তিনজনই আশ্রয় চেয়েছিলেন ভারতে by আহমেদ জামাল

দাউদ হায়দার ও তসলিমা নাসরিনের পথ ধরেই হাঁটছেন লতিফ সিদ্দিকী। বিতর্কিত হয়ে প্রথম দু’জনের মতই আশ্রয় নিয়েছেন ভারতে। দীর্ঘদিন পর দাউদ হায়দার ও তসলিমার রাস্তায় নেমেছেন পদচ্যুত এই মন্ত্রী। প্রশ্ন উঠেছে তার পরিণতিও কি তাদের মতো হবে? ইতিমধ্যে মন্ত্রিত্ব খুইয়েছেন লতিফ। একটার পর এক মামলা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে। সমনও জারি হয়েছে বেশ ক’টি। দেশে ফিরলে বিমানবন্দর ঘেরাওয়ের কর্মসূচি ঘোষণা হয়েছে। সরকার পক্ষের কেউই তার পক্ষে মুখ খুলছেন না। নারায়ণগঞ্জে তার মাথার মূল্য ঘোষণা করা হয়েছে পাঁচ লাখ টাকা। আগের বিতাড়িত এই দুই ব্যক্তির মতোই লতিফ সিদ্দিকীও শেষ পর্যন্ত বিদেশেই থেকে যাচ্ছেন- এমন ইঙ্গিতপূর্ণ কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে সব মহলে। তবে পূর্বসূরিদের মতো প্রাথমিক আশ্রয় স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছেন ভারতকে।

১৯৭৪ সালে হযরত মুহম্মদ (সাঃ)-কে নিয়ে কটূক্তি করে দাউদ হায়দার দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। প্রথমে তিনি আশ্রয় নেন ভারতের কলকাতায়। ছিলেন সাহিত্যিক অন্নদাশঙ্কর রায়ের স্নেহছায়ায়। পরে সেখান থেকে চলে যান জার্মানিতে। কাজ করেন ডয়েচে ভেলেতে। এখনো জার্মানিতেই আছেন। কোনও সরকারই তাকে দেশে আসার সুযোগ দেয়নি। একই পথের পথিক হন তসলিমা নাসরিন। পবিত্র কোরান ও হাদিসের বিরুদ্ধে উল্টাপাল্টা মন্তব্য করে বিতর্কে আসেন তসলিমা নাসরিন। কিন্তু বিষয়টি যে এত স্পর্শকাতর ও ঝুঁকিপূর্ণ তা বুঝতে পারেননি তখন। সারা দেশ তার বিরুদ্ধে উত্তাল হয়ে ওঠে। সিলেটের একজন আলেম তার মাথার দাম ঘোষণা করেন। একটার পর একটা মামলা হতে থাকে তার বিরুদ্ধে। পালিয়ে বেড়াতে থাকেন তাসলিমা। এক পর্যায়ে ইউরোপের কয়েকটি দেশের সহযোগিতায় তিনি কোর্টে হাজির হয়ে জামিন নিয়ে দেশ ছাড়তে সক্ষম হন। চলে যান ইউরোপে। এ সময় ইউরোপ ও  আমেরিকার মিডিয়া তসলিমাকে লুফে নেয়। তাকে নিয়ে বিশাল বিশাল সংবাদ পরিবেশন করতে থাকে। বিভিন্ন সভা-সেমিনারে তসলিমা পরিচিত হয়ে ওঠেন বিরাট বক্তা হিসেবে। এদিকে ভারতের বিজেপি ও আনন্দবাজার গোষ্ঠী  তসলিমাকে ব্যবহার করে তাদের সুবিধামতো। তার বিতর্কিত উপন্যাস ‘লজ্জা’ ভারতের বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করে সারা দেশে ছড়িয়ে দেয় বিজেপি। কলকাতার  কবি-সাহিত্যিক ও মিডিয়ার সঙ্গে তসলিমার বিশেষ সখ্য গড়ে ওঠে। এরই মধ্যে ‘ক’ উপন্যাসে কলকাতার খ্যাতনামা কয়েকজন সাহিত্যিকের চরিত্র উদঘাটন করেন তসলিমা। এতেই ক্ষেপে যান তার এককালের ঘনিষ্ঠ কবি ও সাহিত্যিকরা। পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানরাও তার বিরুদ্ধে মাঠে নামেন। ভোটের রাজনীতির হিসাব-নিকাশের কারণে পশ্চিমবঙ্গের সিপিএম ও তৃণমূলের কাছে মূল্যহীন হয়ে যান তসলিমা। কলকাতা ছেড়ে এখন থাকেন দিল্লির নির্জন এক গৃহে। মাঝে-মধ্যেই আবাসিক ভিসার সঙ্কটে পড়েন তিনি। দ্বারস্থ হতে হয় নয়া দিল্লির। আবেদন করতে হয় অনুকম্পার। দেশে ফিরতে চাইলেও আসতে পারছেন না। একই অবস্থা লতিফ সিদ্দিকীর বেলায়ও দেখা যাচ্ছে। সরকারের পক্ষ-বিপক্ষ কেউ নেই বহিষ্কৃত এই মন্ত্রীর পক্ষে। মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন দলীয় নেতাকর্মীরাও। আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা সাজেদা  চৌধুরী তাকে বলেছেন, মুখফোঁড়া। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, ন্যক্কারজনক। জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এরশাদ, ইসলামপন্থি বিভিন্ন দল ও জামায়াত চায় ফাঁসি। তাকে পাথর ছুড়ে মারলে সওয়াব হবে এমন ফতোয়া দিয়েছেন ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ। চরমোনাইর পীর মুফতি সৈয়দ রেজাউল করিম বলেছেন, লতিফ সিদ্দিকী কাফের। হেফাজত বলেছে, মুরতাদ। এ অবস্থায় সরকারি দলের লোকেরাই চাইছে না তিনি দেশে ফেরেন। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, এতে যে সহিংসতার জন্ম নেবে তাতে আওয়ামী লীগের বেকায়দার পড়ার আশঙ্কা থেকে যায়। ফিরতে হলে তাকে নিজ দায়িত্বে ফেরার কথা বলেছেন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে যে যত সমালোচনাই করুন না কেন তিনি ধর্মবিরোধী- এমন অপবাদ কেউ দিতে পারবে না। কাজেই লতিফ সিদ্দিকীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে শেখ হাসিনা ধর্মবিরোধী তকমা গায়ে মাখার কোন কারণ নেই।

No comments

Powered by Blogger.