‘টারজান’ ওয়াটসন

অস্ট্রেলিয়ার প্রথিতযশা এক ক্রিকেট লেখক একবার লিখেছিলেন, শেন ওয়াটসন দেখতে ‘টারজান’-এর মতো, কিন্তু খেলেন ‘জেন’-এর মতো। একটা কারণ তো অবশ্যই ছিল ইনজুরি-প্রবণতা। মাঠে যতটা থেকেছেন, ওয়াটসনকে তার চেয়ে বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়েছে মাঠে ফেরার লড়াইয়ে। তার চেয়েও বড় কারণ, বড় ম্যাচগুলোতে ভেঙে পড়া। তবে সেই কথাটার যৌক্তিকতা নিয়ে ওয়াটসন এখন প্রশ্ন তুলতেই পারেন। টানা দুই অপরাজিত সেঞ্চুরিতে হয়েছেন চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনাল এবং ফাইনালের ম্যাচ-সেরা, সেমিফাইনালে উইকেটও পেয়েছেন দুটি। এর সঙ্গে গত চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালেও ম্যাচ-সেরা ছিলেন তিনিই, তথ্যটি মনে করিয়ে দিয়ে ওয়াটসন দাবি করতেই পারেন, শুধু চেহারায় নয়, তিনি এখন সত্যিকারের টারজান।
২০০২ সালে অভিষেকের পর থেকে পারফরম্যান্সের কারণে তাঁর জায়গা নিয়ে প্রশ্ন কমই উঠেছে। তার পরও সাত বছরে তাঁর খেলা ওয়ানডের সংখ্যা যে মাত্র ৯০, এর আসল কারণ নাছোড়বান্দা ইনজুরি। একের পর এক ইনজুরিতে ত্যক্তবিরক্ত নির্বাচকেরা বছর দুয়েক আগে ঘোষণা করে দিলেন, পুরোপুরি ফিট হয়ে দীর্ঘ সময় ঘরোয়া ক্রিকেট খেললেই কেবল জাতীয় দলের জন্য বিবেচনা করা হবে তাঁকে। এর পরই নাটকীয়ভাবে ওয়াটসনের ক্যারিয়ারটা নতুন জীবন পেল দুটো ঘটনায়—আইপিএল এবং ওপেনিংয়ে ব্যাট করা।
ইনজুরির সঙ্গে সখ্যের পরও সামর্থ্য সম্পর্কে জানা আছে বলেই রাজস্থান রয়্যালসে তাঁকে নিয়েছিলেন শেন ওয়ার্ন। এরপর অসাধারণ অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে কীভাবে রাজস্থানকে শিরোপা পাইয়ে দিয়েছেন, সেই ইতিহাস তো সবারই জানা। ক্যারিয়ারের মোড় পাল্টে দেওয়ার জন্য আইপিএল এবং ওয়ার্নের প্রতি তাই কৃতজ্ঞতার শেষ নেই এই অলরাউন্ডারের। চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ফাইনালের নায়ক হওয়ার পরও যে কৃতজ্ঞতার কথা আবারও জানিয়েছেন তিনি, ‘আইপিএলই আমার ক্যারিয়ারের পুনরুজ্জীবন ঘটিয়েছে। আমার আত্মবিশ্বাসও অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে, যা অস্ট্রেলিয়া দলে ফিরতে সাহায্য করেছে। ওয়ার্নির কোচিং ও অধিনায়কত্ব থেকেও আমি অনেক কিছু শিখেছি। শিখেছি বড় ম্যাচে কীভাবে আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।’
ক্যারিয়ার পাল্টে দিয়েছে ওপেনিংয়ে ব্যাট করাটাও। ক্যারিয়ার-গড় ৪০.৪০, কিন্তু ওপেনিংয়ে নামা ৩০ ইনিংসে ৪৯.৬৮। চার সেঞ্চুরির সব কটিই ওপেনার হিসেবে। গত কিছুদিনের ধারাবাহিকতায় হেইডেন-গিলক্রিস্ট উত্তর যুগে ওপেনিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার প্রধান ভরসা এখন তিনিই। তুলনাটা হেইডেনের সঙ্গেই বেশি হচ্ছে। একই রাজ্য কুইন্সল্যান্ডের বলেই নয়, খেলার ধরনটাও একই রকম। নিখুঁত টেকনিক নেই, দেখতেও দৃষ্টিনন্দন নয়; কিন্তু আগ্রাসী, প্রভাববিস্তারী আর শক্তির প্রদর্শনী। ব্যাপারটা উপভোগ করছেন ওয়াটসনও, ‘হেইডেন-গিলির জায়গা পূরণ করাটা আমার জন্য বিশাল এক সুযোগ। ওরা দুজনেই বড় উপলক্ষে জ্বলে উঠত।’ তথ্যসূত্র: এএফপি ও ওয়েবসাইট।
ক্যারিয়ার-জুড়েই যুদ্ধ করতে হয়েছে, যুদ্ধ করতে করতে শিখেছেনও অনেক। প্রতিটি লড়াই তাঁকে দিয়েছে নতুনভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর রসদ, ‘এগুলো আমাকে আরও শক্ত করেছে। আর বুঝতে পেরেছি সবকিছু খুব দ্রুতই পাল্টে যেতে পারে।’
টানা দুই শূন্য দিয়ে শুরুর পর টানা দুই সেঞ্চুরি দিয়ে শেষ, টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ (২৬৫) রান—সবচেয়ে বেশি বুঝতে পেরেছেন এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে।

No comments

Powered by Blogger.