মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের লড়াই নিয়ে নানা জল্পনা by ইব্রাহীম চৌধুরী

ডেমোক্রেটিক দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিলারি ক্লিনটন ও
বার্নি স্যান্ডার্স এবং রিপাবলিকান দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী
ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কো রুবিও ও টেড ক্রুজ।
যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে দেশটির রাজনীতির মাঠ এখন রীতিমতো গরম। ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান দল থেকে কোন দুই প্রার্থী মনোনয়ন পাবেন, তা নিয়ে দেশটির রাজনৈতিক মহলে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ ও জল্পনা-কল্পনা।
রিপাবলিকান দলের আলোচিত মনোনয়নপ্রত্যাশী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ডেমোক্রেটিক দলের বার্নি স্যান্ডার্সকে ঘিরে চলছে যত আলোচনা।
রিপাবলিকান দলের মূলধারার নেতৃত্বের মনোবাসনার বাইরের প্রার্থী হিসেবে উঠে আসছেন ট্রাম্প।
অন্যদিকে ডেমোক্রেটিক দলের মূল নেতৃত্ব না চাইলেও স্যান্ডার্সকে নিয়ে দলের তরুণদের মধ্যে একধরনের জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে।
আমেরিকার রক্ষণশীলদের প্ল্যাটফর্ম রিপাবলিকান দলের মূল স্রোতোধারার বাইরের লোক ট্রাম্প। তিনি টানা তিনটি অঙ্গরাজ্যের বাছাইপর্বে জয়ী হয়ে রীতিমতো অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছেন। প্রাতিষ্ঠানিক রিপাবলিকানদের প্রার্থী জেব বুশ ও ক্রিস ক্রিস্টির প্রস্থান আগেই ঘটেছে। বাছাইপর্বে এখনো ঝুলে আছেন প্রাতিষ্ঠানিক রিপাবলিকানদের প্রতিনিধি মার্কো রুবিও ও টেড ক্রুজ। ট্রাম্পের জাগরণের কাছে তাঁদের টিকে থাকা নিয়ে খোদ রিপাবলিকান দলের মধ্যেই সংশয় আছে।
পরিস্থিতি এমন হয়ে উঠেছে যে, ট্রাম্পকে রিপাবলিকান দলের চূড়ান্ত প্রার্থী ধরে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। অথচ কিছুদিন আগেও অনেকেই মনে করতেন, বেপরোয়া কথা বলে মাঠ গরম করা ধনকুবের ট্রাম্পের সম্ভাবনা ক্ষীণ।
রিপাবলিকান দলের মূল রাজনৈতিক ইস্যুর বাইরে নানা সব কথা বলে মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন ট্রাম্প। অভিবাসীবিরোধী বক্তব্য দিয়েও ট্রাম্প অভিবাসীবহুল নেভাদায় জয়ী হয়েছেন। মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল দেওয়ার কথা বলার পরও এই অঙ্গরাজ্যে হিস্পানিক ভোট পেয়েছেন তিনি।
ট্রাম্প বিতর্কের মঞ্চে দাঁড়িয়ে ধারাবাহিকভাবে এমন সব কথা বলছেন, যা রাজনৈতিকভাবে বলা ঠিক নয়। তিনি তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীদের মিথ্যাবাদী, নির্লজ্জ থেকে শুরু করে নানা গাল দিচ্ছেন। অপমানজনক উক্তি করছেন। সংবাদমাধ্যমকে আক্রমণ করছেন। রিপাবলিকান দলের তহবিল জোগানদাতাদেরও কষে সমালোচনা করছেন তিনি। এত কিছুর পরও ট্রাম্পের সমর্থনে কোনো ভাটা পড়ছে না।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জটিল রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় এখন পর্যন্ত বেশিসংখ্যক ডেলিগেট ট্রাম্পের সংগ্রহে। আগামী ১ মার্চ অনেকগুলো অঙ্গরাজ্যে বাছাইপর্ব অনুষ্ঠিত হবে। ওই সব অঙ্গরাজ্যের অধিকাংশতে ট্রাম্প জনমতে হয় এগিয়ে আছেন, নয়তো কাছাকাছি অবস্থান করছেন। দলের ট্রাম্পবিরোধী ভোট ভাগ হয়ে যাচ্ছে ক্রুজ ও রুবিওর মধ্যে। এই দুজনের মধ্যে কেউই এখনই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন না। ফলে বাছাইপর্বে ট্রাম্পকে ঠেকানো যাবে—এমন ধারণা ক্রমশ দুর্বল হয়ে উঠছে।
বাছাইপর্বে ট্রাম্পের উত্থান নিয়ে রিপাবলিকান নেতৃত্ব উৎকণ্ঠিত। মূল রিপাবলিকান ঘরানার মতে, যে নীতি-আদর্শের জন্য দলের ক্রমাগত লড়াই, ট্রাম্প সেসবের ধারেকাছেও নেই। তাই ট্রাম্পকে নিয়ে যত ভয়। তবে রিপাবলিকান দলের জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাছাইপর্বে মনোনীত প্রার্থীর পাশে থাকবে তারা।
ডেমোক্রেটিক দলের মধ্যেও নানা গুঞ্জন রয়েছে। পুঁজিবাদের তীর্থস্থানে দাঁড়িয়ে দলের প্রবীণ সিনেটর স্যান্ডার্স নিজেকে সামাজিক সমাজতন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা দিয়ে প্রচার শুরু করেন। শুরুতে ধরে নেওয়া হয়েছিল, হিলারিই ডেমোক্রেটিক দলের অবধারিত প্রার্থী। কিন্তু বিষয়টি এখন আর সেই পর্যায়ে নেই।
ডেলিগেট সংগ্রহে এখন পর্যন্ত হিলারি এগিয়ে আছেন। তবে ১ মার্চ অনেকগুলো অঙ্গরাজ্যে অনুষ্ঠেয় বাছাইপর্বে বিস্তর ব্যবধান সৃষ্টি করা না পর্যন্ত হিলারির সমর্থকদের উৎকণ্ঠার অবসান ঘটছে না।
যুব ও তরুণ ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে স্যান্ডার্সকে নিয়ে যে জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে, তা হিলারিকে নিয়ে নেই। হিলারিকে সবাই ওয়াশিংটনের চেনা মুখ হিসেবে জানে। দলের নেতারাও বাছাইপর্বে মনেপ্রাণে হিলারির পক্ষে। তবে তাঁকে নিয়ে সন্দেহ, সংশয়ের শেষ নেই। ওবামা প্রশাসনে দায়িত্ব পালন করায় অনেক ব্যর্থতার দায় তাঁকেও নিতে হচ্ছে। ই-মেইল কেলেঙ্কারিসহ নানা প্রশ্ন হিলারিকে তাড়া করছে।
ডেমোক্রেটিক দল থেকে হিলারি এবং রিপাবলিকান দল থেকে ট্রাম্প যদি মনোনয়ন পান, সে ক্ষেত্রে তাঁদের মধ্যকার লড়াই কেমন হবে—তা নিয়ে আগাম আলোচনা হচ্ছে। ট্রাম্পকে হিলারি কতটা মোকাবিলা করতে পারবেন, সেই প্রশ্ন সাধারণ মানুষের মধ্যেও ঘুরপাক খাচ্ছে।
ইতিমধ্যে স্যান্ডার্স বলে দিয়েছেন, হিলারিকে দিয়ে ট্রাম্পকে মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। তাই ট্রাম্পকে মোকাবিলা করার জন্য নিজের প্রচারণা তহবিলে অনুদান চেয়ে সমর্থকদের বার্তা পাঠিয়েছেন তিনি।
হিলারি-ট্রাম্প কিংবা ট্রাম্প-স্যান্ডার্সের মধ্যকার সম্ভাব্য লড়াই নিয়ে আমেরিকার রাজনৈতিক মহলে নানা জল্পনা-কল্পনা হচ্ছে। তবে চূড়ান্ত লড়াই কোন দুজন প্রার্থীর মধ্যে হবে, তা জানতে আরও কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.