মার্কিন সেনা কর্মকর্তা নিদালের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ -ফোর্ট হুড সেনা ঘাঁটিতে হত্যাকাণ্ড

মার্কিন সেনা কর্মকর্তা মেজর নিদাল মালিক হাসানের বিরুদ্ধে ১৩ ব্যক্তিকে হত্যার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হয়েছে। সেনাবাহিনীর অপরাধ তদন্ত বিভাগের মুখপাত্র জানান, বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক তদন্ত চলছে। মেজর নিদাল হাসানের বিরুদ্ধে হত্যা ছাড়াও একাধিক অপরাধজনিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আনা হতে পারে। সেনা আইনে তাঁর বিচার হবে।
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ফোর্ট হুড সেনা ঘাঁটিতে ৫ নভেম্বরের হত্যাকাণ্ডের নিবিড় তদন্তের পুনঃনির্দেশ জারি করেছেন। ওই দিন মেজর নিদাল এলোপাতাড়ি গুলি করে ১৩ জনকে হত্যা করেন। নিহত একজন ছাড়া সবাই মার্কিন সেনাসদস্য। এ ছাড়া গুলিতে আরও ৪০ জন আহত হয়।
ইরাক-আফগানিস্তানে যুদ্ধে যাওয়া-আসার প্রস্তুতির জন্য সেনা সদস্যদের ফোর্ট হুড ঘাঁটিতে অবস্থান করতে হয়। যুদ্ধে যাওয়া এবং প্রত্যাবর্তনের পর মানসিক প্রস্তুতির জন্য এ ঘাঁটিতে মনোচিকিত্সা দেওয়া হয়। মেজর নিদাল হাসানও আফগানিস্তানে যাওয়ার প্রাক্কালে প্রস্তুতি কেন্দ্রে অবস্থান করছিলেন। ঘটনার দিন প্রস্তুতি কেন্দ্রে সমবেত নিরস্ত্র সেনাসদস্যদের লক্ষ্য করে আচমকা গুলিবর্ষণ শুরু করেন নিদাল। তাঁকে নিরস্ত্র করতে বাইরে থেকে আসা পুলিশ পাল্টা গুলি চালায়। গুলিবিদ্ধ নিদাল হাসান গুরুতর আহত অবস্থায় বেঁচে যান।
এ ঘটনার পর নিদাল হাসানের ব্যাপারে ব্যাপক তদন্ত শুরু হয়। এফবিআইসহ মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাদের সর্বশেষ তদন্তে বলেছে, মেজর নিদাল একাই ঘটনা ঘটিয়েছেন। ঘটনার সঙ্গে কোনো জঙ্গি-সংশ্লিষ্টতা বা বাইরের কোনো যোগসূত্র পাওয়া যায়নি। নিদাল হাসান মুসলমান হওয়ায় বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। মার্কিন মুসলমানরাও তাঁর এ কর্মকাণ্ডে হতবিহ্বল ও বিব্রতবোধ করতে থাকেন।
এফবিআইয়ের তদন্তে দেখা যায়, এক বছর আগে মেজর নিদাল ইয়েমেনভিত্তিক এক উগ্র ধর্মীয় নেতার সঙ্গে ই-মেইলে যোগাযোগ করেছেন। তাঁর এ ই-মেইল বিনিময় তখনই গোয়েন্দা সংস্থার নজরে আসে। প্রাথমিক তদন্তে ই-মেইল বার্তায় কোনো হুমকিমূলক কিছু না থাকায় এ নিয়ে গোয়েন্দা বিভাগ আর নাড়াচাড়া করেনি। রিপাবলিকান দলের একাধিক আইনপ্রণেতাসহ রক্ষণশীল আমেরিকানদের মতে, সন্দেহজনক ই-মেইল বার্তা পাওয়ার পরও মেজর নিদাল হাসানের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয়েছে।
সহপাঠী এবং সহকর্মীদের ভাষ্যমতে, নিদাল হাসান ইরাক-আফগান যুদ্ধ নিয়ে ভিন্ন মত পোষণ করতেন। এসব ভিন্ন মতে কখনো উগ্রতা ছিল না বলে তাঁরা উল্লেখ করছেন। নিকটাত্মীয়রা জানিয়েছেন, সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগ করার চেষ্টা করছিলেন মেজর নিদাল। যদিও সেনাবাহিনী থেকে বলা হয়েছে, মেজর নিদাল কখনো সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগের আবেদন করেননি।
এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে বলা হচ্ছে, মনোচিকিত্সক মেজর নিদাল মালিক হাসান নিজেই মনোবৈকল্যে ভুগছিলেন। ৩৯ বছর বয়সের সুদর্শন এ সেনা চিকিত্সক কয় বছর ধরে বিয়ের জন্য কনে খুঁজছিলেন। তিনি যে মসজিদে নামাজ পড়তেন, সেখানকার ইমামরাও নিদাল হাসানের জন্য পাত্রী খুঁজে ব্যর্থ হচ্ছিলেন।
ফিলিস্তিনি অভিবাসী পরিবারে জন্ম নেওয়া নিদাল হাসান যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলেই লেখাপড়া করেছেন। এখানকার সমাজে বড় হয়ে তাঁর সঙ্গে জঙ্গিবাদের যোগসূত্র দাঁড় করাতে পারেনি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। মা-বাবার মৃত্যুর পর একাকিত্ব এবং স্বজনহীনতাকে তাঁর এ ঘটনার জন্য দায়ী করছেন অনেকেই। মায়ের মৃত্যুর পর নিদাল হাসানের আচরণে পরিবর্তন লক্ষ করেছেন তাঁর নিকটাত্মীয়রা। যদিও তাঁর আচরণ এবং মনোভাবে কখনো উগ্রতার চিহ্ন ছিল না বলে তাঁরা জানান।
মেজর নিদাল মালিক হাসানের বিষয়ে কোনো গোয়েন্দা ব্যর্থতা ছিল কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি মার্কিন সেনাবাহিনীতে কর্মরত মুসলমানরা কোনো বিদ্রূপ-বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন কি না এ নিয়েও বিস্তর তদন্ত শুরু হয়েছে। সেনাবাহিনীতে কর্মরত একাধিক মুসলমান সেনাসদস্য তাঁদের বক্তব্যে এ ধরনের কোনো বৈষম্যের কথা অস্বীকার করেছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও তাঁর বক্তব্যে বলেছেন, সব ধর্ম, জাতি ও বিশ্বাসের সমন্বয়ে মার্কিন সেনাবাহিনী প্রতিদিন দেশের জন্য গৌরবের কাজ করে আসছে। এশিয়া সফরের প্রাক্কালে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা পুরো ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রেসিডেন্টের জঙ্গি দমন এবং নিরাপত্তাবিষয়ক সহকারী জন ব্রেনানকে পুরো তদন্তটি তত্ত্বাবধান করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।

No comments

Powered by Blogger.