সারকোজি অনড়, কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিকোলা সারকোজির সংস্কার কর্মসূচির প্রতিবাদে সে দেশে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন শ্রমিক-কর্মচারীরা। তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন শিক্ষার্থীরাও। গতকাল মঙ্গলবার ছাত্র ও শ্রমিক-কর্মচারীরা বিক্ষোভ জানাতে বিভিন্ন শহরের রাজপথে নেমে এলে পুলিশের সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষ হয়। প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেয়।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিকোলা সারকোজি বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, অবসরে বয়সসীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে। প্রেসিডেন্ট সারকোজির সরকারের নেওয়া পেনশন সংস্কার কার্যক্রমে সরকারি কর্মীদের অবসর নেওয়ার বয়স ৬০ থেকে বাড়িয়ে ৬২ বছর করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। মূলত এর বিরুদ্ধেই প্রতিবাদ করছেন তাঁরা। এর জের ধরে ফ্রান্সজুড়ে কয়েক দিন ধরে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন শ্রমিক সংঘ ধর্মঘট ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছে।
গতকাল প্যারিসের কাছে নানতেরে এলাকায় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা গাড়ি পুড়িয়ে দেন এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন। সে দেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৩৭৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
দেশটির বিচারমন্ত্রী মিশেল এলিয়ট-মরিয়ে বলেন, ‘আমাদের কঠোর হতে হবে। প্রতিবাদ, ধর্মঘট করার অধিকার সবার আছে। তাই বলে ইচ্ছামত ভাঙচুর করার অধিকার নেই কারও।’ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিক্ষোভ-সংঘর্ষের ঘটনায় গত সোমবার বিভিন্ন শহর থেকে ২৯০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসব ঘটনায় পুলিশের চার কর্মকর্তা আহত হন।
সংস্কার কর্মসূচির প্রতিবাদে ট্রাকচালকেরা প্যারিসের কাছে এবং দেশের বিভিন্ন প্রদেশে ‘ধীরে চলো’ কর্মসূচি পালন করেন। বিভিন্ন পণ্যগুদামের প্রবেশপথ আটকে দেন চালকেরা এবং জ্বালানি তেলের ডিপোতে শ্রমিকদের ধর্মঘটের প্রতি সমর্থন জানান। গত সপ্তাহ থেকে দেশটির সব কয়টি তেলের ডিপোতে ধর্মঘট চলছে। এতে দেশজুড়ে দুই হাজার ৬০০ পেট্রল স্টেশনে তেল সরবরাহে সমস্যা দেখা দিয়েছে।
তেল সরবরাহের সমস্যার কারণে গতকাল প্যারিসের অরলি বিমানবন্দরের অর্ধেক ফ্লাইট বাতিল করা হয়। এ ছাড়া শার্ল দ্য গল বিমানবন্দর ও অন্যান্য আঞ্চলিক বিমানবন্দরেও প্রতি তিনটি ফ্লাইটের একটি বাতিল হয়েছে।
ফ্রান্সের ফুয়েল অ্যান্ড হিটিং ফেডারেশন জানিয়েছে, পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। ই.লেকলার্ক নেটওয়ার্ক অব সুপারমার্কেটসের প্রধান মিশেল-এদোয়ার্দ লেকলার্ক বলেন, ‘রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলে তেল ডিপোগুলোকে জিম্মি করা হয়েছে। জ্বালানি তেলের অপব্যবহার করা হচ্ছে।’ তবে আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা জানিয়েছে, পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য ফ্রান্সের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে।
এদিকে জ্বালানি পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে জানানো হয়, অনেক এলাকায় বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে বেশি করে তেল কিনে রাখায়, পাশাপাশি সরবরাহব্যবস্থায় সমস্যা হওয়ায় কয়েকটি এলাকায় জ্বালানি তেলের সংকট দেখা দিয়েছে। বৈঠকে তেল সরবরাহ স্বাভাবিক করতে একটি পরিকল্পনা করা হয়েছে।
রেলশ্রমিক, ডাক বিভাগের কর্মী, টেলিফোন বিভাগের কর্মচারী, শিক্ষক ও গণমাধ্যমকর্মীদের একাংশও ধর্মঘট পালন করছে।
ফরাসি সরকারের মনোভাব পরিবর্তনের কোনো ইঙ্গিত এখনো মেলেনি। বরং প্রস্তাবটি পার্লামেন্টে তোলার আগে চূড়ান্ত খতিয়ে দেখার পর্যায়ে রয়েছে। সোমবার প্রকাশিত এক জনমত জরিপের ফল থেকে জানা গেছে, ৭১ শতাংশ ফরাসি বিক্ষোভকারীদের সমর্থন করছে।

No comments

Powered by Blogger.