ভারতকে গুঁড়িয়ে শ্রীলঙ্কাই চ্যাম্পিয়ন

কদিন আগে টেস্ট সিরিজের সেরা হয়ে একটা গাড়ি পেয়েছিলেন বীরেন্দর শেবাগ। কাল ওয়ানডে সিরিজের সেরা হয়েও আরেকটি পেলেন। নিজের গ্যারেজটাকে মোটরগাড়ি দিয়েই হয়তো ভরিয়ে ফেলবেন ভারতের বিস্ফোরক ওপেনার। কিন্তু একই সঙ্গে মনের মধ্যে একটা শূন্যতারও মালা গাঁথতে থাকবেন। আরেকটা টুর্নামেন্টের ফাইনালেও ভারতকে জেতাতে পারলেন না।
গত জুনে ডাম্বুলার এই রনগিরি স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপের ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছিল ভারত। ‘ফাইনালে ওঠার দল’-এর পরিচয় ঘুচিয়ে তাদের চ্যাম্পিয়ন দলে পরিণত হওয়ার চেষ্টাটা হয়তো গতি পেতে পারত এখান থেকেই। জয় যেমন একটা অভ্যাসের ব্যাপার, চ্যাম্পিয়ন হওয়াটাও তা-ই। কিন্তু শ্রীলঙ্কা এবার তাদের চ্যাম্পিয়ন হতে দিল না। কাল ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে সব বিভাগে ভারতকে নাস্তানাবুদ করে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কাই হলো চ্যাম্পিয়ন। এ টুর্নামেন্টে আগের দুই ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে ২০০ ও শ্রীলঙ্কার কাছে ৮ উইকেটে হারা ভারত চ্যাম্পিয়ন হলে সেটি হতো অঘটন। শ্রীলঙ্কা অঘটন ঘটতে দেয়নি। ওপেনার তিলকরত্নে দিলশানের সেঞ্চুরি (১১০), অধিনায়ক কুমার সাঙ্গাকারার ৭১ রান ও মাহেলা জয়াবর্ধনের ৩৯ রানের সুবাদে ৮ উইকেটে ২৯৯ রান তুলেছিল শ্রীলঙ্কা। এই মাঠের তৃতীয় সর্বোচ্চ এ ইনিংসেই জয়ের গ্যারান্টি পেয়ে যায় সাঙ্গাকারার দল। এত বড় রান টপকে জেতাটা সহজসাধ্য নয়। ফর্মে থাকা একমাত্র ব্যাটসম্যান শেবাগের আরেকটা সেঞ্চুরি হলে সম্ভব ছিল। কিন্তু টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রানের মালিকের বারকয়েক রানআউট হওয়ার চেষ্টাটা ‘সফল’ হয় ৩৮ রানের মাথায়, যখন তাঁর রান ২৮। তখনই আসলে ম্যাচটা তার ভাগ্য লিখে ফেলেছে। কিন্তু তার পরও তা ‘কী হয় কী হয়’ উত্তেজনা কিছুক্ষণ ছড়াল বিরাট কোহলি, সুরেশ রায়না ও মহেন্দ্র সিং ধোনির কল্যাণে। ভারত ৪৬.৫ ওভারে ২২৫ রানে অলআউট হয়ে ৭৪ রানে হারের পর অবশ্য বলতে হচ্ছে, ম্যাচটা উত্তেজনা ছড়াতে চেয়েছিল আরকি! জয়-পরাজয়ের ব্যবধান ৭৪ রান হলে তো আদতে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাই হয়নি। আসলেও তা-ই। প্রথমে ব্যাটিং, তারপর বোলিং ও ফিল্ডিং দিয়ে পুরোটা ম্যাচে ছড়ি ঘুরিয়ে গেছে শ্রীলঙ্কা। মাপা লাইন-লেন্থে বল করে শেবাগ, কোহলি, যুবরাজ, রায়নাদের জায়গাই দেননি মালিঙ্গা, কুলাসেকারা, থিসারা পেরেরা, সুরাজ রণদিভরা। শেষের দুজন নিয়েছেন তিনটি করে উইকেট। অফস্পিনার রণদিভ শেষ লড়াইয়ের শিখা ধোনিকে (৬৭) বোল্ড করে গুটিয়ে দিয়েছেন ভারতের ইনিংস। একেবারে আদর্শ সমাপ্তি। এই রণদিভের একটা নো বলকে কেন্দ্র করে শ্রীলঙ্কাকে যতটা মনঃকষ্ট সইতে হয়েছে, তার যেন একটা প্রতীকী জবাব এই মুহূর্তটি।
ম্যাচের আগে ভারত থেকে দলের জন্য শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছিলেন খোদ শচীন টেন্ডুলকার। কিন্তু এই সিরিজে এর আগে ৮৮, ১০৩ আর ২২৩ রানে অলআউট হওয়া ভারত কতদূর আর যেতে পারত! গেল সামর্থ্যের সর্বোচ্চ সীমা ২২৫ রান পর্যন্ত। টেন্ডুলকারের শুভেচ্ছা রাতারাতি বদলে দিতে পারল না ধোনির ওয়ানডে দলকে।

প্রথম
এটি দিলশানের অষ্টম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। কিন্তু দেশের মাটিতে এই প্রথম।

No comments

Powered by Blogger.