শান্তির নোবেল নিয়ে যত বিতর্ক

এ বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর বিশ্বনেতারা তাত্ক্ষণিকভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, যোগ্য একজন প্রার্থীর কাছেই গেছে ওই পুরস্কার। তবে এর বাইরে অনেকে সমালোচনাও করেছেন। তাঁরা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন, ওবামাকে বড় আগেভাগেই পুরস্কৃত করা হয়েছে। তিনি সবে কাজ শুরু করেছেন, শেষ না করতেই এমন বড় পুরস্কার! এটা অনেকটা মেঘ না চাইতেই জলের মতো ব্যাপার হয়ে গেছে।
ওবামাকে ওই পুরস্কার দেওয়া ঠিক হয়েছে কি হয়নি, তা সময়ই প্রমাণ করবে। তবে নোবেল শান্তি পুরস্কার নিয়ে এবারই যে প্রথম বিতর্ক উঠল তা নয়, এর আগেও বেশ কয়েকবার নোবেলজয়ীদের নিয়ে এমন বিতর্ক উঠেছিল। উল্লেখযোগ্য সে ঘটনার কয়েকটি এখানে তুলে ধরা হলো:
থিওডর রুজভেল্ট (১৯০৫): রাশিয়া-জাপান যুদ্ধের সময় শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখায় প্রথম রাজনীতিক হিসেবে রুজভেল্ট ওই পুরস্কার পান। অথচ সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট যুদ্ধবাজ নেতা হিসেবেই বেশি পরিচিত ছিলেন। ১৮৯৮ সালে স্পেন-আমেরিকার যুদ্ধের সময় রুজভেল্ট কিউবায় একটি রেজিমেন্টের নেতৃত্ব দেন। এরপর ক্যারিবীয় অঞ্চলে মার্কিন সামরিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায়ও তিনি সচেষ্ট হয়েছিলেন।
উড্রো উইলসন (১৯১৯): লিগ অব নেশনস প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখার জন্য নোবেল পান এই সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট। অথচ লিগ অব নেশনস প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ভার্সাই চুক্তির একটি অংশ হিসেবে। এই ভার্সাই চুক্তিই পরে নািসবাদের বীজ বপন করেছিল।
কর্ডেল হাল (১৯৪৫): সাবেক এই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পশ্চিম গোলার্ধে শান্তি প্রতিষ্ঠার স্বীকৃতি হিসেবে নোবেল পান। অথচ তিনি এসএস সেন্ট লুইস নামের একটি জাহাজ জার্মানিতে ফেরত পাঠিয়েছিলেন। ওই জাহাজে ছিলেন এক হাজার ইহুদি নাগরিক, যাঁদের সবাই নািস শিবিরে নির্যাতনে নিহত হন।
হেনরি কিসিঞ্জার (১৯৭৩): সাবেক মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিসিঞ্জার ১৯৭৩ সালের ভিয়েতনাম শান্তিচুক্তিতে মধ্যস্থতা করায় নর্থ ভিয়েতনামের নেতা লি ডাক থোর সঙ্গে নোবেল পান। বিতর্ক ওঠার পর ওই নোবেল কমিটির দুই সদস্যই পদত্যাগ করেন। থো নোবেল নিতে অস্বীকৃতি জানান। কিসিঞ্জারও আর নোবেল নিতে অসলোতে যাননি।
মেনাচেম বেগিন (১৯৭৮): সাবেক ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী মেনাচেম বেগিন বিতর্কিত ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য মিসরের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আনোয়ার আল-সাদাতের সঙ্গে নোবেল পান। বেগিন এর আগে ইহুদি জঙ্গি সংগঠন ইরগানের প্রধান ছিলেন। ওই জঙ্গিগোষ্ঠী ১৯৪৬ সালে জেরুজালেমে ব্রিটিশ সেনা সদর দপ্তরে বোমা হামলার জন্য দায়ী। ওই হামলায় ৯১ জন নিহত হয়েছিল।
ইয়াসির আরাফাত, আইজ্যাক রবিন ও শিমন পেরেজ (১৯৯৪): অসলো চুক্তির পর ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের এই তিন ব্যক্তিত্ব মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি হিসেবে নোবেল পান। কিন্তু এই তিনজনের অতীতই বিতর্কিত। ওই সময় বিতর্ক উঠলে নোবেল কমিটির সদস্যরা পদত্যাগ করেছিলেন। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি এখনো সুদূরপরাহত।
আল গোর (২০০৭): বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা তৈরিতে ভূমিকা রাখায় সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোরকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। সমালোচকেরা বলেছেন, তাঁর ওই কাজ পুরোপুরি পরিবেশ রক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কি না, এ নিয়েই সংশয় রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.