কোন পথে এবারের পৌর নির্বাচন? by জি. মুনীর

আমাদের কাছে অবাক লাগে আওয়ামী লীগের মতো একটি পুরনো জনভিত্তিক দল কখনোই যেন জনগণের ওপর নির্ভর করতে পারে না, বিশেষ করে ক্ষমতায় যাওয়া বা থাকার ব্যাপারে। ফলে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যতটি নির্বাচন এসেছে, প্রতিটিতে নানা অপকৌশলের অবলম্বন করতে দেখা গেছে এই দলটির নেতানেত্রীদের। ক্ষমতায় থাকার সূত্রে যেমনি প্রয়োজন আইন ও বিধিবিধান পাল্টে দিয়েছে, তেমনি নির্বাচনের সময় করেছে ক্ষমতার চরম অপব্যবহার। এমনকি ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে যেখানে দলটির বিপুল ভোটে জয়ের সম্ভাবনা ছিল সমুজ্জ্বল, তখনো প্রতিপক্ষের ওপর জোরজবরদস্তি প্রয়োগ করে নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করতে পিছপা হয়নি এ দলটি। পরবর্তী সময়ে এ সরকারের আমলে যে ক’টি স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচন হয়েছে, সেগুলোতেও চলেছে ব্যাপক ভোট ডাকাতি নানা পদ্ধতি-প্রক্রিয়ায়। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের ইতিহাসে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন, প্রতিদ্বন্দ্বীবিহীন নির্বাচন সবচেয়ে বড় কলঙ্কতিলক হয়েই থাকবে। এ নির্বাচনে অর্ধেকেরও বেশি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের প্রার্থীরা। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি রাজনৈতিক দল এ নির্বাচন বর্জন করে। বিশ্বের কোনো দেশই এই নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বলে মেনে নেয়নি; বরং গোটা বিশ্ব ও জাতিসঙ্ঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফোরাম এর বদলে যথাশিগগির এমন একটি নির্বাচন আয়োজনের কথা বলে, যেখানে দেশের সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে এবং দেশ-বিদেশে এ নির্বাচন সব মহলের কাছে গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। গণতান্ত্রিক মান বিবেচনায়ও এ নির্বাচন সবার কাছে গ্রাহ্য হবে। কিন্তু সরকার সে পথে পা বাড়াতে নারাজ। যদিও নির্বাচনের আগে আমাদের প্রধানমন্ত্রী একাধিক বার বলেছিলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন হচ্ছে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার নির্বাচন। এ নির্বাচনের পর সব দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন আয়োজন করা হবে। কিন্তু সরকার ৫ জানুয়ারির পর সেই অবস্থান থেকে সরে গিয়ে পুরো পাঁচ বছর মেয়াদ ক্ষমতায় থাকার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে সরকারবিরোধীদের চরম দমনপীড়ন অবলম্বন করে দেশ পরিচালনা করছে। সব মহল থেকে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রবল তাগিদ থাকলেও সরকার নিজের অবস্থান আরো শক্তিশালী করার অপকৌশল হিসেবে এবার মাঠে নেমেছে পৌরসভার নির্বাচন নিয়ে। একইভাবে অপকৌশলের অংশ হিসেবে পৌরসভায় শুধু চেয়ারম্যান পদ দলীয়ভাবে ও অন্যান্য সদস্য নির্দলীয় স্থানীয়ভাবে নির্বাচনের নতুন নিয়ম চালু করেছে।
সরকার পক্ষের কেউ কেউ বলছেন, এ নির্বাচন নিরপেক্ষভাবে আয়োজন করে সরকার প্রমাণ করবে, শেখ হাসিনার দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব। কিন্তু চার দিকে যে আলামত ইতোমধ্যেই দেখা যাচ্ছে, তা হওয়ার নয়। বরং এ সরকার পৌর নির্বাচনেও এর অতীত ধারা অনুসরণ করে জোরজবরদস্তি ও ভোট ডাকাতি যথারীতি চালাবে বলেই মনে হয়। কেমন চলবে বা চলছে এবারের এই পৌরসভা নির্বাচন, তা ইতোমধ্যেই কিছুটা হলেও আঁচ করা যাচ্ছে গণমাধ্যমে আসা ছিটোফোঁটা কিছু নিয়ম-অনিয়মের খবর থেকে। গত ১০ ডিসেম্বর দেশের প্রথম সারির ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারে প্রকাশিত একটি খবর থেকে নির্বাচন পরিস্থিতি কোন দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তা আন্দাজ-অনুমান করতে কারো অসুবিধার কথা নয়।
এই দৈনিকটি এর প্রথম পৃষ্ঠায় ‘অলমোস্ট অল ইলেকটেড আনঅপোজড ইন ফেনী ডিস্ট্রিক্ট ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে এবং ‘ক্রেডিট গোজ টু নিজাম হাজারী’ উপশিরোনামে যে খবর ছাপা হয়, তা পড়ে রীতিমতো বিস্মৃত হই, একই সাথে প্রশ্ন জাগেÑ এ কেমন নির্বাচন? এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এমনকি যদিও আবুল কায়েস রিপন ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদটি ধারণ করেন, তিনি ফেনীর মেয়র নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। কেননা, স্থানীয় আওয়ামী লীগ এমপির লোকেরা তাকে তা করতে দেয়নি। রিপন ফেনী আওয়ামী লীগের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, ‘মনে হয় ফেনী বাংলাদেশের সব জায়গা থেকে আলাদা। কারণ, স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসন তার মাধ্যমে (আওয়ামী লীগ এমপি নিজাম হাজারী)। সবাই জানেন, তিনি কে। আমি তার নাম উল্লেখ করতে চাই না... কারণ, আমাকে এখানে বসবাস করতে হবে।’
রিপন বলেন, তিনি তার চার সহযোগীকে নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিসের দিকে যাচ্ছিলেন গত ৩ ডিসেম্বর দুপুরের দিকে। সেদিন ছিল মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন। কিন্তু বলেন, ‘এরা আমাকে এই বলে হুমকি দেয়, মনোনয়ন দাখিল করলে আমাকে চরম পরিণতি মোকাবেলা করতে হবে। ফলে আমাকে ফিরে আসতে হয়।’
নিজাম হাজারী ও তার লোকেরা কী করে ফেনী পৌরসভার নির্বাচন ম্যানিপুলেট করছেন, এটি এরই একটি উদাহরণÑ পত্রিকাটিকে এ কথা জানিয়েছেন ফেনী পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কামাল উদ্দিন মাহমুদ। ৭ ডিসেম্বর তাকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে বাধ্য করা হয়। ফেনী পৌরসভার ১৮ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ১৬ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। ওয়ার্ড নম্বর ১৮ ও ১৪-তে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে হুমকির মুখে অনেকটা সাহস নিয়ে এখনো প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন। এরা দু’জন অওয়ামী লীগের নন। তবে প্রার্থিতা বহাল রাখলেও এরা এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে তাদের বন্ধুরা ডেইলি স্টার প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন।
প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, পরশুরাম পৌরসভায় আওয়ামী লীগের সব কাউন্সিলর প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। কারণ, সেখানে তাদের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নেই। স্থানীয় লোকেরা জানিয়েছেন, চারটি ওয়ার্ডে বেশ কয়েকজন নন-আওয়ামী লীগার প্রার্থী ছিলেন, কিন্তু তাদেরকে বাধ্য করা হয় নমিনেশন প্রত্যাহার করতে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত আওয়ামী লীগ এমপি নিজাম হাজারীকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও বানানো কাহিনী।
ডেইলি স্টার প্রতিনিধিকে কামাল বলেন, ‘আপনি অবাক হবেন, আমাকে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে এবং আমাকে অফিসের সময়ের পর ৫টা ৪৮ মিনিটের সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে নিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে বাধ্য করা হয়। আমি পরপর গত তিন মেয়াদের নির্বাচনে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছি। কিন্তু এবার আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতাই করতে পারিনি।’ কামাল আরো বলেন, আমার বাবা ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের ১০ বছর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ছিলেন। শুধু আমি ছাড়া আমার পরিবারের বাকি সবাই আওয়ামী লীগ রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেয়া হয়নি, কারণ স্থানীয় এমপির আশীর্বাদপুষ্ট প্রার্থীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনে জয়ী হওয়ার সুযোগ করে দেয়া।
উল্লিখিত প্রতিবেদনের প্রতিবেদক তাকে জিজ্ঞেস করেন, তিনি এ ব্যাপারে পুলিশ ও প্রশাসনের কোনো সহায়তা চেয়েছিলেন কি না? তিনি দাবি করেন, এরা আমাকে পরামর্শ দেন, আমি যেন প্রতিকূল পরিবেশে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করি। তিনি বলেন, ‘আমার ভাইকে নিয়ে আমি ডিসি হুমায়ুন কবীর এবং অতিরিক্ত ডিসি এনামুল হকের কাছে গিয়েছিলাম, যিনি নিজে একজন রিটার্নিং অফিসার। গিয়েছিলাম এ অনুরোধ জানাতে আমাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেয়ার বিষয়টি যেন পুনর্বিবেচনা করে দেখেন, কেননা আমাকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে বাধ্য করা হয়েছে। কিন্তু এরা বলেন, এ ব্যাপারে এদের কিছুই করার নেই।
কী ধরনের হুমকি দেয়া হয়েছে জানতে চাইলে কামাল বলেন, ‘এরা বারবার আমাকে কেবল ফোনকল দিয়ে আমার সন্তানদের স্কুলে যাওয়ার পথে অপহরণের হুমকি দেয়। এরা আমাকে প্রশ্ন করেÑ আমি আমার সন্তানের বিনিময়ে কেন নির্বাচনে বিজয় প্রত্যাশা করছি? এরা বলে, এরা আমার স্ত্রীর বিরুদ্ধে হেরোইন রাখার মিথ্যা মামলা দেবে।
কামাল আরো জানান, গত ২ ডিসেম্বর রাতে মুখোশ পরা পাঁচ-ছয়জনের একটি দল আমার বাড়াহিপুর বাড়িতে গুলি চালিয়ে জানালা ভাঙচুর করে। এরপর স্থানীয়রা আমাকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর পরামর্শ দেন।
ফেনী সদর পৌরসভার নির্বাচনে যে দুই নন-আওয়ামী লীগার কাউন্সিলে পদপ্রার্থী রয়েছেন, তাদের একজন নুরুল ইসলাম। তিনি ডেইলি স্টার প্রতিনিধিকে জানান, যদিও হাজারীর লোকজনকে এড়িয়ে তিনি মনোনয়ন দাখিল করতে সক্ষম হয়েছেন, তাকে পালিয়ে থাকতে বাধ্য করা হচ্ছে। মুখসেদুল ইসলাম টিপু বলেছেন, ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদের জন্য তিনি মনোনয়ন দাখিল করেছিলেন। কিন্তু তাকে মনোনয়ন প্রত্যাহারে বাধ্য করা হয়। কেননা, তা না করলে তার ছোট ভাইকে অপহরণের হুমকি দেয়া হয়। টিপু বলেন, ‘ফেনীর সবাই জানে, এরা কারা। কিন্তু পরিণতির কথা ভেবে আমি তাদের নাম উচ্চারণ করতে চাই না।’ টিপু আরো বলেন, ফেনী দেশের অন্যান্য স্থান থেকে আলাদা। এখানকার পুলিশ আর প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করে প্রভাবশালীরা। সে কারণে আমি পুলিশ কিংবা নির্বাচনী কর্মকর্তার কাছে কোনো লিখিত অভিযোগ দিইনি। প্রভাবশালী লোকদের পাশাপাশি পুলিশও নির্দোষ-নিরপরাধ মানুষকে হয়রানি করে।
দাগনভূঞার বিএনপির একমাত্র মেয়র প্রার্থী সাইদুর রহমান স্বপনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। ফেনীর তিনটি পৌরসভার মধ্যে এই একটিতেই বিএনপি মেয়র প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ করা হয়েছে। তিনি বলেন, পুলিশ এসকট নিয়ে মনোনয়ন দাখিল করার পর তিনি এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কারণ, হাজারীর লোকেরা তাকে অব্যাহতভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমি আমার বাড়িতে তালা লাগিয়ে দিয়েছি। বাবা-মা, স্ত্রী ও সন্তানদের অন্য গ্রামে সরিয়ে নিয়েছি। কারণ, আমি মনোনয়ন প্রত্যাহার না করলে এরা আমার পরিবারের সদস্যদের ওপর আঘাত হানার হুমকি দিচ্ছে।
সুপ্রিয় পাঠক, ডেইলি স্টারের সরেজমিন রিপোর্টটির বিষয়বস্তুর বিস্তারিত তুলে ধরতে গিয়ে আপনার বিরক্তির কারণ হতে পারে, সে জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। তবে আসন্ন পৌরসভার নির্বাচন কী আকারে, কী প্রকারে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, তা সম্যক উপলব্ধির জন্য এই বিস্তারিতে যাওয়াটা প্রয়োজন ছিল বলে মনে হয়েছে আমার কাছে। এর বাইরে এমন অনেক প্রতিবেদন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে, যা আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, এমনটি আশা করা সময়ের সাথে শুধু ফিকে হয়ে আসছে।
শুরুতেই সন্দেহ দেখা দেয় পৌরসভা নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নিয়ে। যখন দেখা গেল যথেষ্ট সংখ্যক নির্বাচনী কর্মকর্তা থাকতে সরকার প্রশাসন থেকে রিটার্নিং অফিসার নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়। বিষয়টি প্রবল সমালোচিত হলেও সরকার এ সিদ্ধান্ত থেকে সরেনি। অস্বীকার করার উপায় নেই, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই বিরোধী দলের সম্ভাবনাময় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের মামলা দায়ের করে নির্বাচনী মাঠ থেকে সরিয়ে রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করে। এবার এ প্রবণতা শতভাগ তীব্রতার সাথে সরকার চালাচ্ছে। ফলে বিএনপির অনেক সম্ভাবনাময় প্রার্থী নির্বাচনী মাঠ থেকে ইতোমধ্যে সরে গেছেন কিংবা নির্বাচনে অংশ নেয়ার মতো কোনো সুযোগ তাদের নেই। অতি সম্প্রতি এক দিকে যখন পৌরসভা নির্বাচনের ডামাডোল, অন্য দিকে সরকার দেশজুড়ে চালাচ্ছে সরকারবিরোধীদের গণগ্রেফতার। উদ্দেশ্য, নির্বাচনে বিএনপি বা অন্য কোনো সরকারবিরোধী দল-মতের প্রার্থী মাঠে থাকলেও তার পক্ষে নির্বাচনী প্রচার চালানোর মতো কোনো নেতাকর্মীকে যেন খুঁজে পাওয়া না যায়। খবরে প্রকাশ, এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা এই নির্বিচার গণগ্রেফতারের শিকার হয়েছেন ১৩ হাজারেরও বেশি সরকারবিরোধী দলের নেতাকর্মী। এ অভিযান অব্যাহত থাকায় নির্বাচনী প্রচারাভিযানে এক ধরনের ভাটা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে শতাধিক পৌরসভা নির্বাচনে সরকারদলীয় প্রার্থীরাই কার্যত একতরফা নির্বাচনী প্রচারাভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত বিএনপি প্রার্থীরা এ ধরনের অসম প্লেয়িং ফিল্ডে নির্বাচনে থাকতে পারবেন কি, সে আশঙ্কা ইতোমধ্যেই বিএনপির নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমনটি অব্যাহত থাকলে কার্যত এ নির্বাচন হয়তো প্রহসনেরই রূপ নেবে।
সর্ব সাম্প্রতিক খবরে যতটুকু জানা যাচ্ছে, তাতে মনে হয় উপজেলা ও সিটি করপোরেশনের পথেই যাচ্ছে আসন্ন পৌর নির্বাচন। গত বছর ও চলতি বছরে অনুষ্ঠিত উপজেলা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ব্যালটবাক্স ছিনতাই, জাল ভোট, সঙ্ঘাত, সহিংসতা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। নির্বাচনী কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে, রাতভর ব্যালট পেপারে সিল মেরে সরকারি দলের প্রার্থীদের বিজয়ী করা হয়। এ ব্যাপারে প্রচুর অভিযোগ ও প্রমাণ থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি নির্বাচন কমিশন। দায়সারা বক্তব্য দিয়ে নিজেদের নিরপেক্ষ প্রমাণ করাই ছিল ইসির কৌশল। একইভাবে আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে সরকার সমর্থিতরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে ইসি কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। পোলিং অফিসারদের নিয়ে বৈঠক করেন সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক। এ ছাড়াও বেশির ভাগ নির্বাচনী এলাকায় মন্ত্রী ও এমপিরা নানা কৌশলে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। গণমাধ্যমগুলোতে এর আংশিক খবর প্রকাশিত হচ্ছে। তবুও এতেই সুস্পষ্ট আভাস পাওয়া যাচ্ছে, সরকারি দলের মন্ত্রী-এমপিরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করে চলেছেন প্রায় প্রকাশ্যেই। এর পরও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে বরং বিভিন্নভাবে তাদের সহযোগিতা করা হচ্ছে। সারা দেশে রিটার্নিং অফিসারদের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা থাকলেও দু-একটি জায়গায় তাদের প্রত্যাহার করে ইসি নিজেদের নিরপেক্ষ প্রমাণের চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যেই জনমনে স্থির বিশ্বাস জন্মেছে, সরকারের তল্পিবাহক এই ইসি দিয়ে আর যাই হোক নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু পৌর নির্বাচন কোনো মতেই সম্ভব হবে না। এর প্রতিকারের কোনো আভাসও পাচ্ছে না দেশের মানুষ।

No comments

Powered by Blogger.