ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে সৌদি নারী সমাজ

সৌদি আরবের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার প্রয়োগ করল সৌদি নারীরা। ইসলামী প্রজাতন্ত্রের নামে পরিচালিত সৌদি রাজতন্ত্রের নারীরা ইসলাম স্বীকৃত অধিকার থেকে বঞ্চিত দীর্ঘ দিন। শাসকগোষ্ঠী পুরুষদের নানা অনাচার সহ্য করা হলেও নারীদের ওপর নেমে আসে কঠোর শাস্তি। প্রয়াত বাদশাহ আবদুল্লাহর নেয়া সংস্কার উদ্যোগের পর ধীরে ধীরে বদলে গেছে নারীদের অবস্থান। বাদশাহ আবদুল্লাহ তার সংস্কার উদ্যোগে বলেছিলেন, সৌদি আরবের নারীদের সঠিক মতামত ও উপদেশ দেয়ার মতো যে যোগ্যতা আছে, তা তারা দেখিয়েছেন। ৩০ জানুয়ারি বাদশাহ মারা যাওয়ার আগে দেশটির সর্বোচ্চ উপদেষ্টা পরিষদ শূরা কাউন্সিলে ৩০ জন নারীকে নিয়োগ দিয়ে যান। এছাড়া বর্তমানে কর্পোরেট অফিসের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক পদ, সরকারি আমলা ও আইনজীবী হতে পারবেন। এবারের নির্বাচনে নারী প্রার্থীদের হারজিত যাই হোক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করাকেই বড় জয় মনে করছেন তারা। একজন প্রার্থী আমাল বাদরেলদিন আর সাওয়ারি (৬০) বলেন, ‘সত্যি বলতে কী- আমি জেতার জন্য লড়ছি না। আমি মনে করি ভোটে দাঁড়ানোর মাধ্যমেই আমি জয়ী হয়েছি।’ বার্তা সংস্থা এএফপির কাছে তিনি কুরআনের আয়াত তেলায়াত করে বলেন, ‘নির্বাচনী প্রার্থী হওয়াসহ ইসলাম নারীদের অনেক অধিকার দিয়েছে।’ নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি অনেক সমর্থন ও সহযোগিতা পেয়েছেন বলে জানান। এখনও যা করতে মানা
গাড়ি চালানো : সৌদি আরব পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেখানে নারীদের গাড়ি চালানোর অধিকার নেই। নারীরা গাড়ি চালালে তারা বাইরে পুরুষের সঙ্গে মেলামেশার সুযোগ পেয়ে যাবেন এ যুক্তিতে তা নিষিদ্ধ। গত শতকের নব্বইয়ের দশক থেকে নারীদের গাড়ি চালানোর অধিকারের দাবিতে একটি সংগঠন সচেতনতামূলক প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।
একাকী ভ্রমণ : পরিবারের বাইরে অন্য কোনো পুরুষের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি নেই সৌদি নারীদের। অবশ্যই পরিবারের কোনো পুরুষ অভিভাবকের সঙ্গে বের হতে হয় তাদের। সৌদি আরবের বেশির ভাগ বাড়িতেই নারী ও পুরুষদের জন্য রয়েছে আলাদা প্রবেশপথ। শুধু বাড়িতেই নয়, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি কর্মস্থলেও রয়েছে আলাদা ব্যবস্থা।
পোশাক রীতি : সৌদি নারীকে কঠোর পর্দার মধ্যে চলতে হয়। কেবল চোখ ও হাতছাড়া আপাদমস্তক ঢেকে রাখতে হয়। ধর্মীয় পুলিশ বিষয়টি নজরদারি করে।
নিজের পছন্দে বিয়ে : সৌদি নারীরা নিজে নিজে বিয়ে করতে পারেন না। এজন্য পরিবারের অভিভাবকের অনুমতি ও সম্মতি থাকতে হয়।
ভিন পুরুষের সঙ্গে দেখা : পরিবারের বাইরের কোনো পুরুষের সঙ্গে সৌদি নারীদের সাক্ষাতের অধিকার নেই। রেস্টুরেন্ট বা কোনো উন্মুক্ত স্থানে গেলে সৌদি নারীদের সঙ্গে পরিবারের একজন পুরুষ সদস্য থাকা বাধ্যতামূলক।
চাকরি : পরিবারের অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া নারীদের চাকরি নিষিদ্ধ। এছাড়া সব ধরনের চাকরি তাদের জন্য উন্মুক্ত নয়।
উত্তরাধিকার : উত্তরাধিকার হিসেবে নারীরা পুরুষের সমান সম্পদ পাবেন না।
বিবাহ বিচ্ছেদ : একজন পুরুষকে সহজেই তালাক দিতে পারবেন না নারীরা। যদিও পুরুষরা একজন নারীকে সহজেই তালাক দিতে পারেন।
যা করতে পারবেন
নির্বাহী পদ : কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী হিসেবে নারীরা কাজ করতে পারবেন।
বিয়ে : যুবতী নারীরা বিয়ের জন্য অভিভাবককে চাপ দিতে পারবেন। টাইমস অব ইন্ডিয়া।
এক পা দু পা করে ভোটের মাঠে নারী
জাতি, ধর্ম, বর্ণ লিঙ্গ- মানবাধিকার প্রত্যেকের এক সমান। এমন নীতিমালার আলোকে মানুষের অধিকার রক্ষার্থে তৈরি হয়েছে ‘মানবাধিকার সংগঠন’। কিন্তু বাস্তব প্রয়োগের ক্ষেত্রে এখনও সেই পুরুষপ্রীতি, লিঙ্গ ভেদের পক্ষদুষ্ট দৃষ্টি। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার বেলায় নানা নামধারী এসব সংগঠয়নও কেন গড়িমসি করে। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম থেকে আজ অবধি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নারীদের ভোটাধিকার পেতে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। সর্বশেষ সেই সংগ্রামে সফল হয়েছে সৌদি আরব। ২০১৫ সালের (১২ ডিসেম্বর) প্রথমবারের মতো ভোট প্রদান ও নির্বাচনে অংশগগ্রহণ করেছে সৌদি নারীরা। যুগান্তর পাঠকদের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নারীর ভোটাধিকার আইনের ইতিহাস তুলে ধরা হল
১৮৯৩ : লর্ড গ্লাসগো কর্তৃক ভোটাধিকার আইন স্বাক্ষরিত হয় ১৮৯৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর, ফলে পুরুষের পাশাপাশি ভোটের অধিকার পায় নিউজিল্যান্ডের নারীরা। কিন্তু আইনি জটিলতায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়া অবধি (১৯১৯ সাল) নারীদের অপেক্ষা করতে হয়।
১৯০২ : নিউজিল্যান্ডের আইনের অনুকরণে ভোটাধিকার পায় অস্ট্রীয় নারীরা।
১৯০৬ : বিশ্বের প্রথম ভোটাধিকার পায় ফিনল্যান্ডের নারীরা। ১৯১৩ সালে নরওয়ে ও ১৯১৯ সালে সুইডেনের নারীরা ভোটাধিকার পায়।
১৯১৮ : অন্যান্য দেশের নারীদের এগিয়ে যাওয়ার পদযাত্রায় জার্মানি ও রাশিয়া অংশগ্রহণ করে।
১৯১৯ : লুক্সেমবার্গ ও নেদারল্যান্ডস নারীদের ভোটাধিকার প্রদান করে।
১৯২৮ : ১৯১৮ সালে ৩০ বছরের অধিক নারীদের ভোটাধিকার প্রদান করে ব্রিটেন। কিন্তু ১০ বছর পরে তার বাস্তবায়ন হয়।
১৯৩৪ : মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের প্রচেষ্টায় প্রথম মুসলিম দেশ হিসেবে তুরস্কের নারীরা ভোটাধিকার পায়।
১৯৪৪ : মানবাধিকারের দেশ হিসেবে পরিচিত ফ্রান্সের নারীরা ভোটের অধিকার পায়।
১৯৭৬ : ১৯৩৩ সালে শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রিধারী নারীদের ভোটাধিকার প্রদান করে পোল্যান্ড এবং ১৯৭৬ সালে সে শর্ত প্রত্যাহার করে সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
১৯৯৩ : ইউরোপের শেষ দেশ হিসেবে মলদোভার নারীরা সব নাগরিক অধিকার পায়।
১৯৯৪ : ১৯৩০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেত নারীরা ভোটাধিকার পায় এবং ১৯৯৪ সালে জাতি বর্ণ নির্বিশেষে নারীদের সব অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯৯৪-২০০৬ : ১৯৯৪ সালে ওমান, ১৯৯৯ সালে কাতার, ২০০১ সালে বাহরাইন, ২০০৫ সালে কুয়েত এবং ২০০৬ সালে ইউএই’র নারীরা ভোটাধিকার পান।

No comments

Powered by Blogger.