রেল দুর্ঘটনার জন্য সিপিএমকে দায়ী করলেন মমতা

ভারতের ক্ষমতাসীন জোটের শরিক দল তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান ও কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজনৈতিকভাবে সিপিএমকে উৎখাত না করা পর্যন্ত আমাদের বিজয় হবে না।’ রেল দুর্ঘটনার জন্য সিপিএমকে দায়ী করেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গে মাওবাদীদের দমনে যৌথ বাহিনীর অভিযান বন্ধেরও দাবি জানান রেলমন্ত্রী।
গতকাল বুধবার পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার ধর্মতলায় ভিক্টোরিয়া পার্কে শহীদ দিবস উপলক্ষে তৃণমূল কংগ্রেসের বিশাল জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর দল বিপুল জয় নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের শাসন ক্ষমতায় আসবে। কলকাতা করপোরেশনের নির্বাচনে তাঁরা একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছেন। বিধানসভা নির্বাচনেও তাঁর দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে। মমতা জানান, কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করেই বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর দল অংশ নেবে।
তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী বলেন, সিপিএম রেলকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রে মেতেছে। গত পৌরসভার নির্বাচনের আগে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এবার শহীদ দিবসের আগে বনাঞ্চল ও উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনা ঘটানো হলো। তিনি বলেন, ‘মন্ত্রীর পদ থেকে আমি কেন পদত্যাগ করব? বরং সিপিএমের উচিত রাজ্যের ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া।’
পশ্চিমবঙ্গের মাওবাদী দমনে যৌথ বাহিনীর অভিযান বন্ধের দাবি জানিয়ে মমতা অভিযোগ করেন, যৌথ বাহিনীর ছত্রচ্ছায়ায় সিপিএম এই অভিযান চালাচ্ছে। এই অভিযান বন্ধে তিনি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করবেন বলে উল্লেখ করেন। আগামী ৮ আগস্ট তিনি লালগড়ে সভা করবেন বলে জানান।
মমতা বলেন, ৩৪ বছরের সিপিএমের শাসনে এই রাজ্যে ৬০ হাজার মানুষকে খুন করা হয়েছে। এই খুনের বিচার হবে। আগস্ট থেকে রাজ্যব্যাপী লাগাতার কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে পুলিশের গুলিতে যুব কংগ্রেসের ১৩ কর্মী নিহত হয়। ওই সময় রাজ্য যুব কংগ্রেসের সভানেত্রী ছিলেন মমতা। এর পর থেকে মমতার নেতৃত্বে ২১ জুলাইকে শহীদ দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে।
ট্রেন দুর্ঘটনা তদন্তের দায়িত্ব পেল সিআইডি
পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার সাঁইথিয়া স্টেশনে ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব সিআইডিকে দেওয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাজ্যের সচিবালয় মহাকরণে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এ কথা জানান। এদিকে এবারের দুর্ঘটনার পর ভারতের গণমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে।
ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, আগের রেলমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদবের পাঁচ বছরের চেয়ে বর্তমান মন্ত্রী মমতার প্রায় ১৪ মাসেই বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে। দ্য ট্রিবিউন, দ্য হিন্দু, মেইল টুডে, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ইকোনমিক টাইমস ও ডেকান হেরাল্ড-এর সম্পাদকীয়তে রেল মন্ত্রণালয় এবং রেলমন্ত্রীর কঠোর সমালোচনা করা হয়।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস তাদের সম্পাদকীয়তে বলেছে, মমতার চলে যাওয়া উচিত। ট্রিবিউন বলেছে, রেলমন্ত্রীর উচিত কলকাতার চেয়ে দিল্লিতে বেশি সময় কাটানো। এদিকে গত মঙ্গলবার সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও রেলের সুরক্ষার গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে।

No comments

Powered by Blogger.