হঠাৎ ঋণসংকটে টালমাটাল দুবাই

ধাক্কাটা এল ঈদুল আজহার ছুটির আগে। আর তা মধ্যপ্রাচ্যের ধনাঢ্য রাষ্ট্র সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইতে। এখানকার সুবৃহত্ বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান দুবাই ওয়ার্ল্ড গত ২৫ নভেম্বর জানিয়ে দেয়, তারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাদের ঋণ পরিশোধ করতে পারবে না। এ জন্য ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে ছয় মাস সময়ও চায় প্রতিষ্ঠানটি।
এই খবর ছড়িয়ে পড়লে মধ্যপ্রাচ্যসহ এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার শেয়ারবাজার টালমাটাল হয়ে পড়ে। কারণ, বহু প্রতিষ্ঠান দুবাই ওয়ার্ল্ডের বন্ড কিনেছে। আর এসব প্রতিষ্ঠানের অনেকগুলোই আবার বিভিন্ন শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে আছে।
দুবাই ওয়ার্ল্ডের অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলো আবাসন, আর্থিক ও পর্যটন খাতে বড় ধরনের বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো নাখিল যে কিনা ‘পাম জুমেইরাহ’ ও ‘ওয়ার্ল্ড আইল্যান্ডস’ নামে দুটি বিরাট উচ্চাভিলাষী প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। নাখিলের ৪০০ কোটি ডলারের ইসলামি বন্ড আগামী মাসে পরিশোধ করার কথা।
দুবাই ওয়ার্ল্ডের এই ঋণসংকট পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে নাড়িয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে দুবাইয়ের চাকচিক্যময় সমৃদ্ধির ভিতে ধাক্কা লেগেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
ঋণসংকট যেন বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক না ছড়ায় সে জন্য অবশ্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত রোববারই তত্পর হয়ে ওঠে। সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়, দুবাইতে ব্যবসারত দেশি-বিদেশি কোনো ব্যাংকের অর্থ প্রয়োজন হলে তা জোগান দেওয়া হবে।
তবে আরব আমিরাতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক দুবাই ওয়ার্ল্ডকে সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে সরাসরি কোনো কিছু বলেনি। আর তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিবৃতি বিনিয়োগকারীদের তেমন স্বস্তি দিতে পারেনি।
পরিস্থিতি আরেকটু জটিল হয়েছে যখন সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দুবাই ওয়ার্ল্ডের ঋণ বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা তারা দেবে না।
দুবাই ডিপার্টমেন্ট অব ফাইন্যান্সের মহাপরিচালক আবদুল রহমান আল সালেহ স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ‘ঋণদাতারা মনে করছে, দুবাই ওয়ার্ল্ড সরকারের অংশ যা ঠিক নয়।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘ঋণদাতারা নিজস্ব বিবেচনায় ঋণ দিয়েছে। কাজেই তাদের যার যার দায়িত্ব নিতে হবে।’
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার দুবাই ওয়ার্ল্ড জানিয়েছে, তারা দুই হাজার ৬০০ কোটি ডলারের একটি কর্মসূচি নিতে যাচ্ছে, যার মাধ্যমে এই ঋণসংকট থেকে বেড়িয়ে আসা সম্ভব হবে। তবে এই অর্থ মূলত দুটি প্রতিষ্ঠান নাখিল ও লিমিটলেসের জন্য ব্যয় করা হবে। আর অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক অবস্থা ভালো থাকায় তাদের কোনো সহায়তার প্রয়োজন নেই।
কিন্তু এই ঘোষণার পরও দুবাই ও আবুধাবি স্টক এক্সচেঞ্জের মূল্যসূচক পড়ে গেছে ৬ শতাংশ হারে। এ নিয়ে পরপর দুই দিন আরব আমিরাতের শেয়ারবাজারে বড় ধরনের পতন ঘটল। আর প্রতিবেশী কাতারের প্রধান মূল্যসূচকের পতন ঘটেছে প্রায় সাড়ে ৮ শতাংশ হারে।
এদিকে দুবাই ঋণসংকট কাটাতে সহায়তা করার জন্য খোদ সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট এগিয়ে এসেছেন।
শেখ খালিদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান এক বিবৃতিতে বলেছেন, আরব আমিরাতের অর্থনীতি ভালো অবস্থায় আছে।
তিনি দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুমেরও প্রশংসা করেছেন। মাকতুম একাধারে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভাইস প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী।

No comments

Powered by Blogger.