স্বাগতম গ্রামীণফোন by মামুন রশীদ

আজ সোমবার থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে একযোগে গ্রামীণফোনের শেয়ারের লেনদেন শুরু হচ্ছে। বাংলাদেশের বৃহত্তম কোম্পানি গ্রামীণফোনের শেয়ার ইস্যু করার প্রক্রিয়া ২০০৫ সাল থেকে শুরু হলেও বিভিন্ন ধরনের প্রশাসনিক এবং প্রক্রিয়াভিত্তিক জটিলতার কারণে প্রাথমিক শেয়ার ইস্যু বা আইপিও বিলম্বিত হয়ে যায়। তবে এ ব্যাপারে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, অর্থ উপদেষ্টা, সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান, ডিএসই প্রেসিডেন্টসহ বর্তমান অর্থমন্ত্রী, অর্থনৈতিক উপদেষ্টা, অর্থসচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং অর্থ মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির প্রধানসহ অনেকেই বিভিন্ন সময়ে সাহায্য ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। প্রথম আলো, ডেইলি স্টার এবং ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরামসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমও এই ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। উল্লেখ্য, সিটিগ্রুপ গ্লোবাল মার্কেটস গ্রামীণফোনের শেয়ার ইস্যু করার প্রক্রিয়ায় ইস্যু ম্যানেজার এবং পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছে। এ ছাড়া মেইন ব্যাংকার টু দা ইস্যুর দায়িত্বও পালন করেছে সিটিব্যাংক এনএ। গ্রামীণফোন আইপিওর মাধ্যমে ৪৮৬ কোটি টাকার শেয়ার ইস্যু করে, যা বংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহত্ আইপিও। তার আগে ২০০৮ সালের জুলাইতে গ্রামীণফোন ৪৮৬ কোটি টাকা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে প্রি-আইপিও প্লেসমেন্ট হিসেবে তুলে নেয়। তার মধ্যে গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণগ্রহীতাদের ট্রাস্ট এবং গ্রামীণফোনের কর্মকর্তারাও রয়েছেন। গ্রামীণফোনের শেয়ারকে ঘিরে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাপক উত্সাহ ও উদ্দীপনা লক্ষ করা যায়। ফলে আইপিও তিন গুণের বেশি (১৭৫৮ কোটি টাকা, যার মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকা এসেছে প্রবাসীদের কাছ থেকে) ওভার সাবসক্রাইবড হয়। গ্রামীণফোন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় টেলিকম অপারেটর, এ রকম একটি সুবৃহত্ বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ইস্যু এবং স্টক এক্সচেঞ্জে শেয়ার লেনদেন শুরু হওয়ার ব্যাপারটি নিঃসন্দেহে দেশের আর্থিক খাতের জন্য একটি যুগান্তকারী ঘটনা। বাজার বিশ্লেষক এবং অর্থনীতিবিদেরা মনে করছেন, এর ফলে দেশের শেয়ারবাজারের গভীরতা বৃদ্ধি পাবে, শেয়ারবাজারে ফটকাবাজি হ্রাস পাবে, শেয়ারবাজারের প্রতি দেশি-বিদেশি এবং সচেতন বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হবেন এবং সর্বোপরি বিশ্ব অর্থবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্র হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান দৃঢ়তর হবে। আজ এই দিনে গ্রামীণফোনের অন্যতম প্রধান বিনিয়োগকারী টেলিনর, গ্রামীণ টেলিকমসহ সব বিনিয়োগকারী, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, চটগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, বাংলাদেশ ব্যাংক, সিকিউরিটিস অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সব সংশ্লিষ্ট মহল এবং শুভানুধ্যায়ীকে জানাই অভিনন্দন। আজকের এই যুগান্তকরী ঘটনা আমাদের দেশের শেয়ারবাজার গভীরতা বৃদ্ধির প্রক্রিয়া সুদৃঢ় করার মাধ্যমে যেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের বিনিয়োগ ভাবমূর্তির উন্নয়নের পথ সুগম করে, এই আমাদের প্রত্যাশা। স্বাগতম গ্রামীণফোন!
মামুন রশীদ: চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের একজন মনোনীত পরিচালক।

No comments

Powered by Blogger.