‘বন্দুকযুদ্ধে’ নতুন মাত্রা, গুরুত্বপূর্ণ মামলার প্রধান আসামিরাই মারা যাচ্ছেন!

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সম্পূর্ণরূপে বিলোপ হওয়ার পক্ষে মানবাধিকারকর্মীরা যখন সোচ্চার রয়েছেন, তখন সেখানে আরেকটি উদ্বেগজনক নতুন প্রবণতা চোখে পড়ছে। হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার সুন্দ্রাটিকি গ্রামের চার শিশু হত্যা মামলার অন্যতম মুখ্য সন্দেহভাজন ঘাতক বাচ্চু বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। এর আগে কেরানীগঞ্জে শিশুহত্যার সন্দেহভাজন আসামি একইভাবে নিহত হন। সাম্প্রতিক কালে এ রকম আরও ফৌজদারি মামলার শীর্ষস্থানীয় সন্দেহভাজন আসামিরা তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধে বা অন্যবিধ উপায়ে মারা পড়ছেন।
অনেক সময় যেখানে রাজনৈতিক কার্যকারণ জড়িত থাকে, সেখানে মানুষ ওপর মহলের চাপের মতো একটি বিষয়কে কল্পনা করতে পারে। আগে বন্দুকযুদ্ধে ‘দুর্ধর্ষ’ ব্যক্তিটি প্রাণ হারানোর পরেই তার অতীত সম্পর্কে গণমাধ্যমের কাছে দ্রুত একটি বিবরণ পৌঁছে যেত। সেই ভাষ্য পড়ে কেউ কেউ ভুল করে হলেও যুক্তি খাড়া করতেন যে ‘বন্দুকযুদ্ধ’টি সমাজকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। কারণ, দেখা যেত নিহত লোকটি বহু খুনের মামলার আসামি, পুলিশ তাঁকে ধরে, কিন্তু পরে জামিনে ছাড়া পান এবং পুনরায় অপরাধ করেন, এভাবে তিনি প্রচলিত বিচারব্যবস্থা থেকে নিজেকে আড়াল করে চলছিলেন। আমরা স্মরণ করতে পারি, ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধ বা এনকাউন্টারকে প্রধানত এ রকম বিবরণ পাঠ করিয়েই একটা গ্রহণযোগ্যতা দেওয়ার চেষ্টা চলেছিল।
‘বন্দুকযুদ্ধে’ সন্দেহভাজন নিহত, বিচার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা
কিন্তু সেই অবস্থা থেকেও আজকের পরিস্থিতি আশঙ্কাজনকভাবে অনেক দূরে সরে গেছে। বাহুবলের চার হত্যাকাণ্ডের মূলে যে বিরোধ, সেখানে প্রভাবশালী ব্যক্তিটি হলেন পঞ্চায়েতপ্রধান। কিন্তু তিনি অরক্ষিত থাকলেন আর কথিতমতে তাঁর পক্ষে খুনের ঘটনা ঘটাতে গিয়ে মারা পড়লেন গরিব সিএনজি অটোরিকশাচালক বাচ্চু। এখন আইনজীবীরা ভয় পাচ্ছেন যে এতে বিচার ক্ষতিগ্রস্ত হবে কি না, যদিও আরেক দল আইনজীবী বলছেন, তেমনটা হবে না। তাঁদের কথাই সত্য হোক।
আমরা এই রহস্যজনক বন্দুকযুদ্ধের সত্যতার বিষয়ে এলাকাবাসীর মতোই সন্দেহ প্রকাশ করি, তাই র্যা ব কর্তৃপক্ষের উচিত হবে এ বিষয়ে একটি তদন্ত করা এবং তার ফলাফল অবিলম্বে গণমাধ্যমে প্রকাশ করা।

No comments

Powered by Blogger.