বন্দুক আছে, গুলি নেই

এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশ শ্যুটিং দলের পক্ষে পদক জেতা কঠিন। আগে কখনো পদক আসেওনি। ১২-২৭ নভেম্বর গুয়াংজু এশিয়ান গেমসে তাই শ্যুটিং দলের তেমন প্রত্যাশা নেই। তবে খেলাটা শ্যুটিং বলে নির্দিষ্ট দিনের পারফরম্যান্সে অপ্রত্যাশিত ফল আসা অস্বাভাবিক নয়। যদিও পদক জিততে হলে কোরিয়া, চীন, ভারতের বিশ্বমানের শ্যুটারদের সঙ্গে লড়তে হবে।
পদকের লড়াই তখনই করা সম্ভব, যখন একটা দল নির্ভার হয়ে খেলতে পারে। বাংলাদেশ শ্যুটিং দল কিন্তু নির্ভার হয়ে গুয়াংজু যেতে পারছে না। বরাবরের মতো গুলির সংকট নিয়েই যেতে হচ্ছে এই গেমসেও।
বাংলাদেশ খেলবে ১১টি ইভেন্টে (রাইফেল ও পিস্তল)। নিয়ম অনুযায়ী অনুশীলন ও প্রতিযোগিতার সব গুলিই নিজেদের। দরকার প্রায় ১১ হাজার গুলি কিন্তু শ্যুটিং ফেডারেশনের হাতে আছে মাত্র সাড়ে ৪ হাজার গুলি!
এতেও দুশ্চিন্তার কিছু ছিল না। গুয়াংজু গিয়ে গুলি কেনা যাবে। গত মাসেই শেষ হওয়া কমনওয়েলথ গেমসেও বাংলাদেশ গুলি কিনেছিল দিল্লি গিয়ে। বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনই (বিওএ) তা কিনে দিয়েছিল। এবারও গুয়াংজুতে গুলি কিনে দেওয়ার কথা বিওএর।
তবে গুয়াংজু গিয়ে গুলি কেনার ব্যাপারে বিওএতে ফাইল চালাচালি করেও প্রত্যাশিত সাড়া পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেছে শ্যুটিং ফেডারেশন। আদৌ গুলি কেনা হবে কি না, নিশ্চিত নয় ফেডারেশন। আর গুলি কেনা না হলে গুয়াংজুতে বেড়ানো ছাড়া কোনো কাজ থাকবে না শ্যুটারদের!
শ্যুটিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ বলছেন, ‘গত মাসের ৪ তারিখ বিওএকে চিঠি দিই আমরা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ডেপুটি শেফ দ্য মিশন আমাদের আশ্বস্ত করলেও শেষ সময়ে জানতে পেরেছি, বিওএ গুলি কিনে দেবে না। এ অবস্থায় ফেডারেশনের টাকায় হয়তো কিনতে হবে। কিন্তু শেষ সময়ে কেন আমরা জানব বিওএ গুলি দিতে পারবে না? এভাবে চললে খেলাধুলার আর দরকার কী!’
বিওএর প্রশিক্ষণ কমিটির প্রধান মিজানুর রহমান বলছেন ভিন্ন কথা, ‘শ্যুটিং ফেডারেশন ঠিকভাবে যোগাযোগ করে না। সমস্যাটা তাদেরই। তার পরও শেফ দ্য মিশন যেহেতু শ্যুটিং ফেডারেশনের সভাপতি, একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে। গুলির জন্য প্রতিযোগিতা আটকে থাকবে না।’
শেষ পর্যন্ত হয়তো গুলি কেনা হবে। তবে এত বড় একটা গেমসে যাওয়ার আগে গুলি নিয়ে ফেডারেশন-বিওএ উতোর-চাপান অশনিসংকেতই দিচ্ছে। শ্যুটিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জানিয়েছেন, ‘সরকারের কাছে দিনের পর দিন ধরণা দিয়েও গুলি আমদানির অনুমতি মিলছে না। ফেডারেশন অসহায় হয়ে পড়েছে। এভাবে শ্যুটিং চলতে পারে না।’
চীনে গুলি কিনে যদি উদ্বৃত্ত থাকে কিছু, সেগুলো আনা যাবে কিনা নিশ্চিত নয়। তবে কমনওয়েলথে বেঁচে যাওয়া গুলি রেখে আসতে হয়েছে। পুনরায় রপ্তানি করতে হলে সরকারের অনুমতি লাগে। এটাও বড় সমস্যা।
বর্তমানে যেভাবে শ্যুটিং চলছে, তা দেখে শ্যুটিংয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত অভিজ্ঞ শ্যুটার সাবরিনা সুলতানা, ‘ভবিষ্যতে কীভাবে অনুশীলন করব, এ নিয়ে আমরা শঙ্কিত। এখন একটা গেমসে যাওয়ার সময়ই যদি গুলির চিন্তা করতে হয়, তাহলে আর তো কিছু বলার থাকে না।’

No comments

Powered by Blogger.