ভারতে এবার মধ্যবিত্তের বাজেট

আজ থেকে (সোমবার) ভারতের শীতকালীন বাজেট অধিবেশন শুরু। নরেন্দ্র মোদির সরকার এই প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করতে চলেছে। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির ভাষণের মধ্য দিয়েই স্থানীয় সময় বেলা এগারটায় লোকসভায় বাজেট অধিবেশন শুরু হবে। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পেশ করা হবে সাধারণ বাজেট।
এবারের বাজেটে মধ্যবিত্তের মন জয়ের লক্ষ্য নিয়েছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। রোববার ইকোনোমিক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির শোচনীয় পরাজয়ের পর মধ্যবিত্তদের মন জয়ের টার্গেট নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এ লক্ষ্যে অরুণ জেটলি আয়কর ও বিনিয়োগ সীমা নির্দিষ্ট করে জনবান্ধব করার কথা বিবেচনা করছেন। এছাড়া বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে ও প্রবৃদ্ধি জোরদার করতে সব খাতের ভর্তুকি যৌক্তিকীকরণের পাশাপাশি নীতিমালায়ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করছেন তিনি। জানা গেছে, আয়কর সীমা ৫০ হাজার থেকে আড়াই লাখ করা হবে। ভর্তুকি ও সরকারি ব্যয় যুক্তিসঙ্গত এরই মধ্যে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার সাবেক গভর্নর বিমল ঝালনের নেতৃত্বে এক্সপেনডিচার ফিন্যান্স কমিশন একগুচ্ছ প্রস্তাবনা ও পরামর্শ অর্থ মন্ত্রণালয় বরাবর জমা দিয়েছেন। আশা করা হচ্ছে, সরকার সে প্রস্তাবনা মেনেই বাজেটে পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। বর্তমানে জ্বালানি ও সারে সরকার কয়েক লাখ কোটি রুপি ভর্তুকি দিচ্ছে। সাধারণ বাজেট পেশের আগে ২৬ ফেব্রুয়ারি পেশ হবে রেল বাজেট। বৃহস্পতিবার রেল বাজেট পেশ করবেন রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু। জানা গেছে, এই বাজেটে ভারতবাসীকে অন্তত ১০০টিরও কম ট্রেন উপহার দিতে চলেছেন তিনি। প্রতি বছরই বাজেট পেশের আগে রেল মন্ত্রণালয় তথা কেন্দ্রীয় সরকার ১৫০ থেকে ১৮০টি ট্রেন ঘোষণা করা হয়। সবার কথা মাথায় রেখেই রেলের সংস্কারের স্বপক্ষে রেলমন্ত্রী। বর্তমানে রেল দফতরের অর্থনৈতিক হাল বিবেচনা করে ও বিভিন্ন অর্ধ-সমাপ্ত প্রকল্পের কথা মাথায় রেখে একশর বেশি নতুন ট্রেন দেয়ার বিপক্ষে তিনি। এবারের বাজেটেও রেল ভাড়া বাড়ছে না। ট্রেনে যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যতা দিতেই আগ্রহী নরেন্দ্র মোদির সরকার। পরিচ্ছন্ন ট্রেন, ক্যাটারিং ব্যবস্থা, টিকিট বুকিংয়ের পদ্ধতির ক্ষেত্রে আরও সহজতর ব্যবস্থা করা, এসবের দিকেই বেশি নজর দিচ্ছে রেল মন্ত্রণালয়।
আর তার প্রভাব পড়বে এবারের রেল বাজেটে। উল্লেখ্য, গত বছরও মোট ১৬০টি ট্রেন ঘোষিত হয়। আর এবারই বোধহয় সবচেয়ে কমসংখ্যক রেল নামাতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এদিকে রোববার সন্ধ্যায় বাজেট প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য সর্বদলীয় বৈঠক ডাকেন লোকসভার অধ্যক্ষ সুমিত্রা মহাজন। এবারের বাজেট অধিবেশনে আইন হিসেবে পাস হতে চলেছে তাদের মধ্যে অন্যতম, কয়লা ও অন্যান্য খনিজ, ই-রিকশ, নাগরিকত্ব সংশোধন আইন, ভূমি অধিগ্রহণ এবং বীমা খাতে এফডিআই আনায় এই অধিবেশনে যে বিলগুলো আনার ব্যাপারে সরকার প্রস্তাব পেশ করতে চলেছে তার মধ্যে রয়েছে, তথ্য প্রকাশকারীদের সুরক্ষা সংশোধনী বিল, পরিসেবা ও অভিযোগের প্রতিবিধান বিল, আন্তঃরাজ্য জলবিতর্ক আইনের সংশোধনী বিল, বিমান পরিবহন (সংশোধন) বিল, ওষুধ সংক্রান্ত নয়া ব্যবস্থার স্বীকৃতি বিল, জাতীয় নারী কমিশন আইনের সংশোধনী বিল এবং অন্ধ্রপ্রদেশ পুনর্গঠন (দ্বিতীয় সংশোধনী) বিল। অপরদিকে, বিরোধী দল হিসেবে দলের রণকৌশল ছকে নিতে প্রবীণ সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করেছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। এবারের বাজেট অধিবেশনে সংসদে কংগ্রেস কী নীতি নেবে, অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কীভাবে ফ্লোর-কো-অর্ডিনেশন করা হবে তা ঝালিয়ে নিতেই শনিবার এ বৈঠক হয়। একইসঙ্গে জনস্বার্থ সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে কীভাবে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা যায় তাও স্থির হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.