দোলাচলেই দ্রগবা-রোবেন

আর মাত্র চারটি দিনের অপেক্ষা। কোন তারকা কী বলছেন, কোচদের মনের অবস্থা কী—কত বিষয় নিয়েই না আলোচনা হতে পারত এখন। তা না, বিশ্বকাপ শুরুর এই অন্তিমলগ্নে এসে প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠল ইনজুরি।
আপাতত এসব আলোচনার শীর্ষভাগ-জুড়ে আছেন দিদিয়ের দ্রগবা ও আরিয়েন রোবেন। এই দুজনেরই ইনজুরির পর খবর ছিল, বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়েছেন তাঁরা। কিন্তু এখনো পর্যন্ত দ্রগবার ব্যাপারে আশা শুনিয়ে যাচ্ছে আইভরিকোস্ট। অন্যদিকে রোবেনের ব্যাপারে নিশ্চিত কোনো খবর নেই। শনিবার নিজ দেশে হাঙ্গেরির বিপক্ষে ৬-১ গোলে জেতা ম্যাচে ঊরুতে চোট পান এই মিডফিল্ডার। ওই ম্যাচে তিনি নিজেও করেছেন জোড়া গোল।
দ্রগবা চোট পেয়েছিলেন একদিন আগে। সুইজারল্যান্ডের সিয়নে শুক্রবার জাপানের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে হাত ভেঙে যায় তাঁর। এর পর থেকেই আইভরিকোস্ট অধিনায়ককে নিয়ে সংশয়। নিশ্চিত কোনো খবর এখনো নেই। তবে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পরশু তাঁর হাতে সফলভাবে অস্ত্রোপচার করানো হয়েছে। ১১ জুন বিশ্বকাপ শুরু হলেও দ্রগবাদের প্রথম ম্যাচ পড়েছে ১৫ তারিখ। ফলে বাড়তি কিছুদিন সময় পাওয়া যাবে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা এই স্ট্রাইকারের পুরো ফিট হয়ে উঠতে। দ্রগবা প্রথম ম্যাচে খেলতে না পারলেও অন্তত গ্রুপ পর্বের বাকি দুই ম্যাচে তাঁকে পেতে চায় আইভরিকোস্ট।
রোবেনকেও পাওয়ার আশা ছাড়ছে না ডাচরা। রোবেনকে দেশে রেখেই দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়েছে দল। দেশেই চলবে তাঁর চিকিৎসা। তাঁর জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করবে নেদারল্যান্ড। দেশে রেখে গেলেও পুরো দলের শুভকামনা থাকছে তাঁর জন্য। যদিও হল্যান্ড অধিনায়ক জিওভান্নি ফন ব্রঙ্কহর্স্টের আশঙ্কা, রোবেনের বিশ্বকাপ হয়তো শেষ হয়েই গেছে, ‘আমি আশাবাদী হতে পারছি না। ওর খুব ব্যথা হচ্ছে এবং হাঁটতেই কষ্ট হচ্ছে।’
আগেই বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেছে ইংলিশ অধিনায়ক ফার্ডিনান্ডের। স্টিভেন জেরার্ডকে নতুন অধিনায়ক ঘোষণা করা হয়েছে, নেওয়া হয়েছে তাঁর বদলি খেলোয়াড়। ইংল্যান্ডের রাস্টেনবার্গ বেসক্যাম্প থেকে ফার্ডিনান্ডের বিদায়ের সব আয়োজন শেষ হলেও, ফার্ডিনান্ড নিজে নাকি দেশে ফিরতে চাচ্ছেন না। ফার্ডিনান্ডও নাকি এখন বেকহামের মতো দলের সঙ্গে থেকে সতীর্থদের উজ্জীবিত করতে চান। এখন দেখার বিষয়, ইংল্যান্ড উজ্জীবিত হতে কতজনকে এ রকম রাখতে পারে!
সে ফার্ডিনান্ডের যাই হোক, তার মতো বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়া থেকে রেহাই পেয়ে গেছেন ডিয়েগো ফোরলান। উরুগুয়ের এই বড় তারকা কিম্বার্লিতে বেসক্যাম্পের অনুশীলনে পায়ে চোট পেয়েছিলেন। খানিক পরে তাঁকে সুস্থ ঘোষণা করা হয়েছে। একই অবস্থা স্লোভাকিয়ার ডিফেন্ডার মার্টিন স্কার্টেলের। কোস্টারিকার বিপক্ষে ৩-০ গোলে জেতা ম্যাচে ইনজুরিতে পড়েছিলেন এই লিভারপুল ডিফেন্ডার। জাপানের ডিফেন্ডার ইয়াসুয়ুকি অবশ্য কমপক্ষে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ মিস করতে যাচ্ছেন। দ্রগবার ইনজুরিতে পড়া ম্যাচেই হাঁটুতে চোট পেয়েছিলেন তিনি।
সব দেখেশুনে মনে হচ্ছে, প্রস্তুতি ম্যাচে না নেমে ঘরে বসে থাকাই এখন তারকাদের জন্য নিরাপদ। তবে ক্যাপেলো জানিয়ে দিয়েছেন, শেষ প্রস্তুতি ম্যাচেও দলের তারকাদের মাঠে নামাবেন তিনি, ‘সতর্ক থাকলেও অনেক সময় কাজ হয় না। কেউ ভবিষ্যৎ জানে না। কিন্তু খেলতে তো হবে। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে খেলবে এমন সব খেলোয়াড়কে আমার (প্রস্তুতি ম্যাচে) খেলাতেই হবে।’
দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের ঠিক আগে আগে তৈরি হওয়া ইনজুরির মিছিল দেখে একটু সান্ত্বনা পেতে পারেন মাইকেল বালাক, রিও ফার্ডিনান্ডরা। এবার বড় তারকার ছিটকে পড়া শুরু হয়েছিল বালাককে দিয়ে। চেলসির হয়ে এফএ কাপের ফাইনালে খেলতে গিয়ে চোট পান জার্মান অধিনায়ক। এর পর থেকে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, চেলসির খেলোয়াড়দেরই এবার বিশ্বকাপে কোনো একটা অভিশাপ লেগেছে। বালাকের পর একে একে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়েছেন চেলসির খেলোয়াড় ঘানার মাইকেল এসিয়েন, নাইজেরিয়ার জন ওবি মিকেল এবং সংশয়ে আছেন দ্রগবা।

No comments

Powered by Blogger.