শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস

আজ ১৪ ডিসেম্বর, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। অত্যন্ত কাপুরুষতাপূর্ণ এক নৃশংস হত্যাযজ্ঞের স্মৃতি নিয়ে ফিরে ফিরে আসে এই দিন। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাদের স্থানীয় সহযোগীদের প্রত্যক্ষ মদদে বুদ্ধিজীবী হত্যাযজ্ঞের যে নারকীয় দৃষ্টান্ত রেখে গেছে, তেমন কাপুরুষতা বিশ্বের ইতিহাসে অত্যন্ত বিরল। আজ আমরা শোকার্ত ও সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করছি অধ্যাপক জি সি দেব, মুনীর চৌধুরী, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, ড. মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, রাশেদুল হাসান, ড. আনোয়ার পাশা, সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন, শহীদুল্লা কায়সার, নিজামউদ্দীন আহমেদ, গিয়াসউদ্দিন আহমদ, ডা. ফজলে রাব্বী, ডা. আলীম চৌধুরী, সাংবাদিক-সাহিত্যিক সেলিনা পারভীনসহ সব শহীদ বুদ্ধিজীবীকে। সহমর্মিতা জানাচ্ছি শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের স্বজনদের প্রতি। স্বাধীন বাংলাদেশকে মেধা ও মননে পঙ্গু করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে পাকিস্তানি বাহিনীর পরিকল্পিত বুদ্ধিজীবী নিধনযজ্ঞে সহযোগী হয়েছিল এ দেশেরই কিছু মানুষ—রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্যরা। তাদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ছাড়া বুদ্ধিজীবীদের বেছে বেছে হত্যা করা পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষে অসম্ভব ছিল।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার-প্রক্রিয়ায় বুদ্ধিজীবীদের হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরাও আছেন। কবি মেহেরুননিসা ও সাংবাদিক আবু তালেব হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অন্যান্য অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৩ সালে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। সুনির্দিষ্টভাবে বুদ্ধিজীবী হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় ও আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে গত মাসে। মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় আপিল বিভাগে বিচারাধীন, শিগগিরই এর চূড়ান্ত নিষ্পত্তি আশা করা হচ্ছে। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন ২০১৩ সালে। তাঁদের দেশে ফিরিয়ে এনে দণ্ড কার্যকর করার উদ্যোগ নেওয়া উচিত। বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের বিচার ও সব ঘাতকের দণ্ড কার্যকর করা হোক।

No comments

Powered by Blogger.