আবার চেনাতে চান তাইজুল

তাইজুল
সাইকেলে দ্রুত প্যাডেল মেরে ব্যস্তসমস্ত হয়ে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ঢুকছেন তাইজুল। দৃশ্যটা বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছে অনেক দিন ধরেই। জাতীয় দলের আশপাশে থাকা ক্রিকেটাররাও যেখানে সাধারণত ব্যক্তিগত গাড়ি কিংবা মোটরসাইকেলে চলাফেরা করেন, সেখানে তাইজুলের সাইকেলপ্রেম একটু ব্যতিক্রমই। ব্যতিক্রম তিনি অনেক দিক থেকেই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার বলতেই যে ঝলমলে চেহারা চোখে ভেসে ওঠে, তাইজুল মোটেই সে রকম নন। নিতান্তই সাদাসিধে, কথাবার্তায়ও তারকাসুলভ কোনো ব্যাপারই নেই। তবে তাইজুল তারকা তো বটেই। টেস্ট-ওয়ানডে দুটিতেই তাঁর মতো স্বপ্নের সূচনা খুব কম ক্রিকেটারেরই হয়েছে। টেস্ট অভিষেকেই ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন। বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ডও এই বাঁহাতি স্পিনারের। ওয়ানডে অভিষেকেই যে হ্যাটট্রিক করা যায়, সেটিও তাইজুলই প্রথম দেখিয়েছেন সবাইকে। এত সব কীর্তি যে বোলারের, সেই তাইজুল অনেক দিন ধরেই আড়ালে। ওয়ানডেতে তাইজুলের স্বপ্নের অভিষেকের পর বাংলাদেশ যে ১৯টি ম্যাচ খেলেছে, তার মাত্র একটিতেই খেলার সুযোগ পেয়েছেন। ২০১৫ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেই ম্যাচে ভালো করতে পারেননি। ওয়ানডে-টি-টোয়েন্টিতে ব্রাত্য হয়ে তাইজুল যেন শুধুই ‘টেস্ট বোলার’! তাইজুল কাউকে দোষ দিতে চান না। কাল দুপুরে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় বরং আত্মসমালোচনাই করলেন, ‘যে সময় আরাফাত সানি ভাই চলে এসেছেন (বাংলাদেশ দলে), তখন হয়তো আমার ঘাটতি ছিল।’ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাসকিন-সানি ছিটকে পড়ার পরও তাঁকে নির্বাচকদের মনে পড়েনি। তখন অবশ্য বিসিএলে পাওয়া কাঁধের চোট নিয়েই কাতর তাইজুল।  সেই চোট কাটিয়ে উঠে এখন আবার নিজেকে চেনাতে প্রস্তুত। তবে লড়াইটা এখন অনেক কঠিন। যা শুধু অন্য স্পিনারদের সঙ্গে নয়। পেসারদের সঙ্গেও। গত এক-দেড় বছরে বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণে বড় ‘বাঁকবদল’ই হয়েছে। স্পিন-নির্ভরতা কমিয়ে পেস আক্রমণে বেশি জোর দিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। সাফল্যও এসেছে তাতে। স্পিনারদের জায়গা তাই কমেছে দলে। তার ওপর অলরাউন্ডার বলে সাকিবকে নিয়ে কোনো প্রশ্নই নেই। স্পেশালিস্ট স্পিনার হিসেবে দলে ঢোকার লড়াইটা এখন অনেক বেশি কঠিন। তাইজুল এই কঠিনকেই জয় করার প্রতিজ্ঞায় শাণিত, ‘এখন অনেক বেশি পেসার। এর মধ্যে যদি একজন স্পিনার নিতে হয়, তাকে অবশ্যই অসাধারণ হতে হবে। নইলে দলে সুযোগ পাওয়া যাবে না। যেহেতু এখন পেসাররা অনেক ভালো করছে, আর উইকেটও পেসবান্ধব। স্পিনার যদি সেই মানের হয়, তবেই উইকেট কাজে লাগাতে পারবে।’ ২২ এপ্রিল থেকে শুরু হতে যাওয়া ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও এই চ্যালেঞ্জ থাকতে পারে। চিরকালের ধীরগতির টার্নিং উইকেটের বদলে এবার নাকি স্পোর্টিং উইকেটই হবে। যা শুনে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের তাইজুল তো ঘাবড়াচ্ছেনই না, উল্টো এটিকে দেখছেন নিজেকে প্রমাণের সুযোগ হিসেবে, ‘যদি স্পোর্টিং উইকেট হয়, তবেই বোঝা যাবে কার কতটা কোয়ালিটি, কতটা মেধা।’ প্রিমিয়ার লিগে ব্যক্তিগত লক্ষ্যও জানিয়ে রাখলেন তিনি, ‘চেষ্টা করব লিগে যেন সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হতে পারি।’ তা হতে পারলে হয়তো ‘টেস্ট বোলার’ তাইজুলকে ওয়ানডেতেও ফেরাতে হবে নির্বাচকদের। যে ওয়ানডেতে অভিষেকেই তাঁর ইতিহাস!
তাইজুলের যত কীর্তি
টেস্টে বাংলাদেশের পক্ষে সেরা বোলিং (৮/৩৯, বিপক্ষ জিম্বাবুয়ে, ২০১৪)।
ওয়ানডে অভিষেকে প্রথম বোলার হিসেবে হ্যাটট্রিক।
বাংলাদেশের ষষ্ঠ বোলার হিসেবে টেস্ট অভিষেকেই ইনিংসে ৫ উইকেট।
অভিষেকের পর বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে সবচেয়ে বেশি উইকেট (৯ টেস্টে ৩৬) তাইজুলের। এ সময়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৫ উইকেট সাকিব আল হাসানের।

No comments

Powered by Blogger.