সীমান্তের ওপারেই আর্জেন্টিনা

মাত্র ১৭ জন অশ্বারোহী সৈন্যসহ ইখতিয়ারউদ্দিন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজি এসে বঙ্গ বিজয় করেছিলেন। সেটা ত্রয়োদশ শতাব্দীর কথা। প্রায় আট শ বছর পর এক আর্জেন্টাইন কাল বঙ্গ বিজয় অভিযানে এলেন ঠিক ১৭ জন সঙ্গী নিয়ে। পৌঁছে গেলেন সীমান্তের ওপারে, কলকাতায়। ইনি আলেজান্দ্রো সাবেলা। আজের্ন্টিনা ফুটবল দলের কোচ। না, বখতিয়ার খিলজির মতো আক্ষরিক অর্থেই রাজ্যজয়ের নেশা তাঁর নেই। নিজেদের বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের প্রাক-প্রস্তুতি যদিও মূল লক্ষ্য, তবু দুই বাংলার ফুটবল মানসও তিনি জিততে চাইবেন। আর্জেন্টাইন ফুটবলের সৌরভ কলকাতার পর ঢাকায়ও ছড়িয়ে দিতে চাইবেন ডিয়েগো ম্যারাডোনার উত্তরসূরি। মঞ্চটা একেবারেই সাজানো। আগামী শুক্রবার ভেনেজুয়েলার সঙ্গে প্রীতি ম্যাচ খেলে পরদিন সকালেই মেসিদের নিয়ে সাবেলা উড়ে আসবেন ঢাকায়। যেখানে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ৬ সেপ্টেম্বর প্রীতি ম্যাচে আর্জেন্টিনার মুখোমুখি নাইজেরিয়া—আফ্রিকার সুপার ইগলস।
এত দিন বাংলাদেশ শুধু ঘরে ঘরে আর্জেন্টিনার আকাশি-সাদা পতাকা উড়িয়েছে। ডিয়েগো ম্যারাডোনাকে মনের বেদিতে বসিয়ে ভালোবাসার ফুল দিয়ে এসেছে। মেসি-মেসি রবে চায়ের কাপে তুলেছে ঝড়। তবে এটি এখন আর ও রকম স্বপ্নে বা ফ্যান্টাসিতে আটকে থাকছে না। ম্যারাডোনার স্মৃতিধন্য, মেসির জাদুমণ্ডিত আর্জেন্টিনা ফুটবল দল সত্যি এসে যাচ্ছে বাংলাদেশে।
আগের দিন সবার আগে এসেছেন পাঁচজন, কোচসহ আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের ১৭ জনের কলকাতায় আসার খবর বাংলাদেশ কাল পেয়ে গেছে সাতসকালেই। মেসি-মাচেরানোসহ ১৭ জনের বাকি দলটি পৌঁছাবে আগামীকাল ও পরশু। কাল রাতে স্প্যানিশ লিগে ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে ম্যাচ খেলে বার্সেলোনার তারকা মেসি সতীর্থ মাচেরানোকে নিয়ে পৌঁছাবেন আগামীকাল।
ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ভবনে বসে দুপুরে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন যখন আর্জেন্টিনার অগ্রবর্তী দলের কলকাতায় পৌঁছানোর খবরটি আবার জানালেন, তাঁর মুখে একটা বিজয়ের হাসি ছিল। বিজয়ই তো, গৌরবময় বিজয়ের ঘোষণা। কে কবে ভেবেছে, এই ঢাকার মাঠে আর্জেন্টিনা দলের পদচিহ্ন পড়বে! ওই অসম্ভব ভাবনাটি এখন বাস্তব।
তবে সালাউদ্দিনের মুখে একটু মেঘমেদুর অনিশ্চয়তাও ছিল! আর্জেন্টিনার অনুশীলনের ব্যাপারটি চূড়ান্ত ছিল না। মেসিদের একটা উন্মুক্ত সেশন টিকিটের বিনিময়ে দর্শকদের উপহার দেওয়ার পরিকল্পনা করে রেখেছিল বাফুফে, ৪ সেপ্টেম্বর তাদের আনুষ্ঠানিক নৈশভোজটাও রাখা হয়েছিল চূড়ান্ত করে। কিন্তু ম্যাচের নিশ্চয়তা ছাড়া আর্জেন্টিনার আর কোনো কিছু নিয়েই আয়োজনের অনুঘটক কলকাতাভিত্তিক এজেন্ট সেলিব্রেটি ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ জানাতে পারছিল না। উড়ো খবর ছিল, আর্জেন্টিনা ৫ সেপ্টেম্বর সকালে ঢাকায় এসে পরদিন ম্যাচ খেলেই ফিরে যাবে। কাল সন্ধ্যায় সালাউদ্দিন কলকাতায় সিএমজির সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছেন, আর কোনো সমস্যা নেই। আর্জেন্টিনা ৪ সেপ্টেম্বর ফতুল্লা স্টেডিয়ামেই অনুশীলন করবে। সবকিছু হবে চুক্তি অনুযায়ীই। অনুশীলনের টিকিট বিক্রি করতেও এখন বাধা নেই।
নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে, চুক্তিটি ৩৮ লাখ মার্কিন ডলারের। চুক্তি অনুযায়ী, ৬ সেপ্টেম্বর ম্যাচের আগে আর্জেন্টিনা দল ৪ সেপ্টেম্বর উন্মুক্ত অনুশীলন করবে, পরদিন করবে রুদ্ধদ্বার অনুশীলন, যোগ দেবে আনুষ্ঠানিক নৈশভোজে। আর এর বাইরে তাদের নিয়ে যাওয়া হবে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে। তাহলে অন্য রকম খবর এল কেন? ফতুল্লা স্টেডিয়ামের দূরত্ব ও যানজটের আশঙ্কা আর্জেন্টিনার সহকারী কোচ জুলিয়ান কামিনোর মনে অনুশীলনের ব্যাপারে ঢুকিয়ে দিয়েছিল নেতিবাচক চিন্তা। তবে সরকারি সহযোগিতার কথা বলে সেটি শেষ পর্যন্ত দূর করে দিয়েছেন সালাউদ্দিন।
এমনটাই হওয়ার কথা; প্রীতি ম্যাচ নিয়ে বাফুফে ভবনে ঈদের আগেই ছড়িয়ে পড়েছে ঈদের আমেজ। কর্মকর্তাদের ছোটাছুটি, পাতি কর্মকর্তাদের সুযোগসন্ধানী উঁকিঝুঁকি লক্ষণীয়। বাফুফে সভাপতি অবশ্য আয়োজন শেষ হওয়ার আগে হাসতে পারছেন না, ‘ধরেই রেখেছি, সাত-আট কোটি টাকা ক্ষতি হবে। এখন পৃষ্ঠপোষকদের (বেক্সিমকো) ক্ষতিটা যথাসম্ভব কম রাখতেই দৌড়ঝাঁপ করছি।’

No comments

Powered by Blogger.