গ্রিস শরণার্থীদের ফেরত পাঠাচ্ছে কাল থেকে

গ্রিসের আইডোমেনি গ্রামে এসে পৌঁছানো অভিবাসনপ্রার্থী ও শরণার্থীদের অনেকে অবস্থান
নিয়েছেন সেখানকার মাঠঘাট প্রান্তরে। কৃষিজমিতেও তাঁবু গেঁড়ে বসেছেন অনেকে। এ কারণে
ক্ষুব্ধ স্থানীয় কৃষকেরা গতকাল রাস্তা আটকে প্রতিবাদ জানান। তাঁদের পাশ
কাটিয়ে কয়েকজন শরণার্থীকে এগিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে ও তুরস্কের চুক্তি অনুযায়ী, গ্রিস থেকে তুরস্কে শরণার্থীদের পাঠানো শুরু হচ্ছে কাল সোমবার থেকে। কিন্তু এ বিশাল কর্মযজ্ঞের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির ঘাটতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এর বাস্তবায়ন কীভাবে হবে তা নিয়েও এক ধরনের ধোঁয়াশা রয়ে গেছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের পাশাপাশি খোদ জাতিসংঘ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, হয়তো এসব শরণার্থীদের আবার সিরিয়ায় ফেরত পাঠানো হবে। শরণার্থীদের গ্রহণ করতে তুরস্ক দুটি কেন্দ্র তৈরি করেছে বলে জানা গেছে। বিতর্কিত এই চুক্তি অনুযায়ী, ইজিয়ান সাগর পাড়ি দিয়ে যে শরণার্থীরা ইইউয়ের সদস্য দেশ গ্রিসে প্রবেশ করেছেন তাঁদের গ্রহণ করবে তুরস্ক। এসব শরণার্থী তাঁরাই যাঁরা আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেননি বা যাঁদের আশ্রয় পাওয়ার আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। গ্রিস থেকে যাওয়া এক সিরীয় শরণার্থীর বিনিময়ে তুরস্ক থেকে আরেকজন শরণার্থীকে ইইউভুক্ত দেশে পুনর্বাসিত করা হবে। এ ক্ষেত্রে তাঁদেরই প্রাধান্য দেওয়া হবে যাঁরা ইউরোপে অবৈধভাবে যাওয়ার চেষ্টা করেননি। ইইউয়ের এক কর্মকর্তা বলেছেন, তাঁরা আশা করছেন আগামীকাল কয়েকশ শরণার্থী ফেরত যাবে। আর জার্মানি ঘোষণা দিয়েছে, তারা প্রথম আসা শরণার্থীকে গ্রহণ করতে চায়। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তোবিয়াস প্লেট বলেন, বাচ্চাকাচ্চা আছে এমন পরিবারকে নিতে তাঁরা বেশি আগ্রহী। গত বছর ১০ লাখেরও বেশি শরণার্থী তুরস্ক থেকে সাগর পাড়ি দিয়ে গ্রিস হয়ে ইইউভুক্ত নানা দেশে ঢুকে পড়ে। এখন উত্তর ইউরোপের দেশগুলো তাদের সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ায় এক লাখেরও বেশি শরণার্থী আটকা পড়েছে গ্রিসে। বার্তা সংস্থা এপি গ্রিসের এক সরকারি কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে জানায়, গ্রিসের দ্বীপ লেসবস থেকেই শরণার্থীদের পাঠানো শুরু হবে। শরণার্থীদের কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে বাসে করে নিয়ে যাওয়া হবে বড় নৌযানে।তবে বিবিসির খবরে তুরস্কের পশ্চিমের সীমান্ত শহর দিকিলির কাছের একটি শরণার্থী নিবন্ধন কেন্দ্রের অবস্থা জানিয়ে বলা হয়, গতকালও এ কেন্দ্র ছিল জনশূন্য। লেসবসের ঠিক উল্টো দিকের শহর দিকিলি। তবে গ্রিস থেকে শরণার্থী পাঠানোর এই প্রস্তুতির মধ্যে অবৈধভাবে তুরস্ক থেকে গ্রিসে ঢোকার প্রবণতা বন্ধ হয়নি। ১৬০ জন শরণার্থীকে গত শুক্রবারই দিকিলিতে আটক করে তুরস্কের উপকূল রক্ষী বাহিনী। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন লেসবসে পৌঁছে গেছে বলে জানানো হয় ওই প্রতিবেদনে। শরণার্থী বিনিময়ে ইইউয়ের এই পরিকল্পনার কার্যকারিতা নিয়ে ইতিমধ্যেই ঘোরতর সন্দেহ দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, তুরস্ক জোর করে শরণার্থীদের সিরিয়ায় পাঠানোর চেষ্টা করছে। তবে তুরস্ক কারও ইচ্ছের বিরুদ্ধে জোর করে ফেরত পাঠানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছে। গত শুক্রবার গ্রিসের পার্লামেন্ট দেশে থাকা শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর জন্য একটি আইন ১৬৯-১০৭ ভোটে পাশ করেছে। তবে নতুন এই আইনের বিরুদ্ধে জোর প্রতিবাদ জানিয়েছে শরণার্থীরা। গ্রিসের কিওস দ্বীপে কয়েকশ শরণার্থী তাদের আশ্রয় শিবিরের বেড়া ভেঙে ফেলে। তাদের উত্তর ইউরোপে যেতে দেওয়ারও দাবি জানায়। এক শরণার্থী বলেন, ‘এভাবে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত বিরাট ভুল। প্রচণ্ড ঝুঁকি নিয়ে আমরা তুরস্ক থেকে এখানে এসেছি। আমাদের পাচার করা হয়েছে। আমরা ফিরে যেতে পারি না।’ ওই শরণার্থী বলেন, ‘আমরা আবার ফিরে আসব। কেননা জীবন বাঁচানোর জন্য আমরা ছুটছি।’এদিকে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর আগে তাদের অধিকতর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে গ্রিস ও তুরস্কের প্রতি। দুটি কেন্দ্র স্থাপন: গ্রিস থেকে আসা শরণার্থীদের গ্রহণ করতে এ পর্যন্ত তুরস্ক দুটি আশ্রয় কেন্দ্র তৈরি করেছে। তুরস্কের ইজমির প্রদেশে তৈরি করা দুটি কেন্দ্রে পানির পাইপ এবং বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। তুরস্ক সরকার অবশ্য বলছে, এগুলো আশ্রয় কেন্দ্র না। এখানে এসে সাময়িকভাবে শরণার্থীরা থাকবেন। এরপর তাদের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হবে।

No comments

Powered by Blogger.