পাকিস্তানের মানবাধিকার পরিস্থিতি নাজুক

পাকিস্তানের মানবাধিকার কমিশনের প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে দেশটির মানবাধিকার পরিস্থিতি নাজুক বলে উল্লেখ করা হয়েছে। দেশটির নিরাপত্তা পরিস্থিতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও সংখ্যালঘুদের জন্য চিকিৎসাব্যবস্থার ওপর তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১০ সালে বিতর্কিত ব্লাসফেমি আইনে আছিয়া বিবিসহ অন্তত ৬৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। পাঞ্জাবের নানকানা সাহেব অঞ্চলের একটি আদালত আছিয়া বিবি নামের পাঁচ সন্তানের এই জননীকে ব্লাসফেমি আইনে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। এই আইনে তিনিই প্রথম মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। তাঁর মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিষয়টি ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেয়।
আছিয়া বিবির মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরোধিতা করায় পাঞ্জাবের গভর্নর সালমান তাসির ও সংখ্যালঘুদের মন্ত্রী শাহবাজ ভাট্টিকে হত্যা করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, এই আইনে অভিযুক্ত খ্রিষ্টান এক সহোদরসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে পুলিশি হেফাজতে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জীবন হুমকিগ্রস্ত হয়ে পড়ায় বেলুচিস্তান প্রদেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে প্রায় ৫০০ হিন্দু পরিবার ভারতে চলে গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মুসলমানদের বিভিন্ন গোষ্ঠীগত সংঘাতের ফলে ৪১৮ জন নিহত ও ৯৬৩ জন আহত হয়েছে। পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে প্রায় ৮০০ নারীকে হত্যা (অনার কিলিং) করা হয়। এ ছাড়া দুই হাজার ৯০৩ জনকে ধর্ষণ করা হয়। এর মধ্যে কেবল পাঞ্জাবেই দুই হাজার ৫৮১ জন ধর্ষিত হয়।
জঙ্গি হামলায় নিহত আড়াই সহস্রাধিক: পাকিস্তানে ২০১০ সালে জঙ্গি হামলায় আড়াই হাজারেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই ছিল সাধারণ নাগরিক। পাকিস্তানের স্বাধীন মানবাধিকার কমিশনের (এইচআরসিপি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
এইচআরসিপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জঙ্গিরা গত বছর পাকিস্তানে মোট ৬৭টি আত্মঘাতী হামলা চালায়, যাতে এক হাজার ১৬৯ জন লোক নিহত হয়। এর মধ্যে এক হাজার জনই ছিল সাধারণ নাগরিক। গত বছর জঙ্গি হামলায় সব মিলিয়ে দুই হাজার ৫৪২ লাক নিহত হয়।
এ ছাড়া মার্কিন চালকবিহীন বিমান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ৯০০ পাকিস্তানি নিহত হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে কতসংখ্যক লোক প্রাণ হারিয়েছে, সে তথ্য এ প্রতিবেদনে নেই। ধারণা করা হচ্ছে, এ সংখ্যা ৬০০ থেকে ৭০০-র মতো হবে।
প্রতিবেদন প্রকাশ করে এইচআরসিপির চেয়ারম্যান মেহেদি হাসান বলেছেন, পাকিস্তানে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে জঙ্গিদের চলমান সহিংসতা। এ বছর জঙ্গিদের হাতে প্রাণহানির সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে তিনি সতর্ক করেছেন।
কাঠমান্ডুতে দূতাবাস কর্মকর্তার ওপর হামলা: নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে গত বৃহস্পতিবার পাকিস্তান দূতাবাসের একজন কর্মকর্তার ওপর বন্দুকধারীরা হামলা চালিয়েছে। তবে তিনি অনেকটা অলৌকিকভাবে বেেঁচ গেছেন। হাত ও পেটে গুলিবিদ্ধ মেহবুব আসিফ নামের ওই ভিসা কর্মকর্তাকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পাকিস্তান হামলার ঘটনার তদন্ত দাবি করেছে। নিরাপত্তা কর্মকর্তারা মনে করছেন, কাঠমান্ডুতে সন্ত্রাসীদের তৎপরতা অনেক বেড়ে গেছে। এর জের ধরেই ওই কর্মকর্তা হামলার শিকার হয়েছেন। কাঠমান্ডুর ব্যস্ততম এলাকায় গত পাঁচ দিনের মাথায় এ নিয়ে তিনটি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটল।
৩৬ বছর বয়স্ক মেহবুব আসিফ সাংবাদিকদের জানান, বৃহস্পতিবার সকাল নয়টার দিকে একটি সেবাকেন্দ্র (নার্সিং হোম) থেকে দূতাবাসে যাওয়ার পথে টি-শার্ট পরা দুজন লোক তাঁর ওপর হামলা চালায়।

No comments

Powered by Blogger.