পরমাণু বোমা তৈরির জন্য পাকিস্তানকে ইউরেনিয়াম দিয়েছিল চীন

দুটি পরমাণু বোমা তৈরির জন্য পাকিস্তানকে ৫০ কেজি ইউরেনিয়াম সরবরাহ করেছিল চীন। পাকিস্তানের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো ও চীনের কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান মাও সে তুংয়ের মধ্যকার সমঝোতার ভিত্তিতে ১৯৮২ সালে ওই ইউরেনিয়াম সরবরাহ করা হয়। পাশাপাশি পাকিস্তানকে পরমাণু বোমা তৈরি করার জন্য প্রয়োজনীয় নকশা ও সরঞ্জাম দিয়েও সহায়তা করেছে সমাজতান্ত্রিক দেশটি। গতকাল শুক্রবার পাকিস্তানের পরমাণু বিজ্ঞানী আবদুল কাদির খানের একটি চিঠির বরাত দিয়ে প্রভাবশালী মার্কিন পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্ট এ কথা জানায়। তবে পাকিস্তান সরকার এ তথ্যকে ‘ভিত্তিহীন’ উল্লেখ করে তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
ওই চিঠির বরাত দিয়ে পত্রিকাটি জানায়, ১৯৭৬ সালে ভুট্টো চেয়ারম্যান মাওয়ের কাছে পরমাণু বোমা তৈরি করার ব্যাপারে সাহায্য চান। সে অনুযায়ী পরবর্তী সময়ে এই লেনদেন হয়। চিঠিতে কাদির খান লিখেছেন, ‘আমার ব্যক্তিগত অনুরোধে চীনের মন্ত্রী আমাদের ৫০ কেজি বোমা বানানোর উপযোগী ইউরেনিয়াম দেন।’ তিনি জানান, মূলত ভারত ও ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠতা এবং পাকিস্তানের পরমাণু স্থাপনার ওপর এই দুই দেশের হামলার আশঙ্কা থেকে পাকিস্তান চীনের কাছে এ ব্যাপারে সাহায্য চেয়েছিল। চিঠিতে কাদির খান লেখেন, ‘আমাদের কাজের গতি ও সাফল্য দেখে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় শত্রু ও তাদের পরামর্শদাতারাও বিস্মিত হবে এবং পশ্চিমা বিশ্ব অসহায়ভাবে দেখবে, সাইকেলের চেইন বা সূচ বানাতে পারে না, এমন একটি তৃতীয় বিশ্বের দেশ কীভাবে স্বল্পতম সময়ে বিশ্বের সর্বাধুনিক পরমাণু প্রযুক্তিতে দক্ষ হয়ে উঠেছে।’
পরমাণু অস্ত্রবিস্তার রোধ চুক্তি ভঙ্গ করে চীন পাকিস্তানকে পরমাণু বোমা বানাতে সাহায্য করেছে—ওয়াশিংটনের এমন দাবিকে প্রতিষ্ঠিত করল কাদির খানের এই চিঠি। ২০০৪ সালে তত্কালীন পাকিস্তান সরকার আবদুল কাদির খানকে গৃহবন্দী করার পর গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের জন্য এসব নথি প্রস্তুত করেন তিনি। তার আগে স্ত্রীকে চিঠি লিখে এ ব্যাপারে জানান কাদির খান। ওই চিঠিই ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিকের হাতে পড়ে।
এদিকে পত্রিকাটিতে প্রকাশিত ওই তথ্য প্রত্যাখ্যান করে এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ওই প্রতিবেদনে যে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে কঠোরভাবে তা প্রত্যাখ্যান করছে পাকিস্তান। পাকিস্তান ও চীনের মধ্যকার সম্পর্কে চিড় ধরাতেই এমন তথ্য রটানো হচ্ছে। দুই দেশই আন্তর্জাতিক রীতি ও আইন এবং অস্ত্রবিস্তার রোধসংক্রান্ত নিয়মকানুনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।

No comments

Powered by Blogger.