বাঁশখালী অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট by মোঃ আব্দুল জাব্বার

বাঁশখালী একটি নান্দনিক উপজেলা। সবুজের চাঁদরে ঢাকা পূর্বে পাহাড়, পশ্চিমে জলকদরখাল বঙ্গোপসাগরের সাথে মিতালী। প্রকৃতির অপূর্ব সমন্বয়ে বিনোদনের স্পট হিসেবে চা-বাগান, ইকোপার্ক, সমুদ্র সৈকত বার বার সৌন্দর্য্যে হাত ছানি দিচ্ছে। বিশেষ করে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালীর অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট বাঁশখালী ইকোপার্ক একসময় পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত থাকলেও বর্তমানে সেই চেনা দৃশ্য আর চোখে পড়েনা। দিন দিন পর্যটক শূন্য হয়ে পড়ছে পার্কটি। বাঁশখালী ইকো পার্কে ২০০৩ সাল থেকে পর্যটকের আগমন শুরু হয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঈদ, পূজা-পার্বনে, নানা দিবস উপলক্ষে উপচে পড়া ভীড় দেখা যেতো। সিনেমার নায়ক নায়িকা, শিল্পীদের শুটিংয়ের জন্য আকর্ষণীয় স্পট ছিল পার্কটি। সেসময় প্রকৃতির অপূর্ব সমন্বয়ও নানা কৃত্রিমতায় সৌন্দর্য্যে ভরা যৌবন ছিল পার্কে। দেশের দীর্ঘতম ঝুলন্ত সেতু ও নানা জাতের পশু পাখিতে ভরপুর ছিল ইকোপার্কটি। দর্শনার্থীদের আকর্ষণীয় সে দৃশ্য আর চোখে পড়েনা। নান্দনিক ফুলের উদ্যান, পশু-পাখির খাঁচা আজ বিলুপ্তপ্রায়। বিগত ২০০৮ সালে প্রলয়ংকরী পাহাড়ি ঢলের পানির তীব্রতা বৃদ্ধি পেলে বাঁশখালী ইকোপার্কের বামেরছড়ার বাঁধ ভেঙে ইকোপার্কের বেশকিছু স্থাপনা ও হাইড্রো ইলেক্ট্রনিক বিদ্যুৎ প্রকল্পটি ক্ষতির সম্মুখীন হয়। বিলীন হয়েছে সৌন্দর্য্যরে নানা স্পট। এসময় ইকোপার্কের বেশ কিছু স্থাপনাও ভেঙ্গে যায়। ফলে পর্যটকের সংখ্যাও হারাতে বসে ইকোপার্কটি। তবে ইকোপার্কের ভাঙা বাঁধ সংস্কারের জন্য বনবিভাগের বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে নানা ধরনের উন্নয়ন কর্মকা- পরিচালনা করার লক্ষ্যে সম্প্রতি এই বাঁধ সংস্কারের জন্য উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকার বরাদ্দ সাপেক্ষে ইকোপার্কের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়ে আসছে। সুইসগেইট নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলেও কাজের ত্রুটির কারণে গেইট দিয়ে অতিরিক্ত পানি ছাড়া যেন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত মৌসুমে সুইসগেইট ভেঙ্গে লেক পানি শূন্য করা হয়। নড়বড়ে কাজের ফলে সে একই সমস্যা আবার দেখা দিলে কর্তৃপক্ষের কাজের মান নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলে সচেতন মহল।
বাঁশখালীই কো-পার্কের পিকনিক সেট, দ্বিতলরেস্ট কর্নার, দেশের দীর্ঘতম ঝুলন্ত সেতু, সাসপেনশন ব্রিজ, দোলনা, স্পট, দ্বিতীয়রেস্ট হাউস, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর ব্যারাক ৪ ইউনিট, গেট, প্রধান ফটক, পাখি ও বন্যপ্রাণী অবলোকন টাওয়ার, ভাসমান পাটফরম, লেক, কংক্রিটে শাবের ছাতা, রিফ্রেশমেন্ট কর্নার, ফেনোরোমিক ভিউটা ওয়ার সহ নানা বিনোদনের ক্ষেত্রগুলোর অনেকটাই সংস্কারের অভাবে জীর্ণশীর্ণ হয়ে পড়েছে। ঝুলন্ত সেতুটি এখন এক মরণ ফাঁদ। যেকোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ও ঘটে যেতে পারে ঝুলন্ত সেতুতে। শিগ্র ইপার্কের সংস্কার করা না হলে পর্যটক শূন্য হয়ে পড়বে পার্কটি।
লোহাগাড়া থেকে আসা এক পর্যটক শরিফুল ইসলাম বলেন, বাঁশখালী ইকোপার্কে আগের মতো চিরচেনা সৌন্দর্য চোখে পড়েনা। এখানে বন্য-প্রানীর খাঁচা, ফুলের উদ্যান, স্বচ্ছ লেকে জল যান থাকলে কিছুটা বিনোদন খুঁজে পেতো সাধারাণ পর্যটক। পার্কে যাতায়তের একমাত্র সড়কটির দূরাবস্থার কারণে এক রকম পর্যটক শূন্য হয়ে পড়েছে এই পর্যটন কেন্দ্রটি। তবে এই ইকোপার্কের উন্নয়নে নতুন করে বরাদ্দ প্রদান সহ সার্বিক উন্নয়ন কর্মকা-ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে আবার পর্যটকদের দৃষ্টি কাড়বে পার্কটি এমনটি মন্তব্য করেন শিলকুপ ইউপি চেয়ারম্যান মুহাম্মদম হসিন। বাঁশখালী ইকোপার্কের (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা রেইঞ্জার আনিছুজ্জান শেখ জানান, ইকোপার্কের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি, নতুন করে কর্টেজ নির্মাণ, কনক্রিটের ছাতা সহ নানা স্পট গুলো সংস্কার, লেকে বিনোদনের জন্য জল যান বৃদ্ধি সহ নানা সংস্কারের জন্য আমরা একটি প্রজেক্ট সাবমিট করেছি। আশা করি খুব কম সময়ে পার্কের সৌন্দর্য্য ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবো। বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার বলেন, বাঁশখালী ইকোপার্কে রয়েছে প্রকৃতির অপূর্ব সমন্বয়। সংস্কারের মাধ্যমে এটিকে আধুনিক একটি পর্যটন স্পটে রূপান্তরিত করার ব্যাপারে আশা বাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.