ব্যাংক খাত মূলধন পর্যাপ্ততার দিক থেকে শক্ত অবস্থানে

কয়েকটি বাদে দেশের ব্যাংক খাত মূলধন সংরক্ষণ হারের (সিএআর) দিক থেকে শক্ত অবস্থানে পৌঁছেছে। ২০১১ সালের জুনভিত্তিক হিসাবে বেসরকারি খাতের কেবল দুটি ব্যাংকের মূলধন পর্যাপ্ততার হারে ঘাটতির তথ্য মেলে। এর একটি হলো প্রিমিয়ার ব্যাংক অপরটি আইসিবি ইসলামী ব্যাংক।
এর বাইরে অবশ্য বিশেষ আইন দিয়ে প্রতিষ্ঠিত কমার্স ব্যাংকে কিছু মূলধন ঘাটতি এবং রাষ্ট্রমালিকানাধীন অগ্রণী, বিশেষায়িত কৃষি ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের মূলধন সংরক্ষণে ঘাটতি রয়েছে।
ব্যাসেল কমিটির সুপারিশ অনুসারে ব্যাসেল-২-এর আওতায় বাংলাদেশে জুন পর্যন্ত মূলধন পর্যাপ্ততার হার ধরা হয়েছিল নয় শতাংশ। জুলাই মাস থেকে এ হার ১০ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সবচেয়ে শক্ত অবস্থানে থেকে (সাবসিডিয়ারিসহ বা ‘সলো’) হিসাব করে দেখেছে, জুনভিত্তিতে দেশের সিংহভাগ ব্যাংকের মূলধন পর্যাপ্ততার হার শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। এমনকি জুনভিত্তিক হিসাবে দেখা গেছে, দেশের ৪৭টি ব্যাংকের মধ্যে ৩১টি ব্যাংকের মূলধন পর্যাপ্ততার হার ১০ শতাংশের বেশি রয়েছে।
এ ক্ষেত্রে বিদেশি ব্যাংকগুলোর মূলধন পর্যাপ্ততার হার সবচেয়ে বেশি। বিদেশি ব্যাংকগুলোর এই হারের গড় হয়েছে ১৭ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। দেশের বেসরকারি খাতে ব্যাংকের হার হয়েছে ১০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। রাষ্ট্রমালিকানাধীন চার বাণিজ্যিক ব্যাংকের ৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ। আর বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর এই হার ঋণাত্মক (-) ৭ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। তবে রাষ্ট্র খাতের বিডিবিএলের মূলধন পর্যাপ্ততার হার বিদেশি ব্যাংকগুলোর পর্যায়ে রয়েছে, যা ৩১ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ।
প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে রাষ্ট্র খাতের অগ্রণী ব্যাংকে জুনভিত্তিতে মূলধন পর্যাপ্ততার হারের শর্ত নয় শতাংশের মধ্যে ৮ দশমিক ৭২ শতাংশ রয়েছে। প্রিমিয়ার ব্যাংকে এই হার দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৫১ শতাংশ। আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের এই হার ঋণাত্মক এবং তা (-) ৩৭ দশমিক ২০ শতাংশ। আর কমার্স ব্যাংকের কিছু মূলধন ঘাটতি থাকলেও আরও কিছু ক্ষেত্রে অগ্রগতি থাকায় তাদের সার্বিক মূলধন পর্যাপ্ততার বেশিই দাঁড়িয়েছে। বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংকে মূলধন পর্যাপ্ততায় বড় ঘাটতি রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকটিতে ঘাটতি পর্যাপ্ততার হার দাঁড়িয়েছে (-) ২৫ দশমিক ৯১ শতাংশ এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের মূলধন পর্যাপ্ততার হার জুন ভিত্তিতে ১ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
তিন ধরনের মূলধনকে পর্যাপ্ততার হিসাবের মধ্যে নেওয়া হয়। এর মধ্যে যেমন আছে ঋণ দেওয়ার পর সেই ঋণ আদায়ের বিভিন্ন ঝুঁকি, বাজার ঝুঁকি, ব্যবস্থাপনা বা কার্যক্রমজনিত ঝুঁকি। আবার আছে পরিশোধিত মূলধন, বিধিবদ্ধ সংরক্ষণ, রিটেন আর্নিং, ঋণের প্রভিশনিং বা সঞ্চিতিসহ আরও অন্যান্য মূলধন। সব বিবেচনা করে এই মূলধন সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেন, রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর জন্য সরকারকে মূলধন জোগান দিতে হবে। অন্যদিকে বেসরকারি প্রিমিয়ার ব্যাংকের সামান্য ঘাটতি আছে, এটা মেটানো যাবে। তবে অত্যন্ত খারাপ অবস্থায় রয়েছে আইসিবি ইসলামী ব্যাংক। তাদের মালিক পক্ষ বলছে, ব্যাংকটি বিক্রির বিষয়ে তাদের সঙ্গে দেশের একটি বড় ব্যবসায়িক গ্রুপের প্রাথমিক সমঝোতা হয়েছে। কিন্তু, অপর এক পক্ষ মালিকানা নিয়ে আদালতে মামলা করে রাখায় সমস্যা দেখা দিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.