আফগানিস্তানের নিরাপত্তার অর্থে পকেট ভারী তালেবানের

আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষে যেসব চুক্তিভিত্তিক বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থা দায়িত্ব পালন করেছে, তাদের মাধ্যমে তালেবান জঙ্গিদের কাছে তহবিল পৌঁছেছে। গত বৃহস্পতিবার মার্কিন সিনেটের একটি প্রতিবেদনে এ কথা জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেসরকারি ওই নিরাপত্তা সংস্থাগুলো প্রায়ই আফগানিস্তানের যুদ্ধবাজ গোষ্ঠীর নেতাদের ভাড়া করেছে; যাঁরা তালেবান, হত্যা ও অপহরণের সঙ্গে জড়িত।
সিনেটের সশস্ত্র বাহিনী কমিটির প্রণীত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানে বেসরকারি বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ ও তাঁদের প্রতি নজরদারি ব্যবস্থা দুর্বল ছিল। কোম্পানিগুলো বেশির ভাগ সময়ই স্থানীয় সাধারণ আফগানদের সেনাসদস্য হিসেবে ভর্তি করতে ব্যর্থ হয়ে যুদ্ধবাজ নেতাদের ভাড়া করেছে। এ ব্যাপারে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনটি প্রকাশের সময় কমিটির চেয়ারম্যান ডেমোক্র্যাট পার্টির সিনেটর কার্ল লেভিন বলেন, ‘আফগানিস্তানে প্রায়ই বেসরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর আমাদের নির্ভরশীলতা যুদ্ধবাজ নেতাদের শক্তিশালী করেছে। আফগানিস্তানে সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে তারা ক্ষমতাধর হিসেবে ভূমিকা রেখেছে। এই চুক্তিভিত্তিক কোম্পানিগুলো আমাদের সেনাদের নিরাপত্তা এবং এই অভিযানের সাফল্য হুমকির মুখে ফেলেছে।’
কার্ল লেভিন বলেন, ‘বেশ কয়েকটি চুক্তিভিত্তিক নিরাপত্তা কোম্পানি জোট বাহিনীর বিরুদ্ধে কাজ করেছে—এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে। যে লড়াইয়ের জন্য তাদের ভাড়া করা হয়েছে, সেটাই ভণ্ডুল করার হুমকি সৃষ্টি করেছে তারা। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ যুদ্ধবাজ নেতা ও মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে যাওয়ার ছিদ্র আমাদের বন্ধ করা দরকার।’
প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে, কীভাবে কোম্পানিগুলো স্বল্প প্রশিক্ষিত ও অনভিজ্ঞ আফগানদের ভাড়া করেছে। কীভাবে বেশ কয়েকটি কোম্পানি জেনেশুনে তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক থাকা যুদ্ধবাজ নেতাদের তহবিল সরবরাহ করেছে।
আফগানিস্তানে বর্তমানে ২৬ হাজার বেসরকারি নিরাপত্তা সদস্য কাজ করছেন। প্রতি ১০ জনের নয়জনই কাজ করছেন মার্কিন সরকারের পক্ষে। এসব বেসরকারি নিরাপত্তা সদস্য কূটনৈতিক মিশন থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্বে রয়েছেন।
সিনেটের ওই প্রতিবেদনে শিনদান্দ বিমান ঘাঁটির একটি ঘটনার উদাহরণ টানা হয়। বলা হয়, আর্মার গ্রুপ নর্থ আমেরিকা নামের একটি কোম্পানি ওই বিমান ঘাঁটিতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় দুই প্রতিপক্ষ যুদ্ধবাজ নেতাকে ভাড়া করে। চুক্তির মেয়াদ অনুযায়ী পুরো সময় দুই পক্ষের সদস্যরা পরস্পরের বিরুদ্ধে হামলা ও হত্যার ঘটনায় জড়িত ছিল।
এই প্রতিবেদনের জবাবে বেসরকারি নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত পর্ষদের সভাপতি ডগ ব্রুকস বলেন, রণাঙ্গনে চুক্তিভিত্তিক কোম্পানিগুলোকে নিয়োগ দেওয়া নিয়ে কঠিন সমস্যায় পড়তে হয়। অন্যদিকে মার্কিন কংগ্রেস সবচেয়ে কম দামে লোক ভাড়া করতে চায়। এতে মানসম্পন্ন কোম্পানিগুলো বাদ পড়ে।

No comments

Powered by Blogger.