দুটি নীতিনির্ধারণী সুদের হার কমিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংক তার নীতিনির্ধারণী দুটি উপাদান—রেপো (পুনঃ ক্রয়চুক্তি) ও রিভার্স রেপোর (পুনঃ পুনঃ ক্রয়চুক্তি) সুদের হার কমিয়ে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক গতকাল সোমবার এক অফিস আদেশে এই সুদের হার কমিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক রেপোর নতুন সুদ হার ৪ দশমিক ৫ শতাংশ ও রিভার্স রেপোর সুদের হার ২ দশমিক ৫ শতাংশে পুনর্নির্ধারণ করেছে। এর আগে রেপোতে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ ও রিভার্স রেপোতে সুদের হার ছিল ৬ দশমিক ৫ শতাংশ।
তবে চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে অর্থাত্ সাত মাস ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিভার্স রেপোতে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে কোনো অর্থ ধার করত না। আর ব্যাংকগুলোতে বিপুল পরিমাণ অতিরিক্ত নগদ অর্থ থাকায় তারা রেপো নিলামে টাকা ধার করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যেত না।
ব্যতিক্রম হিসেবে গত ঈদুল ফিতরের আগে কোনো কোনো ব্যাংক যখন নগদ অর্থের টানাপোড়েনের মধ্যে ছিল, তখন তারা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ সুদে রেপো নিলামে অর্থ ধার করে।
যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মুদ্রা ব্যবস্থাপনার আওতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে মূল্যস্ফীতির আশঙ্কা কমে আসবে বলেও মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংক রেপো ও রিভার্স রেপোর সুদের হার কমালেও এখন পর্যন্ত ট্রেজারি বিলের সুদের হার অপরিবর্তিত রয়েছে।
তবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর তহবিল ব্যবস্থাপকদের ধারণা, ৯১ দিন মেয়াদের ট্রেজারি বিলের সুদের হার কিছুটা বাড়তে পারে। বাকি বিল ও বন্ডের ক্ষেত্রে উল্টোটা অর্থাত্ কমতেও পারে। বর্তমানে ৯১ দিন মেয়াদের ট্রেজারি বিলের সুদের হার ২ দশমিক ১ শতাংশ, ১৮২ দিনের ৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ, ৩৬৪ দিনে সুদের হার ৪ দশমিক ৬০ শতাংশ রয়েছে। এর বাইরে ৫, ১০, ১৫ ও ২০ বছর মেয়াদি সরকারি বন্ডও রয়েছে। এ ছাড়া বাজারে ৩০ দিন মেয়াদি বাংলাদেশ ব্যাংক বিল রয়েছে, গত সপ্তাহের এর সুদের হার ছিল এক শতাংশ।
প্রসঙ্গত, ট্রেজারি বিল ও বন্ড হলো ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের টাকা ধার করার উপাদান। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই বিল ও বন্ড দিয়ে সরকারের ঋণ করে দেওয়ার পাশাপাশি মুদ্রাবাজারে অর্থ প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক বিল শুধু মুদ্রাবাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যবহূত হয়।
এই ট্রেজারি বিল বা বন্ডের বিপরীতে ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে রেপোতে টাকা ধার করতে ও রিভার্স রেপোতে বাংলাদেশ ব্যাংকে টাকা খাটাতে পারে। একই সঙ্গে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিধিবদ্ধ জমা বা এসএলআর (স্টেটিউটরি লিক্যুডিটি রিকোয়ারমেন্ট) সংরক্ষণের জন্য এই বিলে অর্থ খাটানোর প্রয়োজন পড়ে।
সাত মাস আগে বাংলাদেশ ব্যাংক যখন রিভার্স রেপোতে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে টাকা ধার করা বন্ধ করে দেয় তখন উদ্দেশ্য ছিল বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বাড়িয়ে সুদের হার কমিয়ে আনা। আর এখন সেই অর্থ তুলে নেওয়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দৃষ্টিভঙ্গি হলো অতিরিক্ত তারল্য বাজার থাকায় মূল্যস্ফীতির চাপকে প্রশমিত করা যাবে।
বাজারে বেশি অর্থ থাকায় স্বভাবতই ব্যাংকগুলো নানা ধরনের ভোক্তা ঋণসহ বিভিন্ন ধরনের ঋণ দিতে চাইবে। ফলে মূল্যস্ফীতিতে চাপ আসতে পারে।
কিন্তু বাজার থেকে অর্থ তুলে নিলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই পদক্ষেপ বর্তমান মুদ্রানীতির আদলেই থাকছে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী বলেন, ‘মূল্য পরিস্থিতির ওপর কোনো চাপ দেখা দিলে প্রয়োজন হলে আবারও এই হারে পরিবর্তন আনা হবে। আর সুদের হারে এর কোনো প্রভাব পড়বে না।’

No comments

Powered by Blogger.