পাকিস্তানের পার্লামেন্টে সংবিধান সংশোধন বিল উত্থাপন

পাকিস্তানের পার্লামেন্টে গতকাল শুক্রবার সংবিধান সংশোধনবিষয়ক একটি বিল উত্থাপন করা হয়েছে। ওই বিলে দেশটির প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমানোসহ বেশ কিছু প্রস্তাব করা হয়।
সংবিধান সংস্কারবিষয়ক সংসদীয় কমিটির (পিসিসিআর) প্রধান রাজা রাব্বানি ‘১৮তম সংশোধনী বিল’ নামের ওই বিল পার্লামেন্টে উত্থাপন করেন। এর আগে পার্লামেন্টে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি। তিনি বলেন, ‘সংবিধান সংশোধনের প্রাক্কালে আমি সবাইকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। এটি একটি ঐতিহাসিক ব্যাপার। অনেকে ভাবছেন, সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। আমি বলব, এই সংশোধনের মাধ্যমে পার্লামেন্ট শক্তিশালী হবে।’
রাজা রাব্বানি বলেন, সংবিধানের এই সংশোধনী পার্লামেন্টের সর্বোচ্চ ক্ষমতা নিশ্চিত করবে।
বিলটি পাস হলে প্রেসিডেন্ট পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে বা প্রধানমন্ত্রীকে বরখাস্ত করতে পারবেন না। তিনি সেনাবাহিনীর প্রধান, প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা বিচারক নিয়োগ দেওয়ার ক্ষমতাও হারাবেন। এতে বিচারক নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠ বিচারক ও সরকারি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত একটি কমিশনকে ক্ষমতা দেওয়া হবে।
পাকিস্তানে বর্তমানে কোনো ব্যক্তি দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন না। উত্থাপিত বিলে এই বিধান তুলে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশটির বিরোধীদলীয় নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের আবারও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে আইনি বাধা দূর হবে।
সংবিধান সংশোধন হলে পাকিস্তানের প্রদেশগুলো আরও বেশি স্বায়ত্তশাসন ভোগ করবে। বিলে পশতু জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের নাম পরিবর্তন করে খাইবার-পাখতুনখাঁ করারও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
এখন বিল নিয়ে পার্লামেন্টে আলোচনা হবে। সব দলের প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত সংবিধান সংস্কারবিষয়ক কমিটি ওই বিলের খসড়া তৈরি করে। তাই খুব সহজেই পার্লামেন্টের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন পেয়ে এটি পাস হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগামী সোমবার প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির পার্লামেন্টে ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক সামিনা আহমেদ বলেন, এর মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট জারদারি বিরোধী দলগুলোকে শান্ত করতে পারবেন। কিন্তু তাঁর (জারদারি) বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা পুনরায় চালু হওয়ায় সরকারের মধ্যেই একটা চাপ কাজ করবে।
রাজা রাব্বানির নেতৃত্বে প্রায় নয় মাস কাজ করে সংবিধান সংস্কারবিষয়ক সংসদীয় কমিটি এই বিলের খসড়া তৈরি করে। এতে পাকিস্তানের সংবিধানের ইতিহাসে একবারে সবচেয়ে বেশি ধারায় সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়েছে। বিলে মোট ৭০টি ধারা সংশোধনের কথা উল্লেখ করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.