ব্যয় বাড়ছে ৬০৬ শতাংশ

গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক উন্নয়ন প্রকল্প ২০১৪ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। পরে নানা কারণ দেখিয়ে ৬১১ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয় বাড়িয়ে মেয়াদ ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত সংশোধন করা হয়। এখন আবার ২য় বারের মতো ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হচ্ছে ২ হাজার ৮৯৮ কোটি টাকা। এর ফলে মূল ব্যয়ের তুলনায় খরচ বাড়ছে ৬০৬ শতাংশ। শুধু তাই নয়, প্রকল্পটি ৪ বছরে বাস্তবায়নের কথা থাকলেও এখন সময় লাগছে ১০ বছর। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ানোর কারণ হিসেবে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বলছে, প্রকল্পটিতে নতুনভাবে প্রায় ১৯টি অঙ্গ যুক্ত করা হয়েছে। এতে হাতিরঝিলের চেয়ে প্রকল্পটি দৃষ্টিনন্দন করা হবে। এ সংক্রান্ত একটি সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। প্রস্তাব পাওয়ার পর ১৫ মার্চ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ২৭ মার্চ প্রকাশিত ওই সভার কার্যবিবরণী সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। তবে শুধু সরকারি তহবিলের টাকার পরিমাণ না বাড়িয়ে রাজউকের তহবিল থেকে ব্যয় বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। জানতে চাইলে রাজউকের সদস্য (উন্নয়ন) আবদুর রহমান শনিবার যুগান্তরকে জানান, মূল প্রকল্পে মোট ব্যয়ের মধ্যে জমি অধিগ্রহণই ছিল প্রধান কাজ। কিন্তু সেক্ষেত্রে জটিলতা থাকায় খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি।
এখন সেই সমস্যার সমাধান হয়েছে। সম্পূর্ণ নতুনভাবে এবং নতুন নতুন কার্যক্রম যুক্ত করায় প্রকল্পটির ব্যয় অনেক বেশি বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, জুনের মধ্যে অনুমোদন করাতে পারলে ২০২০ সালের মধ্যেই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। তার দাবি-এটি হাতিরঝিলের চেয়েও দৃষ্টিনন্দন করা হবে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গুলশান-বনানী-বারিধারা লেকের পানি ধারণ ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করে জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানসহ সংশ্লিষ্ট এলাকার পরিবেশ উন্নয়ন, সৌন্দর্য বর্ধন ও নগরবাসীর বিনোদন সুবিধা সম্প্রসারণের জন্য প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়। ২০১০ সালের ৬ জুলাই ৪১০ কোটি টাকা ব্যয়ে মূল প্রকল্পটি অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। ২০১৪ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। পরে নানা কারণ দেখিয়ে ব্যয় ৬১১ কোটি ২৬ লাখ ৫৮ হাজার টাকা এবং মেয়াদ ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত বাড়িয়ে প্রথম সংশোধন করা হয় ২০১৫ সালে। এখন দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রকল্পটি সংশোধন করা হচ্ছে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, চূড়ান্ত নকশার ওপর ভিত্তি করে বিস্তারিত ব্যয় প্রাক্কলন, জমি অধিগ্রহণের পরিমান বৃদ্ধি, মাটি ভরাট, পানির গুণগতমান রক্ষায় নতুন অঙ্গ অন্তর্ভুক্তি, নতুন ব্রিজ, ওভারপাস, তীর রক্ষা কাজ, কড়াইল বস্তিবাসীদের জন্য একটি পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম যুক্ত হওয়ায় প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। অগ্রগতি কম হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে পিইসি সভায় অংশ নেয়া গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আফজাল হোসেন যুগান্তরকে জানান, প্রকল্পটির দায়িত্বে না থাকলেও ওই দিন আমাকে বৈঠকে পাঠানো হয়েছিল। তাই প্রকল্প সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলতে পারছি না। বৈঠকে অংশ নেয়া বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) পরিচালক কাজী দেলোয়ার হোসেন বলেন, জমি অধিগ্রহণ সমস্যায় এত দিন প্রকল্পটির বাস্তবায়ন হয়নি বললেই চলে। প্রাথমিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হলেও শতাংশের দিক থেকে অগ্রগতি বলার মতো কিছু হয়নি। সূত্র জানায়, এ প্রকল্পে প্রস্তাবিত ১৯টি নতুন অঙ্গ সংযোজন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- প্রশিক্ষণ, লেকের পানি ক্লিনিং, প্রাইভেট সিকিউরিটি সার্ভিস, গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ, মেইনটেন্যান্স ও রেনোভেশন,
স্লাজ রিমুভাল, প্রটেকটিভ ওয়ার্ক, রিটেইনিং ওয়াল, ৮টি ব্রিজ, ৪টি ওভারপাস, আরসিসি পাইপ স্থাপন, সোলার একুয়াটিক ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন, বিনোদন, পাবলিক ফ্যাসিলিটিজ ইত্যাদি। কিন্তু সমীক্ষা ছাড়াই এসব কাজের প্রস্তাব করা ঠিক হয়নি বলে মত দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। এছাড়া বিদ্যমান স্টাবল অ্যাপ্রোচ রোড কেটে বা খনন করে ১০০ ফুট দীর্ঘ ব্রিজ নির্মাণের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এক্ষেত্রে নতুন অঙ্গগুলোর বিষয়ে বুয়েটের মাধ্যমে একটি স্টাডি প্রতিবেদন ও বিস্তারিত ডিজাইন প্রণয়ন করে তার আলোকে ব্যয় প্রাক্কলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পিইসি সভায় রাজউকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পূর্বে এটি লেক ছিল না, আবাদি জমি ছিল। কিন্তু পার্শ^বর্তী এলাকা উন্নয়নের জন্য এখান থেকে মাটি খননের ফলে লেক তৈরি হয়েছে। সময়ের পরিক্রমায় লেক সংলগ্ন এলাকায় ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি উন্নয়ন হয়েছে, আবাসন গড়ে উঠেছে এবং লেকের আকার কমে গেছে। পরে উচ্চ আদালত থেকে বিদ্যমান এলাকাটিকে লেক হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং এটি সংরক্ষণের নির্দেশ দেয়া হয়। পরিবেশ অধিদফতর থেকে লেকটিকে ক্রিটিক্যাল এলাকা ঘোষণা করে এটির মানোন্নয়নেরও নির্দেশ দেয়া হয়। এসব নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে লেকটি সংরক্ষণ ও উন্নয়নে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছিল।

No comments

Powered by Blogger.