খালেদার প্রচারে অব্যাহত হামলা

 বাংলামটরে খালেদার নিরাপত্তা রক্ষীকে রাস্তায় ফেলে পেটায়
সরকার সমর্থকরা। ছবি: মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, মানবজমিন
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গাড়িতে হামলা করেছে ছাত্রলীগ। গতকাল বিকালে রাজধানীর বাংলা মটর কনকর্ড টাওয়ারের সামনে ছাত্রলীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার নেতৃত্বে এ হামলা চালানো হয়। পঞ্চম দিনের মতো বিএনপি সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীদের জন্য গণসংযোগে বের হলে সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের হাতে চতুর্থদিনের মতো হামলার শিকার হয় খালেদা জিয়ার গাড়িবহর। হামলায় খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও সাবেক আইজিপি আবদুল কাইয়ুম, নিরাপত্তা টিম সিএসএফ সদস্য লে. কর্নেল (অব.) সামিউল ও আবদুল মান্নানসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আহত সামিউলকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ও মান্নানকে একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা মশিউর রহমান রুবেল ও মামুন আহমেদসহ নেতাকর্মীরা আগে থেকেই বাংলা মটরে অবস্থান করছিলেন। সবার হাতেই ছিল কমলা রঙের লাঠি। ঠিক সাড়ে ৫টার দিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের গাড়িবহরটি কাওরান বাজার পার হয়ে বাংলা মটরে পৌঁছালে সিগনালে পড়ে। এর পরপরই ছাত্রলীগ নেতাকর্মী লাঠিসোটা ও ইট-পাটকেল নিয়ে গাড়িতে হামলা করে। হামলাকারীরা বিএনপি চেয়ারপারসনকে বহনকারী গাড়ি লক্ষ্য করে একাধিক লাঠি ছুড়ে মারে। গাড়ির বাঁ পাশে বসেছিলেন খালেদা জিয়া। তিনি যেখানে বসেছিলেন তার ঠিক পেছনেই লাঠির আঘাতে গাড়ির কাচ ভেঙে যায়। অল্পের জন্য রক্ষা পান খালেদা জিয়া। এ ছাড়া বহরে থাকা একটি গাড়ির প্রায় সব কাচ লাঠি দিয়ে আঘাত করে ভেঙে ফেলা হয়। ওই গাড়িতে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় নিয়োজিত সিএসএফের সদস্যরা ছিলেন। ছাত্রলীগের কর্মীরা সিএসএফের একাধিক সদস্যকে গাড়ির বাইরে এনে লাঠি দিয়ে মারতে থাকেন। রাস্তায় ফেলে সিএসএফের সদস্য সামিউলকে লাথি মারতে থাকেন এবং লাঠি দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করতে থাকে। ট্রাফিক পুলিশ ও সার্জেন্টের সামনেই ছাত্রলীগ কর্মীরা সিএসএফ সদস্যদের ওপর এ রকম হামলা চালান। হামলাকারীরা স্লোগান দিচ্ছিলেন ‘জয় বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’। প্রত্যক্ষদর্শী ১১১ কাজী নজরুল ইসলামের এমটিবি (মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক) টাওয়ারের সিকিউরিটির দায়িত্বে নিয়োজিত ফিরোজ বলেন, সাড়ে ৫টার দিকে খালেদা জিয়ার গাড়িটি তাদের ভবনের সামনে আসলে সিগনালে পড়ে। এ সময় ৩৫-৪০ জনের একটি দল গাড়িটিতে হামলা করে। হামলাকারীদের প্রত্যেকের হাতে লাল রঙ্গের লাঠি ও হকিস্টিক ছিল। ফিরোজ জানান, এ হামলার সময় তাদের ভবনের ফটক বন্ধ করে দেয়। কয়েক মিনিট ধরে ওই হামলা চলতে থাকে। পরে সিগন্যাল ছেড়ে দিলে দ্রুত গাড়িটি চলে যায়। তিনি আরও জানান, গাড়িটির বামপাশের গ্লাস ভেঙে গেছে। বাংলা মটর পয়েন্টের ইস্কাটন রোডের এক তরমুজ বিক্রেতা বলেন, আমরা দেখলাম হঠাৎ করেই শাহবাগ ও লিংক রোডের দিক থেকে লাঠি হাতে একদল যুবক এসে হামলা চালায়। হামলাকারীরা গাড়ি বহর লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় গাড়ি থেকে নেমে একজন লোক প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলে তাকে বেধড়ক পেটায় হামলাকারীরা। হামলার সময় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য ও ট্রাফিক পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। ওই তরমুজ বিক্রেতা বলেন, ভয়ে আমরা সবকিছু ফেলে পালিয়ে যাই। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, খালেদা জিয়ার গাড়িবহর গণসংযোগে কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ ধরে কাওরান বাজারের দিকে আসছে সেটা জেনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে বেরিয়ে একদল যুবক দৌড়ে বাংলা মটরের দিকে যায়। এ সময় তাদের হাতে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ও লাঠিসোটা ছিল। হামলার কিছুক্ষণ পর তারা বাংলা মটর থেকে শাহবাগে ফিরে আসে। এদিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান রুবেল দাবি করেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের গাড়িবহরে ছাত্রলীগ হামলা করেনি। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ছাত্রলীগ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদপ্রার্থী সাঈদ খোকনের পক্ষে জনসংযোগ করছিল। আমরা নির্বাচনী প্রচারপত্র বিলি করছিলাম। খালেদা জিয়ার সিএসএফের গাড়ি এবং যুবদল, ছাত্রদলের মোটরসাইকেল আমাদের ওপর দিয়ে উঠিয়ে দেয়া হয়। ওই গাড়িবহর থেকে আমাদের ওপর হামলা করা হয়, গুলিবর্ষণও করা হয়। এতে চার ছাত্রলীগকর্মী আহত হয়।’ এর আগে, রোরবার রাজধানীর উত্তরায়, সোমবার কাওরান বাজার এবং মঙ্গলবার ফকিরাপুল এলাকায় খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা চালানো হয়। সোমবার সন্ধ্যায় কারওয়ান বাজারে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলায় পাঁচজন আহত হন। ভাঙচুর করা হয় বেশ কয়েকটি গাড়ির গ্লাস। যুবলীগ ও ছাত্রলীগ ক্যাডাররা এ হামলা চালিয়েছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়। এদিকে বিকাল পৌনে ৫টায় তিনি গুলশানের বাসভবন থেকে জনসংযোগের উদ্দেশে বের হন খালেদা জিয়া। এদিকে হামলার পর বিকাল ৫টা ৫৪ মিনিটে তার গাড়িবহর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পৌঁছায়। এরপর তিনি কার্যালয়ে প্রবেশ করেন।  সেখানে দলের সিনিয়র নেতা ও ‘আদর্শ ঢাকা আন্দোলন’ এর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন খালেদা জিয়া। বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন, উপদেষ্টা ও পুলিশের সাবেক আইজি এমএ কাইয়ুম, আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের আহ্বায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমদ, কমিটির সদস্যসচিব ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শওকত মাহমুদ, সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ অংশ নেন। এদিকে রাত ৯টার পর বিএনপি সমর্থিত বিশিষ্ট নাগরিকদের সংগঠন ‘আদর্শ ঢাকা আন্দোলন’-এর একটি প্রতিনিধি দল প্রধান নির্বাচন কমিশনের বাসভবনে যান। সংগঠনের আহ্বায়ক প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে সদস্য সচিব শওকত মাহমুদ, আবদুল হাই সিকদার, কাদের গনি চৌধুরী ও জাহাঙ্গীর আলম প্রধান এ প্রতিনিধি দলে ছিলেন। তবে তারা সিইসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেননি। ফলে একটি প্রতিবাদ লিপি সিইসির নিরাপত্তা প্রধানের কাছে হস্তান্তর করে তারা ফিরে আসেন।
স্বেচ্ছাসেবক দলের বিক্ষোভ কর্মসূচি
ঢাকা সিটি নির্বাচনে প্রচার চালানোর সময় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হত্যার উদ্দেশ্যে গাড়ি বহরে ন্যক্কারজনক হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছেন জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল। হামলার প্রতিবাদে আগামীকাল সারা দেশের উপজেলা, জেলা ও মহানগরীতে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সংগঠনটি। গতকাল এক যৌথবিবৃতিতে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

No comments

Powered by Blogger.