রূপগঞ্জে দুই মহাসড়কে ১৮ কি.মি. যানজট, ভোগান্তি

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও এশিয়ান হাইওয়ে (বাইপাস) সড়কের উভয় দিকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন যাত্রীসাধারণ থেকে শুরু করে পথচারীরাও। যানজট থেকে মুক্তি পেতে লোকাল সড়কগুলো ব্যবহার করতে গিয়ে সেখানেও তীব্র যানজট লেগে যায়। এ ছাড়া কাঞ্চন সেতুতে টোল আদায়ে ধীরগতি ও টোল আদায়কারীদের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের বাকবিতণ্ডা  নিয়ে যানজট সৃষ্টির আরেকটা কারণ। বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বান্টি এলাকা থেকে বিশ্বরোড পর্যন্ত ও এশিয়ান হাইওয়ে (বাইপাস) সড়কের বস্তল এলাকা থেকে পলখান পর্যন্ত এ যানজন সৃষ্টি হয়। যানজটের কারণ হিসেবে পুলিশ প্রশাসনের দায়িত্ব অবহেলাকেই দায়ী করছেন পরিবহন শ্রমিকরা। এদিকে পুলিশ বলছে, নিয়ম ভঙ্গ করে যানবাহন চলাচলের কারণেই এ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
জানা গেছে, উপজেলার ভুলতা, গোলাকান্দাইল, আধুরিয়া, সাওঘাট, বরপা, রূপসী, বিশ্বরোড এলাকার ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও কাঞ্চন, কালাদি, পলখান, বস্তল এলাকার এশিয়ান হাইওয়ে (বাইপাস) সড়কে যানজট যেন এখন নিত্যদিনের সঙ্গী। সকাল-সন্ধ্যা যানজট থাকার কারণে যাত্রীদের যেন ভোগান্তির শেষ নেই। অপেক্ষা করতে হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। যেখানে যেতে সময় লাগার কথা ২০ মিনিট, সেখানে যেতে সময় লাগছে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা। বৃহস্পতিবার এ যানজটের কারণে অনেকেই রূপসী-কাঞ্চন সড়ক, ভুলতা থেকে মুড়াপাড়া ফেরিঘাট হয়ে ৩০০ ফুট সড়ক ব্যবহার করতে গিয়ে সেখানে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। রাস্তা ভাঙ্গার কারণে বেশ কয়েকটি যানবাহন বিকল হয়ে পড়ে।
এ দীর্ঘ যানজটের প্রধান কারণ হিসেবে জানা গেছে, ভুলতা ফ্লাইওভার ও রাস্তার নির্মাণ কাজ, যেখানে সেখানে যাত্রী উঠানামা, চালকরা নিয়ম না মেনে গাড়ি চালানো, হাটবাজারে লোড-আনলোড, অবৈধ ফুটপাথ, হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশের বেপরোয়া চাঁদাবাজি। নিত্যদিনের এ যানজটের কারণে স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রী, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী থেকে শুরু করে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে।
পরিবহন চালক, যাত্রী ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার গোলাকান্দাইল চৌরাস্তা এলাকা দিয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও এশিয়ান হাইওয়ে (বাইপাস) সড়ক ক্রস করেছে। এ ছাড়া ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে হলে এশিয়ান হাইওয়ে (বাইপাস) সড়কে যানাবাহন চলাচল বন্ধ রাখতে হয়। আবার এশিয়ান হাইওয়ে (বাইপাস) সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে হলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখতে হয়। দুটি সড়কেই যানবাহনের চাপ অনেক বেশি। তাই দুটি সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে গিয়ে পুলিশ প্রশাসনকে হিমশিম খেতে হয় এবং যানজট সৃষ্টি হয়ে যায়। এ ছাড়া ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক মোটামুটি প্রশস্ত হলেও এশিয়ান হাইওয়ে (বাইপাস) সড়কটি প্রশস্ত অনেকটা কম। যার ফলে এশিয়ান হাইওয়ে (বাইপাস) সড়কে কোনো প্রকার যানবাহন বিকল হয়ে পড়লেই তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।
এছাড়া কাঞ্চন টোলপ্লাজায় ৪টি টোল বসানো হয়েছে। লোকবল সংকটে মাঝে মাঝে ৪টি টোলের মধ্যে ২টি বন্ধ রাখা হয়। এ ছাড়া অতিরিক্ত টোল আদায় করার কারণে প্রায় সময়ই টোল আদায়কারীদের সঙ্গে যানবাহন চালকদের বাকবিতণ্ডা ঘটছে। মাঝে মাঝে মারপিটের ঘটনাও ঘটে। এতে সময় কেটে যায় ২০ থেকে ৩০ মিনিট। এ সময়ে যানজট লেগে যায়। এক ঘণ্টার মধ্যে এ যানজট সেতুর দুই পাশে প্রায় ৮ থেকে ১২ কিলোমিটার এলাকা ছাড়িয়ে যায়। ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীসাধারণ থেকে শুরু করে মালবাহী যানবাহনের চালকরা।
অভিযোগ রয়েছে, গাউসিয়া মার্কেটের সামনের ফুটপাথে অবৈধভাবে দোকান বসানো হয়েছে। ফুটপাথে দোকান থাকার কারণে সাধারণ মানুষকে রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে অনেক সময় যাত্রীদেরকে দুর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে। অনেকেই অভিযোগ করেন, মোটা অঙ্কের চাঁদার বিনিময়ে ফুটপাথে দোকান বসিয়েছে স্থানীয় নেতারা। রাস্তার মাঝে গাড়ি থামিয়ে ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজিতে এ দীর্ঘ যানজটের অন্যতম কারণ হিসেবে অভিযোগ  করেছেন চালকরা। নাম না প্রকাশ করার শর্তে বেশ কয়েকজন চালক অভিযোগ করে জানান, তাদের গাড়ির কাগজপত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্স সঠিক থাকার পরও পুলিশকে টাকা না দিলে গাড়ি ছাড়া হয় না।
ভুলতা স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও গোলাকান্দাইল মজিবুর রহমান ভুঁইয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রতিদিনের এ দীর্ঘ যানজটের ফলে প্রতিদিনই তাদেরকে স্কুলে যেতে অতিরিক্ত সময় লাগছে। সময়মতো স্কুলে না পৌঁছাতে পারলে তাদেরকে স্যারদের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। যেখানে তাদের যেতে সময় লাগতো ২০ মিনিট কিন্তু দীর্ঘ যানজটের ফলে এখন সময় লাগে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা। যানজটের কারণে কখনো শিক্ষার্থীদের স্কুলের ক্লাসের সময় পার হয়ে যায়। এতে করে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় ব্যাপক ভাবে খারাপ প্রভাব পড়ছে।
কাঞ্চন সেতুতে দায়িত্বরত ইনচার্জ কারিবুল ইসলাম বলেন, আসলে এখানে যানবাহনের চাপ অত্যন্ত বেশি। তাই মাঝে মাঝে যানজট লেগে গেলেও দ্রুত টোল আদায়ে তা নিরসন করা হয়। এ ছাড়া টোল আদায় করতে গিয়ে মাঝে পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে একটু তর্কবিতর্ক হলেও তা তাৎক্ষণিক সমাধান হয়ে যায়।
ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর ইকবাল হোসেন বলেন, লোকবল সংকট, তারপর যানজট নিরসনে কাজ  চালিয়ে যাচ্ছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যানবাহন চালকদের হয়রানির বিষয়টি সঠিক নয়। যানবাহন চালকরা নিয়ম ভঙ্গ করে গাড়ি চালানোর কারণেই যানজট লেগে যায়।
রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান মনির বলেন, হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশ যানজট নিরসন করতে না পারলে থানা পুলিশ দিয়ে সহযোগিতা করা হয়। যানজট নিরসন করতে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.