পূর্ব জেরুজালেমের বেশির ভাগই ছাড়তে রাজি ছিল ফিলিস্তিন

পূর্ব জেরুজালেমের প্রায় সব ইহুদি বসতি ইসরায়েলকে ছেড়ে দেওয়ার গোপন প্রস্তাব দিয়েছিল ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। আল-জাজিরা টেলিভিশনের ফাঁস করে দেওয়া গোপন নথি থেকে এ তথ্য জানা গেছে। তবে ফাঁস করা তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। এদিকে এই গোপন তথ্য ফাঁসের পর ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের তীব্র সমালোচনা করেছে হামাস।আল-জাজিরার পাওয়া নথিপত্র থেকে এ ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে অবৈধভাবে দখল করে নেওয়া পূর্ব জেরুজালেমের বড় একটি অংশ ইসরায়েলকে ছেড়ে দিতে রাজি হয়েছিল ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। তবে ইসরায়েল ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে বলেই আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে।প্রধান ফিলিস্তিনি আলোচক সায়েব এরাকাত ফাঁস করা তথ্যকে ‘এক প্যাকেট মিথ্যা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।আল-জাজিরা জানায়, ফিলিস্তিন, ইসরায়েল ও মার্কিন কর্মকর্তাদের মধ্যকার বৈঠক, ই-মেইল ও যোগাযোগের ১৬ হাজার ৭৬টি গোপনীয় নথি তাদের কাছে রয়েছে। তথ্যগুলো ২০০০ থেকে ২০১০ সালের মধ্যকার।সায়েব এরাকাত বলেন, ফিলিস্তিনি নেতাদের লোকানোর কিছু নেই। তিনি বলেন, যদি তাঁরা এত বড় ছাড় দেন, তাহলে কেন ইসরায়েল শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করতে রাজি হয়নি।ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসও ফাঁস করা তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যকার বর্তমান শান্তি আলোচনা কয়েক মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। ফিলিস্তিনের অধিকৃত ভূমিতে বসতি নির্মাণ বন্ধ রাখতে ইসরায়েল অস্বীকৃতি জানানোয় আলোচনা স্থগিত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইসরায়েলের বসতি সম্প্রসারণ ও নিজেদের নেতৃত্বের দুর্বলতা—এসব নিয়ে এমনিতেই অনেক ফিলিস্তিনির মধ্যে ক্রমবর্ধমান হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ অবস্থায় এসব নথিপত্র ফাঁস হওয়ায় তাঁদের হতাশা ও ক্ষোভ আরও বাড়বে।২০০৮ সালের মে মাসে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের আলোচকদের মধ্যকার বৈঠকের হুবহু রেকর্ড প্রকাশ করেছে আল-জাজিরা। নথিপত্রে বলা হয়, ১৯৬৭ সাল থেকে পূর্ব জেরুজালেমের আশপাশে গড়ে তোলা প্রায় সব ইহুদি বসতি ও উপশহরকে ইসরায়েলের অধীনে থাকতে দিতে রাজি ছিল ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ। নথিপত্র থেকে এই বিষয়টি পরিষ্কার হয় যে ফিলিস্তিন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ছাড় দিতে রাজি ছিল।১৯৬৭ সাল থেকে পূর্ব জেরুজালেমসহ পশ্চিম তীর দখল করে রেখেছে ইসরায়েল। সেখানকার ১০০টিরও বেশি বসতিতে প্রায় পাঁচ লাখ ইহুদি বাস করে থাকে।২০০৮ সালের মে মাসে ফিলিস্তিনের আলোচকদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আহমেদ কোরাই। আল-জাজিরার তথ্যমতে, একটি চূড়ান্ত চুক্তিতে পৌঁছার জন্য তিনি ওই সময় হার হোমা বসতি ছাড়া পূর্ব জেরুজালেমের সব বসতি ইসরায়েলের অধিকারে থাকতে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। খবরে বলা হয়, আহমেদ কোরেই বলেছিলেন, ‘ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আমরা এ ধরনের প্রস্তাব দিয়েছি।’২০০০ সালে ক্যাম্প ডেভিডের আলোচনায় যতটা ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, ওই ছাড় ছিল তার চেয়েও বেশি।সায়েব এরাকাত বলেছিলেন, ‘ইহুদি ইতিহাসে আমরা আপনাদের সবচেয়ে বড় ইয়েরুশালায়িমের প্রস্তাব দিচ্ছি।’ হিব্রু ভাষায় জেরুজালেমকে ইয়েরুশালায়িম বলা হয়।এদিকে নথি প্রকাশের পর ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের তীব্র সমালোচনা করে হামাসের মুখপাত্র সামি আবু জুহরি বলেন, নথি থেকে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নোংরা চেহারা উন্মোচিত হয়েছে। এ ছাড়া দখলদারির সঙ্গে তাদের সহযোগিতা কতটুকু, তাও উন্মোচিত হয়েছে এই নথি থেকে। তিনি বলেন, আল-জাজিরায় যেসব নথি প্রকাশ করা হয়েছে, তা গুরুতর।

No comments

Powered by Blogger.