মূল্যস্ফীতি নিয়ে উদ্বেগ ও জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ের পরামর্শ

পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ের পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
ঢাকায় সফররত সংস্থাটির প্রতিনিধিদলের প্রধান এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের উপপ্রধান ডেভিড কাউয়েন বলেন, বাংলাদেশের বিদ্যু ৎ -ঘাটতি কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। কিন্তু বিদ্যু ৎ উ ৎ পাদন বাড়ার সঙ্গে জ্বালানি তেলের চাহিদাও বাড়বে। ফলে, ভর্তুকির পরিমাণ বেড়ে গিয়ে বাজেট-ঘাটতি বাড়াবে। আর এ ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণনির্ভরশীলতা বাড়লে শেষ পর্যন্ত তা মূল্যস্ফীতির চাপকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।
রাজধানীর একটি হোটেলে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশের (অ্যামচেম) মাসিক মধ্যাহ্নভোজের সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কাউয়েন গতকাল মঙ্গলবার এসব কথা বলেন। তিনি বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রসঙ্গে কথা বলছিলেন। তাঁর মতে, মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশের জন্য বড় উদ্বেগের বিষয়। এরই মধ্যে মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘরে রয়েছে। এটি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ভোগান্তি আরও বাড়বে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন অ্যামচেমের সভাপতি আফতাব-উল ইসলাম। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির ভাইস চেয়ারম্যান খালিদ হাসান ও নির্বাহী পরিচালক এম এ গফুর। এ ছাড়া দর্শকসারিতে দেশের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
ডেভিড কাউয়েন বলেন, খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতিও ঊর্ধ্বমুখী। এতে সামষ্টিক অর্থনীতির ওপর চাপ বাড়ছে। তবে মুদ্রানীতি সংকুলানমূলকই রয়েছে। যদিও ২০১১ সালের এপ্রিলের উচ্চ ঋণপ্রবৃদ্ধি থেকে ঋণের প্রবাহ এখন অনেকটাই কমেছে।
তিনি বলেন, গত অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ মোট দেশজ উ ৎ পাদনের ১০ শতাংশ অতিক্রম করেছে। এটি বাংলাদেশের জন্য একটি মাইলফলক। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের উন্নতি লক্ষ করা গেলেও খরচের পরিমাণ এখনো লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম।
ডেভিড কাউয়েন বলেন, অগ্রসর অর্থনীতির দেশগুলোর প্রত্যাশার চেয়ে প্রবৃৃদ্ধি কম হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। এতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প খাতের রপ্তানিসহ প্রবাসী-আয়ের (রেমিট্যান্স) প্রবাহ কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে সর্বোপরি এটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই থাকবে বলে মনে করেন তিনি।
তিনি মনে করেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি অভ্যন্তরীণ ক্রয়ক্ষমতা কমানোর পাশাপাশি বাহ্যিকভাবে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা কমাবে। তবে তৈরি পোশাকের বাজারের বিস্তৃতি প্রত্যাশার চেয়ে জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধি ও অতিরিক্ত পণ্যমূল্য দেশের প্রবৃদ্ধি, চলতি হিসাব ও মূল্যস্ফীতির জন্য কিছুটা স্বস্তি হয়ে দেখা দিতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।
কাউয়েন বলেন, কর বৃদ্ধি, সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও আর্থিক খাত সংস্কার বেসরকারি খাতে গতি সঞ্চার করবে, যা উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য সহায়ক হবে।
সবশেষে আইএমএফ প্রতিনিধি বলেন, আগামী দিনে আন্তর্জাতিক প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি হবে এশিয়া। বাংলাদেশ এ অঞ্চলের সবচেয়ে গতিশীল জায়গায় অবস্থান করায় এর ছোঁয়া এখানেও লাগবে। তিনি আরও বলেন, অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি ব্যবসায়িক পরিবেশের উন্নতি ঘটাতে পারলে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগসহ সব ধরনের বিনিয়োগ বাড়বে।
আইএমএফের সংস্কার প্রস্তাবের কারণে ব্যাংকের তারল্য ঘাটতি ও পুঁজিবাজারে দরপতন হচ্ছে—একজন ব্যবসায়ীর এমন প্রশ্নের জবাবে কাউয়েন বলেন, শক্তিশালী পুঁজিবাজার নিশ্চিত হোক, এটা তাঁরা চান।

No comments

Powered by Blogger.