ব্যাংকে উদ্বৃত্ত মূলধন

খেলাপি ঋণ কমার প্রভাবে মূলধন ঘাটতিতে নেই ব্যাংক খাত। গত জুন ও সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে সামগ্রিক ব্যাংক খাতে বড় অঙ্কের মূলধন ঘাটতি থাকলেও ডিসেম্বর শেষে চার হাজার ৬৯ কোটি টাকার উদ্বৃত্ত হয়েছে। তবে ঘাটতি রয়েছে ৬টি ব্যাংকে। আগের প্রান্তিক শেষে ৮টি ব্যাংকের ঘাটতি ছিল। একই সঙ্গে সামগ্রিক ব্যাংক খাতে এক হাজার ৯৬ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতি ছিল।
ব্যাংকগুলোকে বর্তমানে নূ্যনতম ৪০০ কোটি টাকা অথবা ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ, এর মধ্যে যেটি বেশি সে হারে মূলধন রাখতে হয়। আগে কোনো ব্যাংক প্রয়োজনীয় মূলধন রাখতে ব্যর্থ হলে সেটিকে শুধু সতর্ক ও তাগাদা দেওয়া হতো। তবে সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইন কার্যকরের পর ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকগুলোকে জরিমানা করা হচ্ছে। এ ছাড়া মূলধন সংরক্ষণ বিষয়ে ভুল তথ্য দিলে কিংবা যৌক্তিক কারণ ছাড়া তথ্য পাঠাতে দেরি করলেও জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, গত বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকের তুলনায় শেষ প্রান্তিক অর্থাৎ ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বেশ কমে এসেছে। সেপ্টেম্বরের তুলনায় ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ৭ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা কমে ৫০ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা হয়েছে। খেলাপি ঋণ কমলে তখন নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা কমে ব্যাংকগুলোর আয় বাড়ে। এ ছাড়া গত ডিসেম্বরে সরকার রাষ্ট্রীয় মালিকানার সোনালী ব্যাংকে ৭১০ কোটি এবং বেসিক ব্যাংকে ৭৯০ কোটি টাকার মূলধন জোগান দেওয়ায় সামগ্রিক পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর মূলধন সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল ৬৭ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলো সংরক্ষণ করেছে ৭১ হাজার ৭৫৪ কোটি টাকা। এতে উদ্বৃত্ত দেখা দিয়েছে চার হাজার ৬৯ কোটি টাকা। আগের প্রান্তিক শেষে ৬৬ হাজার ২৯ কোটি টাকা প্রয়োজনের বিপরীতে ব্যাংকগুলো ৬৪ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা সংরক্ষণ করায় ঘাটতি ছিল এক হাজার ৯৬ কোটি টাকা।
এ সময় মূলধন সংরক্ষণে সামগ্রিক ব্যাংক খাতের পরিস্থিতির উন্নতি হলেও ছয়টি ব্যাংক ঘাটতিতে রয়েছে। ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকগুলো হলো_ রাষ্ট্রীয় মালিকানার সোনালী ও বেসিক ব্যাংক, বিশেষায়িত খাতের বাংলাদেশ কৃষি ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক এবং বেসরকারি খাতের বাংলাদেশ কমার্স ও আইসিবি ইসলামী ব্যাংক। গত সেপ্টেম্বর শেষে এ ছয় ব্যাংকের সঙ্গে বেসরকারি খাতের প্রিমিয়ার ব্যাংকে ৫৬ কোটি ও বিদেশি ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের ৩৭০ কোটি টাকা ঘাটতি ছিল। প্রিমিয়ার ব্যাংক শেষ প্রান্তিকের আয় দিয়ে ঘাটতি মেটাতে সক্ষম হয়েছে। আর ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান প্রধান কার্যালয় থেকে ৪২০ কোটি টাকা জোগান দেওয়ায় এখন তাদের আর ঘাটতি নেই।
মূলধন পর্যাপ্ততা বিষয়ে গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক মন্দা পরিস্থিতি বিরাজমান সত্ত্বেও বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের মূলধনভিত্তি ক্রমশ সুদৃঢ় হচ্ছে। গত পাঁচ বছরে ব্যাংকিং খাতের মূলধন ভিত্তির ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। ব্যাংকগুলোর মুনাফার একটা বড় অংশ মূলধনে স্থানান্তর, পুনঃমূলধনিকরণ ও প্রভিশন ঘাটতি কমার ফলে এমন হয়েছে। ফলে ব্যাংকিং ব্যবস্থার ভিত্তি আরও শক্তিশালী হয়েছে। আন্তর্জাতিক বিধিবিধান ব্যাসেল-২ নীতিমালা অনুযায়ী ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের মূলধন পর্যাপ্ততার হার দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এর আগে সেপ্টেম্বর শেষে যা ১০ দশমিক ৫৭ শতাংশ ছিল। ব্যাসেল-২ নীতিমালা মোতাবেক ব্যাংকগুলোকে তাদের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ৮ শতাংশ হারে মূলধন সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা থাকলেও বাংলাদেশে ব্যাংকগুলোর জন্য এ হার ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছিল। এতে আরও বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলোর মূলধনভিত্তি শক্তিশালীকরণের প্রয়াসে আন্তর্জাতিক সর্বোত্তম রীতি-পদ্ধতি অনুসরণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূলধন পর্যাপ্ততা সংক্রান্ত ব্যাসেল-২ নীতিমালার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। চলতি বছর থেকে ব্যাসেল-৩ বাস্তবায়ন করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.