স্বাধীনতা দিবসে নরেন্দ্র মোদির অন্যরকম ভাষণ

ভারতের স্বাধীনতা দিবসে অনেক দিন পর অন্যরকম আবহে ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার এ ভাষণ দেয়ার সময় লালকেল্লা চত্বরে মোদিকে ঘিরে ছিল না নিরাপত্তা ঘেরাটোপ। লিখিত বক্তব্যের বদলে মোদি উপস্থিত ভাষণ দিলেন। অনেক দিন পর লালকেল্লা চত্বরে স্বাধীনতা দিবসের এই আয়োজনে আমন্ত্রিতদের সঙ্গে ছিলেন সাধারণ মানুষও। এর আগে এমন অনুষ্ঠানে শুধু আমন্ত্রিতরাই অংশ নেয়ার সুযোগ পেতেন। মোদি তার ভাষণে আগে প্রকাশ করা নীতিই বারবার উচ্চারণ করেছেন। বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়, সেবক হিসেবে তিনি কাজ করবেন। প্রতিবেশীদের প্রতি তার উদার নীতির প্রকাশ ঘটিয়ে মোদি ডাক দিয়েছেন দারিদ্র বিমোচনে এক হয়ে কাজ করার। এক সঙ্গে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করার কথা স্মরণ করে চির প্রতিদ্বন্দ্বি পাকিস্তানের প্রতিও তিনি দিয়েছেন সহনশীল অবস্থানের বার্তা।
সাম্প্রতিক ধর্ষণের ঘটনাপ্রবাহ ভারতকে লজ্জায় ফেলছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি পিতামাতাদের তাদের পুত্রদের কর্মকান্ডের ব্যাপারে আরও দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, পিতামাতাদের উচিত তাদের পুত্রদের অবশ্যই নৈতিক এবং অনৈতিকের মধ্যে পার্থক্য শেখানো। মোদি সবার জন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও ভারতের প্রতিটি স্কুলে টয়লেটের ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতিও দেন ভাষণে। মোদি বলেন, যখন আমরা এ ধর্ষণের ঘটনাগুলো সম্পর্কে শুনি, তখন লজ্জায় আমাদের মাথা কাটা যায়। ভাষণে মোদি প্রশ্ন ও পাল্টা-প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, পিতামাতারা তাদের তরুণী মেয়েদের নানা ধরনের প্রশ্ন করেন, যেমন তুমি কোথায় যাচ্ছো? কিন্তু, তারা কি তাদের পুত্রদের কাছে জানার সাহস করেন যে, তারা কোথায় যাচ্ছে? তিনি আরও বলেন, যারা ধর্ষণ করে, তারাও কারও পুত্র। পুত্ররা ভুল পথে যাওয়ার আগে তাদের আটকানো পিতামাতাদের দায়িত্ব। একই সঙ্গে মেয়ে শিশুদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধ করতে ভারতীয়দের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। স্বাধীনতা দিবসে মোদির ভাষণ উপলক্ষে বেশ কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। রাজধানীজুড়ে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর হাজার হাজার সদস্যকে। পূর্বে তৈরি কোন বক্তব্য পেশ করেননি মোদি এবং বহু বছর পর ভারতের কোন প্রধানমন্ত্রী বুলেট-নিরোধক পর্দার পেছনে না দাঁড়িয়েই ভাষণ দিলেন। পূর্বের প্রধানমন্ত্রীদের মতো ঘোরতর প্রতিদ্বন্দ্বী ও প্রতিবেশী রাষ্ট্র পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোন কড়া মন্তব্য করেননি মোদি। বরং, তিনি বলেছেন, কিভাবে নারীদের বিরুদ্ধে সংঘটিত যৌন অপরাধসমূহ তাকে লজ্জায় ফেলে দিচ্ছে। ২০১২ সালে দিল্লিতে একটি বাসে ২৩ বছর বয়সী এক মেডিকেল ছাত্রীকে ধর্ষণের পর যৌন সহিংসতা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যায়। মোদি তার ভাষণে প্রতিবেশীদের প্রতি সম্পর্ক উন্নয়নের ইঙ্গিত দিয়ে তার উদারনীতির প্রকাশ ঘটিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সার্কের সবাই মিলে আমরা অন্তত দারিদ্র্য দূরীকরণের চেষ্টা করতে পারি। এই সমস্যা আমাদের সবার। নাম উল্লেখ না করে পাকিস্তানের উদ্দেশে বললেন, সংঘাতে না গিয়ে শান্তির পথে থাকাই শ্রেয়। ‘সংঘাত কেন? আমরা তো একই সঙ্গে স্বাধীনতার লড়াই লড়েছি? তিনি বলেন, আমি সবাইকে নিয়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে দেশ চালাতে চাই। মানুষ আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছেন বলে নিজের ইচ্ছেমতো দেশ চালাব না। আর বলেন, আমি নিজেকে দেশের প্রধানমন্ত্রী মনে করি না। মনে করি আমি দেশের প্রধান সেবক।

No comments

Powered by Blogger.