নিউইয়র্কে ভয়াবহ বোমা হামলার পরিকল্পনা ছিল নাজিবুল্লাহর

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক নগরে ভয়াবহ বোমা হামলা পরিকল্পনার কথা স্বীকার করেছেন আল-কায়েদা জঙ্গি নাজিবুল্লাহ জাজি। নিউইয়র্ক নগরের পাতালরেলে গত সেপ্টেম্বরে বোমা হামলার প্রস্তুতি ছিল তাঁর। আফগানিস্তানে মার্কিন দখলদারির প্রতিবাদে তিনি ওই আত্মঘাতী জঙ্গি হামলা চালাতে চেয়েছিলেন।
ব্রুকলিনের ফেডারেল আদালতে গত সোমবার স্বেচ্ছা জবানবন্দি দিয়েছেন নাজিবুল্লাহ জাজি (২৫)। বিচারক রেমন্ড ডিয়ারির আদালতে দাঁড়িয়ে জঙ্গি নাজিবুল্লাহ তাঁর হামলা পরিকল্পনার বর্ণনা দেন। দীর্ঘ তদন্তের একপর্যায়ে সরকারপক্ষের সঙ্গে বিচারিক সমঝোতা অনুযায়ী নাজিবুল্লাহ ওই জবানবন্দি দিলেন।
আফগানিস্তান থেকে আসা অভিবাসী পরিবারের সন্তান নাজিবুল্লাহ। একসময় নিউইয়র্কে বসবাস করেছেন তিনি। সাম্প্রতিক সময়ে নাজিবুল্লাহর পরিবার কলোরাডো নগরের ডেনভার শহরে স্থানান্তরিত হয়। তিনি বিমানবন্দরের বাসচালক হিসেবে কাজ করতেন। কয়েক বছর আগেও নিউইয়র্কে বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের কাছাকাছি তৈরি খাবার বিক্রি করতেন। অনেকটা নাটকীয়ভাবেই গত বছর ১৯ সেপ্টেম্বর পুলিশ নাজিবুল্লাহকে গ্রেপ্তার করে। বোমা তৈরির সরঞ্জাম নিয়ে এ সময় তিনি নিউইয়র্ক আসার পথে তল্লাশির মুখোমুখি হন। পুলিশের নজরদারি টের পেয়ে বোমা তৈরির আলামত নষ্ট করার চেষ্টা করেন। হামলা পরিকল্পনা নিয়ে টেলিফোনে কথা বলেন সহযোগীদের সঙ্গে।
নাজিবুল্লাহকে গ্রেপ্তারের জের ধরে পুলিশ একজন মসজিদের ইমামসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার হওয়ার পর নাজিবুল্লাহ কোনো জঙ্গিবাদের সঙ্গে তাঁর সংশ্লিষ্টতা প্রথম দফা অস্বীকার করলেন। মার্কিন গোয়েন্দাদের ব্যাপক তদন্তে বেরিয়ে আসে ভয়ানক সব তথ্য। নাজিবুল্লাহর জঙ্গি পরিকল্পনার দায়ে তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যদের ওপরও আইনের খড়্গ নেমে আসে। একপর্যায়ে নাজিবুল্লাহ স্বেচ্ছা জবানবন্দি দিয়ে সরকার পক্ষের সঙ্গে সহযোগিতায় সম্মত হন।
গত সোমবার আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে নাজিবুল্লাহ বলেন, জঙ্গি প্রশিক্ষণের জন্য ২০০৮ সালে তিনি পাকিস্তান সফর করেন। তালেবানদের সঙ্গে যোগ দিয়ে আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার লক্ষ্য ছিল তাঁর। পাকিস্তানে জঙ্গি প্রশিক্ষণকেন্দ্রেই আল-কায়েদার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ঘটে। আল-কায়েদার পক্ষ থেকে তাঁকে জেহাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়। বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বাজারে সহজলভ্য রাসায়নিক দ্রব্য সংগ্রহ করে শক্তিশালী বোমা তৈরির কৌশল আয়ত্ত করেন তিনি। এ সংক্রান্ত তথ্য তাঁর কম্পিউটারে পাওয়া গেছে। নাজিবুল্লাহ যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে এসব রাসায়নিক দ্রব্য সংগ্রহ করেন। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগ করেন।
নাজিবুল্লাহর গ্রেপ্তার হওয়ার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে জঙ্গিবাদবিরোধী ব্যাপক অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু হয়। এই তদন্ত এখনো অব্যাহত রয়েছে এবং এর জের ধরে আরও গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটতে পারে বলে সরকারি মহল থেকে আভাস দেওয়া হয়েছে। আদালতে দাঁড়িয়ে নাজিবুল্লাহ অবলীলায় স্বীকার করেন, আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ করে নিজের জীবন উত্সর্গ করার পরিকল্পনা ছিল তাঁর।
মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল এরিক হোল্ডার ওয়াশিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘১১ সেপ্টেম্বরের’ ঘটনার পর নাজিবুল্লাহর হামলা পরিকল্পনাটি ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। গোয়েন্দা বিভাগের সমন্বিত তত্পরতায় এ হামলাটি ঠেকানো সম্ভব হয়েছে। নাজিবুল্লাহর জঙ্গি পরিকল্পনাটি ছিল একটি সত্যিকারের পরিকল্পনা, যার পরিণাম ভয়াবহ হতে পারত।
নিউইয়র্ক নগরের মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গ বলেছেন, নাজিবুল্লাহর জঙ্গি হামলা পরিকল্পনা কোনো হালকা বিষয় ছিল না। আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার পর নাজিবুল্লাহর আইনজীবী উইলিয়াম স্টেমপার বলেছেন, জবানবন্দিতেই মামলার বিস্তারিত প্রকাশ পেয়েছে। জবানবন্দি অনুযায়ী আগামী জুন মাসে নাজিবুল্লাহর দণ্ড ঘোষণা করবেন আদালত। চূড়ান্ত দণ্ডে তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.