ডিবির গোপন ডিএনএ পরীক্ষা! by নেসারুল হক খোকন ও ওবায়েদ অংশুমান

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি। এদিন সকালে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসা থেকে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনীর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিয়মানুযায়ী ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত প্রয়োজনীয় সব ধরনের আলামত সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করাসহ ডিএনএ পরীক্ষা করা উচিত ছিল। কিন্তু রহস্যজনক কারণে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের রাসায়নিক গুরুত্বপূর্ণ এ পরীক্ষা করানো নিয়ে প্রথম থেকেই পদে পদে দায়িত্বহীনতার ছাপ রয়েছে। এমনকি যুগান্তরের অনুসন্ধান তথ্য অনুযায়ী, মহলবিশেষ মামলাটির মোটিভ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে নিজেদের ইচ্ছামতো ডিএনএ রিপোর্ট নেয়ার গোপন চেষ্টাও করেছিল। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তার দেয়া চাঞ্চল্যকর বক্তব্যের ভিডিও ফুটেজ যুগান্তরের হাতে রয়েছে।
সূত্র বলছে, সাগর-রুনী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে চোর জড়িত ছিল কিনা তা যাচাই করতে গোপনে ডিএনএ পরীক্ষা করায় ডিবি পুলিশ। ফলস্বরূপ রিপোর্টে প্রমাণ মেলে, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে চোরদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। পরে নিজেদের ব্যর্থতার বিষয়টি তুলে ধরে তদন্ত সংস্থাটি উচ্চ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে। ওই সংস্থার এক শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা যুগান্তরের কাছে স্বীকার করেন, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে চোর কিংবা ডাকাত জড়িত ছিল না। একই সঙ্গে আদালতের অনুমতি ছাড়া আনঅফিসিয়ালি ডিএনএ পরীক্ষা করানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেন তিনি।
এদিকে এভাবে গোপনে ডিএনএ পরীক্ষা করে দেয়ার কথা সরাসরি অস্বীকার করেন ঢাকা মেডেকিল কলেজ হাসপাতালের ডিএনএ ল্যাবের এক শীর্ষ কর্মকর্তা। বরং তার দাবি, তদন্ত সংস্থাটি নিজেদের মতো করে ডিএনএ পরীক্ষা করানোর জন্য তাকে নানাভাবে চাপ দেয়।
এ বিষয়ে আইনজ্ঞদের অভিমত, আদালতের অনুমতি ছাড়া ডিএনএ পরীক্ষা করানো বেআইনি। ফৌজদারি কার্যবিধি ও পুলিশ প্রোবিধান অনুযায়ী, মামলার তদন্তের স্বার্থে আলামত কিংবা রাসায়নিক যে কোনো ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হলে আদালতের অনুমতি নিতে বাধ্য তদন্ত সংস্থা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক যুগান্তরকে বলেন, ‘আনঅফিসিয়ালি যদি পুলিশ ডিএনএ পরীক্ষা করেও থাকে তাতে তদন্তের কী কোনো ক্ষতি হয়েছে? কোর্টে আসা-যাওয়া, প্রেয়ার দেয়া অনেক ঝামেলা। দেরি হয়। আর এসব ক্ষেত্রে সবকিছু কোর্টের পারমিশন নিয়ে করতে হবে এমন নয়। কারণ এগুলো ম্যান্ডাটরি না। এতে তদন্তের কোনো ক্ষতি হয়েছে কিনা সেটাই বিবেচ্য বিষয়।’ তবে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান আইন কর্মকর্তা (পিপি) আবদুল্লাহ আবু যুগান্তরকে বলেন, ‘ডিএনএ টেস্ট করতে হলে আদালতের অনুমতি নিতে হবে। এটাই নিয়ম। র‌্যাব আদালতের অনুমতি নিয়েই সাগর-রুনী হত্যা মামলায় ডিএনএ টেস্ট করে। তবে ডিবি পুলিশ আদালতের অনুমতি না নিয়ে ডিএনএ পরীক্ষা করে থাকলে সে ক্ষেত্রে আইনের ব্যত্যয় ঘটেছে বলে মনে করি।’
চোর প্রমাণের চেষ্টা ব্যর্থ : হত্যাকাণ্ডের পর শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ ছয় দিন মামলাটি তদন্ত করে। পরে মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তরিত হয়। যদিও ঘটনার পরপরই ছায়া তদন্ত শুরু করে সংস্থাটি। তদন্তের সঙ্গে যুক্ত একাধিক শীর্ষস্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তার দাবি, ঘটনার রহস্য উন্মোচনে তখন ডিবির সব ইউনিট কাজ শুরু করে। তাদের তদন্তে গ্রিল কাটা চোরের বিষয়টি গুরুত্ব পায়। এমনকি সংস্থাটি তিন-চার জন গ্রিল কাটা চোরকে আটক করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদও করে। এর মধ্যে এক চোরের কাছ থেকে গ্রিল কাটার যন্ত্রপাতিসহ একটি প্লাস্টিকের ব্যাগ (সারের বস্তা) জব্দ করে তারা। আর ওই ব্যাগের গায়ে রক্তের দাগ ছিল। ডিবির কর্মকর্তারা আরও জানান, আটক চোররা জানিয়েছিল, ঘটনার দিন রাতে তারাও পশ্চিম রাজাবারের এলাকায় চুরি করতে গিয়েছিল। তাদের কাছ থেকে এমন তথ্য জানার পর ডিবির টিম ধারণা করেছিল, সাগর-রুনী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে চোরদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে তারা সাগরদের বাসার গ্রিল দিয়ে এক চোরকে ঢুকিয়ে পরীক্ষাও করেছিল। জব্দ করা চটের ব্যাগের গায়ে থাকা রক্তের সঙ্গে রুনীদের বাসা থেকে উদ্ধার করা রক্তমাখা জামা, স্যান্ডেলে লেগে থাকা রক্তের ডিএনএ মিল আছে কিনা তা পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রথমে ব্যাগের গায়ে থাকা রক্ত পরীক্ষা করে সিআইডি। তারা রিপোর্ট দেয়, ওই ব্যাগের থাকা রক্ত মানুষের। পরে রক্তমাখা জামাসহ জব্দ করা ৭টি আলামত ও চোরদের ব্যাগসহ গ্রিল কাটার যন্ত্রপাতি ঢাকা মেডিকেলের ডিএনএ ল্যাবে পাঠানো হয়। ল্যাব পরীক্ষা করে রিপোর্ট দেয়, ব্যাগের গায়ে লেগে থাকা রক্ত মানুষের নয়। ঘটনাস্থল থেকে জব্দ করা আলামতের ডিএনএ’র সঙ্গে ব্যাগের রক্তের ডিএনএ’র কোনো মিলও নেই। এ রিপোর্টের মধ্য দিয়ে ঘটনার পেছনের চোরকে জড়িত করার চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়।
এদিকে ডিএনএ পরীক্ষা করানোর পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এমন একজন পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন ‘আটক করা এক চোরের কাছ থেকে ব্যাগ পেয়েছিলাম। মানে প্লাস্টিকের ব্যাগ, বাজারের ব্যাগ। ওইটার ভেতরে পাওয়া গিয়েছিল গ্রিল কাটার যন্ত্রপাতি। ব্যাগের গায়ে শুকিয়ে যাওয়া রক্তের দাগও ছিল। গ্রিল কাটার জিনিসের গায়েও রক্ত ছিল। এটা আমরা সিআইডিকে যখন দেখালাম, তারা রিপোর্ট দিল, এটা হিউম্যান ব্লাড। আমরা এটা তখন ঢাকা মেডিকেলের ডিএনএ ল্যাবে নিয়ে গেলাম। খুব গোপনে, আনঅফিসিয়াল পরীক্ষা করানোর জন্য। আবার বাসা (ঘটনাস্থল) থেকে পাওয়া স্যান্ডেলসহ বেশ কিছু আলামত দিলাম। কিন্তু পরীক্ষা করে ডিএনএ ল্যাব আমাদের রিপোর্ট দিল, নো করেসপন্ডেস ডিএনএ (কোনো ডিএনএ পাওয়া যায়নি)। এতে করে আমরা চরম হতাশ হলাম।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিবির এই শীর্ষ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘চোরের কাছ থেকে জব্দ করা ব্যাগের গায়ে ব্লাড ছিল। সেখানে তো ডিএনএ পাওয়া যাবেই, তা মানুষের থাকুক আর গরুর থাকুক। আমারও তো প্রশ্ন, ব্যাগের গায়ে রক্ত থাকলেও তারা বলল কোনো ডিএনএ পাওয়া যায়নি। কিন্তু সিআইডি বলে দিয়েছে এটি হিউম্যান ব্ল্যাড। আমাদের প্ল্যান ছিল যদি ব্লাড ম্যাচ করে, তখন অফিসিয়ালি ডিএনএ টেস্ট করানোর। টাকা দিয়েই করেছিলাম। ৪০ হাজার টাকা লেগেছিল। ৬টা বা ৭টা সেম্পল করিয়েছিলাম।’ এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে চোর জড়িত ছিল কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সত্য কথা বলতে কী, ডিবির সব টিম কাজ করেছে আন্তরিকতার সঙ্গে। কিন্তু আমরা ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারিনি। তবে আশাবাদী ছিলাম, চোররা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকতে পারে। কিন্তু ডিএনএ টেস্ট করানোর পর চোরের বিষয়টি আমরা কনভিন্স হতে পারিনি।
ওপর মহলের চাপ : অনুসন্ধানে জানা যায়, ডিবিতে মামলা থাকাকালীন তদন্তের সঙ্গে যুক্ত ডিবির তৎকালীন দু’জন সহকারী কমিশনার (এসি) ডিএনএ টেস্ট করানোর জন্য ঢাকা মেডিকেলের ডিএনএ ল্যাবে যান। আর ল্যাবের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে যেয়ে প্রস্তাব দেন, ডিবি যেভাবে বলবে সেভাবে ডিএনএ রিপোর্ট দিতে হবে। যদি তাদের মতো করে রিপোর্ট আসে তাহলে তারা পরে আদালতের অনুমতি নিয়ে সরকারিভাবে ডিএনএ পরীক্ষা করাবে। এমনকি ওই দু’জন সহকারী কমিশনার ল্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে এও বলেন, ‘তাদের ওপরে অনেক চাপ রয়েছে। যে কোনো মূল্যে তাদের মতো করে ডিএনএ পরীক্ষা করে দিতে হবে।’ পরে তাদের (ডিবির কর্মকর্তা) ডিএনএ ল্যাব কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয়, আদালতের অনুমতি ছাড়া কোনো ডিএনএ পরীক্ষা তারা করতে পারবে না।
এদিকে ডিএনএ ল্যাবের যে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে ডিবি পরীক্ষা করানোর প্রস্তাব দিয়েছিল তার মুখোমুখি হয় যুগান্তরের অনুসন্ধানী টিম।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘ডিবির দু’জন কর্মকর্তা আমার কাছে ডিএনএ পরীক্ষা করানোর জন্য এসেছিল। এটা সত্য। তারা দু’জনই ডিবির এসি ছিলেন। এসে আমাকে বললেন, ‘স্যার, আমাদের ওপর মহলের চাপ রয়েছে। আনঅফিসিয়ালি ডিএনএ টেস্ট করে দিতে হবে। আমরা যেভাবে চাইব সেভাবে রিপোর্ট দিতে হবে।’ এ কথা শোনার পর তাদের বললাম, ‘আমার পক্ষে কোনোভাবে তা করা সম্ভব না। আদালতের অনুমতি ছাড়া ডিএনএ টেস্ট করানো অসম্ভব।’ ডিএনএ ল্যাবের ওই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ডিবির ওই কর্মকর্তাদের বলেন, ‘সাগর-রুনী হত্যাকাণ্ডটি বড় ধরনের ক্রাইম। তাই আপনারা যদি ল্যাবরেটরির সুবিধা নিতে চান তাহলে অফিসিয়ালি আসতে হবে। অর্থাৎ কী কী আলামত দিচ্ছেন, কোন মামলার আলামত বিস্তারিতভাবে বলতে হবে। তাহলেই আমি এর রিপোর্টটি করে দেব।’
অস্বীকার ল্যাব কর্তৃপক্ষের : ডিবির শীর্ষ কর্মকর্তা ডিএনএ ল্যাব থেকে ডিএনএ পরীক্ষা করানোর কথা স্বেচ্ছায় যুগান্তরের কাছে স্বীকার করেন। এ বিষয়টি জানানো হয় ন্যাশনাল ফরেনসিক ও ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবের প্রধান শরীফ আক্তারুজ্জামানের কাছে। তিনি গত মঙ্গলবার টেলিফোনে যুগান্তরকে বলেন, ‘আমার ল্যাব থেকে সাগর-রুনী হত্যা মামলার কোনো আলামতের ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়নি। যদি কেউ দাবি করেন তা সত্য নয়।’ এখন তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে, ডিবি কোথা থেকে ডিএনএ রিপোর্ট করেছিল।
সাত দিনেই ডিএনএ রিপোর্ট দিতাম : ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থাপিত বাংলাদেশের একমাত্র ডিএনএ (আইনি কাজে ব্যবহারের ক্ষেত্রে) গবেষণাগার ন্যাশনাল ফরেনসিক ও ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাব। ২০০৬ সাল থেকে সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে। সব মামলার আলামতের ডিএনএ টেস্ট করানোর জন্য দেশের আদালতগুলো এখানে পাঠিয়ে দেন। সফলতার সঙ্গে হাজার হাজার মামলার ডিএনএ রিপোর্ট দিতে সক্ষম হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু সাগর-রুনী হত্যা মামলার আলামতের ডিএনএ পরীক্ষা করানোর জন্য কোনো তদন্ত সংস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে এ ল্যাবে আসেনি। বরং ডিএনএ টেস্ট করানোর জন্য সুদূর আমেরিকায় আলামত পাঠিয়েছে র‌্যাব। এর বেশ কিছু রিপোর্টও তারা হাতে পেয়েছে। এসব রিপোর্ট পেতে তাদের সময় লেগেছে গড়ে এক থেকে ২ বছর। অথচ ল্যাবের প্রধান শরীফ আক্তারুজ্জামানের দাবি, সাগর-রুনী হত্যা মামলায় যে কয়টি আলামত আছে তার ডিএনএ পরীক্ষা করে রিপোর্ট দিতে বড়জোর সাত দিন সময় লাগত। খরচও কম। কারণ ঢামেক ডিএনএ ল্যাব একটি আন্তর্জাতিক মানের ল্যাব। আমাদের ডিএনএ ল্যাবে পৃথিবীর নামিদামি এবং পাওয়ারফুল সফটওয়ার ব্যবহার করা হয়, যা আমেরিকার এফবিআই ল্যাবরেটরি থেকে আমাদের দেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানের ডিএনএ পরীক্ষা করতে যা যা প্রয়োজন সবই এখানে আছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএনএ ল্যাবের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘ডিবির কাছ থেকে মামলা যখন র‌্যাবের হাতে যায় তখন ল্যাবের বিষয়ে সব (আনঅফিসিয়ালি আসায় ডিবিকে ফেরত দেয়া) জানতে পারে। এ জন্য তারা আর ডিএনএ ল্যাবে আসেনি।’ তবে ল্যাবের ওই কর্মকর্তার এমন তথ্য তুলে ধরা হয় র‌্যাবের সাবেক একজন শীর্ষ কর্মকর্তার কাছে। যিনি পুরো মামলার তদন্ত প্রক্রিয়া মনিটরিং করেছেন। তিনি যুগান্তরের কাছে দাবি করেন, হত্যা মামলার আলামত পরীক্ষা করার মতো আধুনিক প্রযুক্তি কিংবা দক্ষ জনবল ঢামেক ডিএনএ ল্যাবের নেই। এ জন্য সেখান থেকে ডিএনএ পরীক্ষা করানো হয়নি।
অনেক আগে রহস্য উন্মোচন হতো : ডিএনএ ল্যাবের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার দাবি, বর্তমান আধুনিক প্রযুক্তির যুগে তদন্ত সংস্থাগুলো সাগর-রুনী হত্যা মামলার আলামত সংরক্ষণে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। তদন্ত সংস্থা যদি দক্ষতার সঙ্গে ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংরক্ষণ করে ডিএনএ টেস্ট করাত তাহলে এর রহস্য অনেক আগেই উন্মোচিত হতো। এ প্রসঙ্গে র‌্যাবের সাবেক এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘পুলিশ চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। তারা ঘটনাস্থল থেকে আলামত জব্দ করে ঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে পারেনি। বিশেষ করে ক্রাইম সিন থেকে আলামতগুলো সঠিকভাবে সংরক্ষণ করলে মামলার রহস্য উন্মোচন হতো সহজেই। হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি কিংবা বঁটি থেকে অস্পষ্ট ফিঙ্গার প্রিন্ট এসেছে। আর ডিএনএ ল্যাবের শরীফ আক্তারুজ্জামান বলেন, রুনীর মোবাইল থেকে মেঘ কল দিয়েছে কিনা কিংবা অন্য কেউ কল দিয়ে থাকলে তাও বের করা সম্ভব হতো, যদি মোবাইলটি যত্নসহকারে সংরক্ষণ করা হতো। পুরো ক্রাইমসিন থেকে এমন অনেক আলামত সংরক্ষণ করে পরীক্ষা করলে হত্যারহস্য অনেক আগেই উন্মোচন করা যেত। অনুসন্ধানে জানা যায়, ঘটনাস্থলে থাকা সাগরের মানিব্যাগ, সিগারেটের প্যাকেট, রুনীর ব্যবহৃত দুটি ব্যাগ, গয়নার বাক্সের ব্যাগ, পড়ে থাকা ব্যবহৃত টিস্যু, মাথার কিছু চুল, একটি আপেল ও বিছানার ওপরে থাকা কাগজের টুকরাসহ অনেকগুলো আলামত সংগ্রহ করেনি পুলিশ। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, এসব আলামত সংরক্ষণ করে দ্রুত ডিএনএ পরীক্ষা করলে অনেক সহজে ঘটনার রহস্য উন্মোচন করা যেত।
(রিপোর্টে প্রকাশিত সব সাক্ষাৎকারের অডিও, ভিডিও যুগান্তরের কাছে সংরক্ষিত)

No comments

Powered by Blogger.