গাজা অভিমুখী ত্রাণবাহী আরেকটি জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ইসরায়েল

অবরুদ্ধ গাজাবাসীর জন্য ত্রাণবাহী জাহাজ র‌্যাচেল কোরির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা। গতকাল শনিবার মিসর উপকূল থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমায় জাহাজটিতে ওঠে ইসরায়েলের নৌসেনারা। এই ত্রাণ কর্মকাণ্ডের উদ্যোক্তারা ও ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী দুই পক্ষই বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল আভিতাল লেইবোভিচ বলেন, ‘জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নিতে কয়েক মিনিট সময় লেগেছে এবং তাঁদের কোনো বাধা দেওয়া হয়নি। এখন সেটি আশদোদ বন্দরের পথে রয়েছে।’ জাহাজে চড়ার আগে সেটিকে গতিপথ পরিবর্তনের আহ্বান জানায় ইসরায়েলিরা।
এর আগে গাজায় জাহাজটিকে স্বাগত জানানোর কমিটির মুখপাত্র আমজাদ আল-শাওয়া বলেন, গাজা থেকে ৩৫ মাইল দূরে র‌্যাচেল কোরিকে বাধা দিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা। ইসরায়েলি নৌবাহিনীর বেশ কয়েকটি নৌযান জাহাজটিকে ঘিরে ফেলেছে। তারা জাহাজটিকে সম্ভবত আশদোদে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে। জাহাজের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, আবার কোনো সহিংস ঘটনা এড়ানোর জন্য সব পক্ষের সঙ্গে কাজ করছে তারা। শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ফিলিপ ক্রাউলি বলেন, ‘আমরা ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখছি। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গেও আলোচনা করছি।’ তবে জাহাজটিকে আশদোদ বন্দরে নিয়ে যাওয়ার পক্ষে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ত্রাণবাহী জাহাজ র‌্যাচেল কোরি বৃহস্পতিবার গাজার পথে রওনা দেয়। জাহাজে শিশুদের জন্য লেখাপড়ার উপকরণ, চিকিৎসা-সরঞ্জাম ও সিমেন্ট রয়েছে। জাহাজের ১১ জন সাহায্যকর্মীর মধ্যে ছয়জন ব্রিটিশ ও আইরিশ এবং পাঁচজন মালয়েশীয়। এদের মধ্যে রয়েছেন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী সাহিত্যিক মেইরিড ম্যাগুইর ও জাতিসংঘের সাবেক সহকারী মহাসচিব ডেনিশ হ্যালিডে। জাহাজটিতে নয়জন ক্রুও রয়েছেন। গত সোমবার গাজা অভিমুখী একটি ত্রাণবাহী নৌবহরে হামলা করে ইসরায়েলি সেনারা। এতে কমপক্ষে নয়জনের মৃত্যু হয়। সেনারা নৌবহরের জাহাজ ও সাহায্যকর্মীদের আটক করে। পরে তাঁদের মুক্তি দেওয়া হয়।
এদিকে গত সপ্তাহে ত্রাণবাহী নৌবহরে হামলায় নিহত তুর্কি সাহায্যকর্মীদের গত শুক্রবার তুরস্কে দাফন করা হয়েছে। দাফনের আগে মৃতদেহগুলোর ময়নাতদন্ত করে তুরস্ক কর্তৃপক্ষ। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাহায্যকর্মীদের খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় তুরস্কে ইসরায়েল-বিরোধী বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।
তুরস্কের বিচার মন্ত্রণালয় পরিচালিত ওই ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ত্রাণবাহী জাহাজে তুরস্কের নয়জন নাগরিককে ৩০টি গুলি করা হয়। এদের মধ্যে পাঁচজনকে মাথায় গুলি করা হয়েছে। ৬০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধকে কপালে, বুকে, পিঠে ও পশ্চাদ্দেশে চারটি গুলি করা হয়েছে। ১৯ বছর বয়সী এক তরুণকে মাত্র ৪৫ সেন্টিমিটার দূর থেকে মুখে, মাথার পেছনে, পায়ে ও পিঠে গুলি করা হয়। ওই কিশোরের মার্কিন নাগরিকত্বও রয়েছে।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ওই ত্রাণবাহী নৌবহরে থাকা সাহায্যকর্মীরাও এখন ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছেন। একটি বেসরকারি সাহায্য সংস্থার চেয়ারম্যান ব্রিটিশ নাগরিক ইসমাইল প্যাটেল বলেন, ‘আমরা খুবই ভয়ংকরভাবে গুলি করতে দেখেছি। ইসরায়েলিরা “হত্যার জন্য গুলি” করার নীতি অবলম্বন করেছিল।’ তবে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এখনো তাদের বক্তব্য থেকে সরে আসেনি। তাদের দাবি, সেনারা আত্মরক্ষার্থে গুলি ছুড়েছিল।
শুক্রবার ইস্তাম্বুলে ঐতিহাসিক বায়েজিদ মসজিদে নিহত ব্যক্তিদের জানাজা শেষে দাফন করা হয়। প্রায় ১০ হাজার মানুষ জানাজায় অংশ নেয়। জানাজার পর তুরস্ক ও ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে ওই জনতা ইসরায়েল-বিরোধী স্লোগান দেয়।
এদিকে লেবাননের ইসরায়েল-বিরোধী গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ দ্বিতীয় একটি ত্রাণবাহী নৌবহর ‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা টু’ গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন। ‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা’ নামের প্রথম নৌবহরে ইসরায়েলি হামলার ঘটনায় তুরস্কের কঠোর অবস্থানেরও প্রশংসা করেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.