মেসির হাতেই ব্যালন ডি’অর

সাধারণ ফুটবলপ্রেমী, ফুটবল-বোদ্ধা কিংবা সাংবাদিক—সব মহলেই একটা নামই বেশি করে উচ্চারিত হচ্ছিল। মেসি, মেসি এবং মেসি। ফলটা যেন ঠিক করাই ছিল, বাকি ছিল শুধু ঘোষণা। সেই ঘোষণাই পাওয়া গেল গতকাল। বার্সেলোনার আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড লিওনেল মেসির মাথায়ই উঠছে ইউরোপ-সেরার মুকুট! কাল ফ্রান্স ফুটবল ম্যাগাজিনের সর্বশেষ প্রকাশিত সংখ্যাটায় ২০০৯ সালের ইউরোপ-সেরা ফুটবলার হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে মেসির নাম।
৩০ জনের প্রাথমিক তালিকার পর ১০ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকাও তৈরি হয়ে গিয়েছিল। ভোটাভুটিও আগেই শেষ হয়েছে। ইউরোপের সেরা ফুটবলার নির্বাচন করতে ভোট দিয়েছেন সারা বিশ্বের ফুটবল সাংবাদিকেরা।
কেন্দ্রীয় ইউরোপিয়ান সময় ২টায় (বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টা) প্রকাশিত হয়েছে ফ্রান্স ফুটবল ম্যাগাজিনের এই সংখ্যা। তবে এর এক ঘণ্টা আগেই সবাই জেনে যায়, লিওনেল মেসিই হয়েছেন ইউরোপ-সেরা ফুটবলার। ফেসবুকের মতো ফ্রান্সের অনলাইন সংবাদমাধ্যমও দেয় এই খবর।
মেসি গত বছর নিজেকে যেভাবে আপন আলোয় উদ্ভাসিত করেছেন, আর তাতে ভরিয়ে দিয়েছেন বার্সেলোনা এবং বিশ্ব ফুটবলকে, এই স্বীকৃতি তারই পুরস্কার। চ্যাম্পিয়নস লিগ, স্প্যানিশ লা লিগা আর স্প্যানিশ কাপ—গত মৌসুমে বার্সেলোনা ঐতিহাসিক ত্রিমুকুট জয়ের পর থেকেই সবার ধারণা জন্মে, এবারের ইউরোপ-সেরার পুরস্কার ব্যালন ডি’অর উঠছে বার্সার কোনো খেলোয়াড়েরই হাতে। আর বার্সার সেই একজন যে মেসিই হতে পারেন, সেটা তো তাঁর এই পুরস্কার জয়ের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী গতবারের পুরস্কারজয়ী ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোও আগেই বলেছেন।
রোনালদো না হয় ওটা বলেছিলেন। কিন্তু তিনি কি এতটা ভাবতে পেরেছিলেন যে মেসি আগের সব রেকর্ড ভেঙে গড়বেন এই কীর্তি? রেকর্ড বলতে ব্যালন ডি’অর পুরস্কারের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট পেয়ে সেরা হয়েছেন মেসি। একজন খেলোয়াড়ের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪৮০ পয়েন্ট পাওয়া সম্ভব। মেসি পেয়েছেন ৪৭৩ পয়েন্ট। যেটি দ্বিতীয় হওয়া রিয়াল মাদ্রিদের পর্তুগিজ উইঙ্গার রোনালদোর পয়েন্টের (২৩৩) দ্বিগুণেরও বেশি। ২২ বছর বয়সী মেসি ২০০১ সালে ২১ বছর বয়সী মাইকেল ওয়েনের পর সবচেয়ে কম বয়সী ব্যালন ডি’অর বিজয়ীও।
মেসির কীর্তি আছে আরেকটিও। তিনিই প্রথম ব্যালন ডি’অর জিতলেন খাঁটি আর্জেন্টাইন হিসেবে। এর আগে আরও দুজন আর্জেন্টাইন এই পুরস্কার জিতেছেন। ১৯৫৭ ও ১৯৫৯ সালে আলফ্রেডো ডি স্টেফানো ব্যালন ডি’অর জেতেন স্প্যানিশ জাতীয়তা নিয়ে। ১৯৬১ সালে ওমর সিভরি ব্যালন ডি’অর জিতেছিলেন একজন ইতালিয়ান হিসেবে। আরেক আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনার পরা হয়নি ইউরোপ-সেরার এই মুকুট।
এখানে একটি পাদটীকা দেওয়া উচিত—১৯৫৬ সাল থেকে ফ্রান্স ফুটবলের পক্ষ থেকে দেওয়া এই পুরস্কার আগে শুধু ইউরোপের খেলোয়াড়দেরই দেওয়া হতো। এটি ইউরোপে খেলা সব খেলোয়াড়ের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে ১৯৯৫ সালে। সেই প্রথমবারই পুরস্কার জিতেছিলেন একজন অ-ইউরোপীয়—লাইবেরিয়ার জর্জ উইয়াহ।

No comments

Powered by Blogger.