এই লড়াই একটা প্রেরণাও

মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের মাঝমাঠে কাল ছক্কা মারার অনুশীলন চলছিল। তামিম ইকবাল প্রায় প্রেসবক্সে পাঠিয়ে দিলেন একটা বল। উইকেটের পাশ থেকে শাহরিয়ার নাফীসের চিৎকার, ‘শাবাশ, শাবাশ!’
এই চিৎকার শুনে কে বলবে, ওপেনিংয়ে শাহরিয়ার-তামিম পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী! না, অনুশীলনে দলের ২৫ খেলোয়াড়ের যে সম্পর্ক, তা দেখে কিছু অনুমান করার জো নেই। তবে ভেতরে ভেতরে যে লড়াইটা চলছে তা খুব ইতিবাচক। লড়াইটা পেসারদের মধ্যে আছে, স্পিনারদের মধ্যে আছে; কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেটে এখন সবচেয়ে বেশি লড়াই চলছে ব্যাটসম্যানদের মধ্যে।
সর্বশেষ জাতীয় দলে যাঁরা খেলেছেন, তাঁরা রানে আছেন। জাতীয় লিগে জাতীয় দলের খেলোয়াড়েরা রান করেছেন, আবার বাইরে যাঁরা ছিলেন তাঁরাও রান করছেন। এ কথা নিশ্চিন্তে বলা যায়, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের জন্য দল করাটা নির্বাচকদের জন্য কঠিন একটা কাজ হবে।
অন্তত জহুরুল ইসলামের কথায় মনে হলো নির্বাচকদের এই মধুর সমস্যা উপহার দিয়ে তিনি খুশি, ‘আমাদের ব্যাটসম্যানদের যে কাজ করা দরকার, সেটা আমরা করতে পারছি। এখন দলে কে থাকবে, না থাকবে সেটা ঠিক করা নির্বাচকদের কাজ।’
গত যুক্তরাজ্য সফরের ওয়ানডেতে চল্লিশের ঘরে দুটি ইনিংস খেলেও জহুরুলের একাদশে ঠাঁই হচ্ছে না। এটি কঠিন হয়ে উঠেছে তাঁর ব্যাটিং পজিশনের কারণেই। এমনিতে জহুরুল ওপেনার, ইদানীং ৩ নম্বরে পাঠানো হচ্ছিল। সেখানেও এখন জায়গা মেলা ভার। কারণ প্রথম তিনটি পজিশনের জন্য এখন লড়ছেন ৫ জন ফর্মে থাকা ব্যাটসম্যান—তামিম ইকবাল, শাহরিয়ার নাফীস, ইমরুল কায়েস, জহুরুল ইসলাম ও জুনায়েদ সিদ্দিক।
এই লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত একাদশে জায়গা কাদের হবে, সেটা পরের কথা। তবে লড়াইটাকে দারুণ স্বাস্থ্যকর বলে মনে করছেন তামিম, ‘আমাদের ক্রিকেটের জন্য এটা দারুণ ব্যাপার। ভেতরে-বাইরে নিজেদের ওপর এ রকম যত চাপ থাকবে, দলের জন্য ততই ভালো।’
সবার মুখেই প্রায় একই সুর। বড় বড় দলের খেলোয়াড়েরাও কথা বলেন এই সুরে। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য ব্যাপারটা নতুন। জুনায়েদ সিদ্দিক বলছিলেন, নতুন এই ব্যাপারটাই বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নতির স্মারক।
শাহরিয়ার অবশ্য এখানে একটা পাদটীকা যোগ করছেন, ‘আমার জন্য ব্যাপারটা নতুন নয়। ক্যারিয়ারের শুরুতে আমি জাভেদ ভাই, নাফিস ইকবালদের সঙ্গে লড়াই করেছি। পরে কিছুদিন স্থিতিশীল থাকলেও বছর দুই ধরে তো লড়াই করেই যাচ্ছি।’
ব্যাটিংয়ে এরপরের তিনটি পজিশনের মধ্যে ৫ ও ৬-এ সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমের আপাতত কোনো চ্যালেঞ্জ নেই। চারে চ্যালেঞ্জ আছে জাতীয় লিগে দারুণ খেলা রকিবুল হাসানের। এখানে ফেরার জন্য দারুণ লড়াই করে যাচ্ছেন মোহাম্মদ আশরাফুল। ওপরের দিকের লড়াকুরাও চোখ রাঙাচ্ছেন এটা ছিনিয়ে নিতে।
রকিবুল অবশ্য এসব ‘চ্যালেঞ্জ-ট্যালেঞ্জ’ নিয়ে আপাতত মাথা ঘামাচ্ছেন না, ‘আমার কাজ যত বেশি সম্ভব রান করা। আমি সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি। বাকিটা তো আমার হাতে নেই।’ প্রায় একই কথা বলছেন নাঈম ইসলামদেরও।
লেট-মিডল অর্ডারে স্পিনিং অলরাউন্ডারের দুটি পজিশনের জন্য লড়ছেন নাঈম ইসলাম, মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দী ও মাহমুদউল্লাহ। তিনজনই বলার মতো পারফরম্যান্স করছেন। তার পরও কাউকে না কাউকে বাইরে থাকতে হবে!
তাতে নাকি এঁরা হতাশ নন। তেমনই বলছিলেন নাঈম, ‘হতাশ হলে তো খেলায় প্রভাব পড়বে। এ রকম প্রতিযোগিতা বরং আমাদের আরও ভালো করতে উৎসাহ দেয়।’
নাঈমের কথা শুনে মনে হয়, আসলেই বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

No comments

Powered by Blogger.