খানের আইএসের যোদ্ধাবেশী ছবিও পাওয়া যায়।

No comments

Powered by Blogger.